নিজের পাঞ্জাবী খুলে নুসরাতের গায়ের আগুন নিভিয়েছিলেন আবু বক্কর

সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় পরীক্ষাকেন্দ্রের দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। এখন তিনি লাইফসাপোর্টে। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন অসহায় নুসরাত জাহান রাফি।

এদিকে নুসরাতকে আগুনে পুড়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন আলিম পরীক্ষার্থী সহপাঠি আবু বক্কর ছিদ্দিক। গণমাধ্যমকে তিনি জানালেন সেদিনের ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে। নিজের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে অগ্নিদগ্ধ রাফির আগুন নিভিয়ে ছিলেন তিনি।

এদিকে আমিরাবদ ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসা থেকে আলীম পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন আবু বক্কর ছিদ্দিক। গতকাল ৮ এপ্রিল সোমবার পরীক্ষা শেষে সাংবাদিকদের আবেগতাড়িত কন্ঠে জানালেন সেই দৃশ্যপট। দাবী করলেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের।

এ ব্যাপারে আবু বক্কর ছিদ্দিক জানায়, গত শনিবার হলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় একজন ছাত্রীর গগণবিদারী চিৎকার শুনে হল থেকে বের হয়ে ছুটে আসেন। তার সাথে সাথে এগিয়ে গিয়েছিলেন কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল রাসেল ও নাইট গার্ড মো. মোস্তফা।

এ সময় তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে ভয়াবহ আগুন গ্রাস করে নিচ্ছে নুসরাতকে। এ দৃশ্য দেখে তারা একটি পাপোশ ও পাটের চট দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এ সময় আগুনে জ্বলে নুসরাতের শরীরের মাংস ঝরে পড়ছে।

এর মাঝে আরো কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীও ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। তারা এসে নুসরাতের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে বদনা ভরে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

এ সময় ছাত্রীর গায়ে আর কোন বস্ত্র ছিলনা। তখন নুসরাতের শরীর থেকে ঝরে পড়া মাংসের দৃশ্য দেখে তাৎক্ষণিক নিজের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে ছাত্রীর গায়ে মুড়িয়ে দেয় আবু বক্কর। পরবর্তীতে হোস্টেল থেকে আবাসিক ছাত্রদের লুঙ্গি এনে ছাত্রীর গায়ে মোড়ানো হয়। চট ও লুঙ্গি মুড়িয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আবু বক্কর।

এ সময় আবু বক্কর বলেন, ‘যে দৃশ্য দেখলাম, এই দৃশ্য পৃথিবীর কোন মানুষের জীবনে আর না আসে। আজকে নুসরাতের জায়গায় আমার মা অথবা বোন হলে কি করতাম? আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। রহস্য উন্মোচিত হোক। অপরাধী যেই হোক তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।’