প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তি যা বলছেন আইনজীবীরা

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে ৫ বছর সাজা দিয়েছিলেন। তবে হাইকোর্টে এসে সাজা বেড়ে হয়েছে ১০ বছর। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলায় আপিলের সঙ্গে জামিন আবেদনও করেছেন। চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালত ৭ বছরের সাজা দিয়েছেন খালেদা জিয়াকে। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জামিন চাওয়া হয়েছে এ মামলায়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে মামলা রয়েছে ৩৬টি। দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দী রয়েছেন খালেদা জিয়া।

বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থ। তাই তার প্যারেলো মুক্তির বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। রাজনৈতিক পরিমন্ডলে আলোচনায় বিষয়টি গুরুত্বও পাচ্ছে।

শোনা যাচ্ছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তির ব্যবস্থা করে সাবেক খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হতে পারে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে চলছে নানা তৎপরতা। পর্দার আড়ালে চলছে সরকার ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা। খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলেই বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত হবে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের কেউ নাম প্রকাশ করে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। মুক্তি পেলে সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নিতে পারেন খালেদা জিয়া। এর আগেও কয়েক দফা দেশ দুটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।

এর আগে ১/১১ সরকারের সময়ে তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। আর তখন তিনি একবার প্যারোলে মুক্তি নিয়েছিলেন একবার। মা তৈয়বা মজুমদার মারা গেলে তাকে দেখতে প্যারোলে মুক্তি নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।

আর এমতাবস্থায় তিনি প্যারোলে মুক্ত হতে পারবেন কিনা, সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ বিষয়ে আইন কি বলে?

বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

এ বিষয়ে অসুস্থ হওয়ার আগে গত বছর ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিএনপি চাইলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যখন প্রয়োজন হবে, তখন দেখব। এখন আদালত থেকে যে সিদ্ধান্ত রয়েছে সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে সরকার বিবেচনা করবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে এখনও কিছু হয়নি।

অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের মূল দাবি হচ্ছে চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসা। তার চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এজন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা তাই চাচ্ছি। তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানিয়েছে। তার জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে, দেখি তারা কি বলে।

তিনি আরও বলেন, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া নির্ভর করে রোগীর ওপর। অর্থাৎ আমাদের চেয়ারপারসনের ওপর। তিনি প্যারোল চাইবেন কি চাইবেন না- সেটা একান্ত তার নিজস্ব ব্যাপার। আমরা আগ বাড়িয়ে এটা বলতে পারি না। তবে চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব। আশা করি সরকারও সেই উদ্যোগ নেবে।

প্যারোলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, কয়েদি ও হাজতিকে সরকার প্যারোলে মুক্তি দিতে পারে। সেটা হতে পারে চিকিৎসার জন্য বা জানাজায় অংশ নিতে। সাজাপ্রাপ্ত হলে প্যারোল হবে না- এ বক্তব্য সঠিক নয়। কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্ত হবেন কিনা সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক গণমাধ্যমকে বলেন, জেল কোড অনুযায়ী কোনো আসামিকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার বিধান নেই। প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। সরকার ইচ্ছা করলে কাউকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্যারোলে মুক্তি দিতে পারে। এর আগে সেনাসমর্থিত সরকারের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। বর্তমান সরকার চাইলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, পুরো বিষয়টি নির্ভর করে দু’পক্ষের সমঝোতার ওপর। বিএনপি খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিশ্চিত করতে চাইলে তাদেরও কিছু ছাড় দিতে হবে।

এদিকে গত ১৫ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই কারাগারে দেখা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তারা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনা করেন। এ আলোচনার বড় একটা অংশ তার চিকিৎসা ও মুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে ছিল বলে সূত্র জানায়।

বিষয়টি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, চেয়ারপারসনের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কারণ খালেদা জিয়া তার জীবনে প্রথমবারের মতো তার কষ্টের কথা স্বীকার করেছেন। যা মিডিয়ায় এসেছে। তিনি স্বভাবগতভাবেই অত্যন্ত কষ্টসহিঞ্চু। তিনি যখন তার শারীরিক কষ্টের কথা স্বীকার করেছেন তখন তিনি যে প্রচণ্ড অসুস্থ তা আমরা ধারণা করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানবতা। সরকার যেন মানবাধিকার ও একজন সিনিয়র সিটিজেনের অধিকারগুলোর প্রতি সম্মান দেখায়।