নোমান মাহমুদ, সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ একসময়ের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী, অস্ত্র, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামী এখন ঢাকা জেলা উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা! এমনটাই দাবী করছেন সংগঠনটির একই কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব সরকার প্রেমা।
বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে বারবার আলোচনায় আসা ঢাকা জেলা উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সাবুর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগ এনে একই কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব সরকার প্রেমা জানান, একসময় গণপরিবহনে চালকের সহকারী হিসাবে কাজ করা শফিকুল ইসলাম সাবু ৯০ এর দশকে বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার হয় মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানা পুলিশের হাতে। সেই মামলায় কিছুদিন সাজা ভোগ করে এলাকায় ফিরে এসে গড়ে তোলে বিশাল ফেনসিডিলের রাজত্ব।
পরবর্তীতে ৬০০ বোতল ফেনসিডিল, অস্ত্র ও আয়নাল নামে এক সহযোগীসহ সাভারের ফুলবাড়িয়া রাজাঘাট এলাকা থেকে আবারও র্যাবের হাতে আটক হয় শফিকুল ইসলাম সাবু। ফেনসিডিল ও অস্ত্রসহ আটক হওয়ার ঐ ঘটনায় র্যাবের দায়েরকৃত মামলায় আদালত তাকে ১০ বছরের সাজা প্রদান করার পর ফের উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসে এই অপরাধী।
এদিকে আইনের ফাক গলে বারবার বেড়িয়ে আসা এই অপরাধী একসময় নিজ এলাকা সাভারের ফুলবাড়িয়া রাজাঘাট এলাকায় গড়ে তোলে নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকার বিভিন্ন সংখ্যালঘু ও অসহায় মানুষের জমি দখল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের উপর হামলা-ধামলা সহ নানান অপকর্মে জড়িয়ে নেয় নিজেকে। অল্প দিনেই বনে যায় বিপুল সম্পত্তির মালিক।
অপরদিকে বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে বারবার আলোচনায় আসার পর শফিকুল ইসলাম সাবু আশ্রয় নেয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায়। নিজের যাবতীয় অপকর্ম গোপন করে বাগিয়ে নেয় বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা জেলা উত্তর কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ।
তবে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা জেলা উত্তর কমিটিতে স্থান করে নেওয়ার পরেও থেমে থাকেনি শফিকুল ইসলাম সাবুর বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল থেকে শুরু করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ের দেব-দেবীর মুর্তি ভাংচুর, বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টাসহ নানান কারনে বারবার আলোচনায় এসেছে সে। সর্বশেষ গত ০২ এপ্রিল সাভারের ফুলবাড়িয়া রাজাঘাট এলাকায় এক নারীকে শ্লীলতাহানি ও এক যুবককে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা (মামলা নং-০৭) দায়ের করে মোঃ কদম আলী নামে এক ব্যাক্তি।
এছাড়াও বিভিন্ন সুত্রে শফিকুল ইসলাম সাবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সাভার মডেল থানায় দায়ের হওয়া ৩টি মামলার তথ্য বিডি২৪রিপোর্ট এর হাতে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিগত ২০০৯ সালের জুলাই মাসে দায়ের হওয়া দুটি মামলা (মামলা নং- ১৬ ও ২৯), ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দায়ের হওয়া একটি মামলা ( মামলা নং- ৩৪)।
এদিকে শফিকুল ইসলাম সাবু’’র মত অপরাধীর কারনে দলীয় সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে দাবি করে ঢাকা জেলা উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব সরকার প্রেমা বলেন, “শফিকুল ইসলাম সাবু একজন চিহ্নিত অপরাধী। তার অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। এছাড়াও একজন চিহ্নিত অপরাধীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে স্থান দেওয়ায় দলের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।”
তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম সাবু দাবি করেন তার সুনাম ক্ষুন্ন করতে একটি কুচক্রী মহল তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন, “যারা অভিযোগ করেছে তারাই সেই বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। আমি এসব কিছু জানিনা।” এসময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দায়েরকৃত মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।
অন্যদিকে শফিকুল ইসলাম সাবু’র বিরুদ্ধে এসকল অভিযোগের বিষয়ে জানা নেই দাবি করে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলীম বিডি২৪রিপোর্ট’কে বলেন, “এই বিষয়গুলো আমাদের জানা নেই। যদি তিনি (শফিকুল ইসলাম সাবু) কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকেন, তবে সেবিষয়ে খোজখবর নিয়ে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কারোও জন্য সংগঠনের সুনাম ক্ষুন্ন হলে তাকে কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবেনা।”