৩টি সহজ কৌশলে সুস্থ থাকবে আপনার লিভার

মানুষের শরীরের অন্যতম একটি অঙ্গ যকৃৎ বা লিভার। সাধারণত আমাদের শরীরে যত ক্ষতিকারক টক্সিন জমে, তা ছেঁকে শরীর থেকে বের করে দেয়। আর এই লিভার যদি স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায় তাহলে শরীরে জমে যাওয়া টক্সিন শরীরেই থেকে যাবে।

১৯ এপ্রিল সারা পৃথিবীতেই বিশ্ব যকৃত দিবস (World Liver Day) হিসাবে পালন করা হয়। এই দিনে লিভার (Liver) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং লিভারের স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে এমন একটি জীবনধারা অনুসরণ করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়। কেননা শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একে একে বিকল হতে শুরু করবে। তাই লিভার সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরী।

আসুন জেনে নেওয়া যাক অব্যর্থ কয়েকটি ঘরোয়া টোটকা যা যকৃৎ বা লিভার সুস্থ রাখতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাহলো-

খালি পেটে কাঁচা রসুন: রসুনে রয়েছে সালফারের উপাদান যা লিভারের এনজাইমের কার্যকারীতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন ও সেলেনিয়াম যা লিভার পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি তার সুস্থতা নিশ্চিত করে। তাই প্রতিদিন অন্তত এক কোয়া রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেতে পারলেও ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

পানি পান : যকৃৎ বা লিভার সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। দিনে অন্তত ৭-৮ গ্লাস (২.৫ লিটার থেকে ৩ লিটার) পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশই হল পানি। এই পানি শরীরের টক্সিন লিভারের মাধ্যমে ছেঁকে বের করতে সাহায্য করে। শরীরে যখনই পানির অভাব হবে, তখনই লিভারে ও শরীরে টক্সিন জমতে থাকে যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরও মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই লিভার সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত: অন্যান্য খাবারের তুলনায় উষ্ণ পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারলে তা যকৃৎ বা লিভারে অনেক বেশি উৎসেচক (এনজাইম) উৎপাদনে সহায়তা করে। এ ছাড়াও ভিটামিন সি ‘গ্লুটেথিয়ন’ নামের যে এনজাইম উৎপন্ন করে, তা লিভারের ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে লিভার সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই অন্যান্য পানীয়র চেয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস উষ্ণ পানির সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারলে লিভার সুস্থ থাকবে, একই সঙ্গে বাড়বে তার কর্মক্ষমতাও।

এছাড়া আপনার যকৃতের যত্ন নেওয়ার আরও সহজ কিছু টিপস হল:

কফি খান: কফি লিভারের রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। এর পিছনের কারণ এখনও যদিও অস্পষ্টই। সুস্থ লিভারের জন্য কফি খান, তবে ক্যাফিনের কু প্রভাবগুলি প্রতিরোধ করতে অতিরিক্ত কফি একেবারেই না।

অ্যালকোহল এড়ান: অ্যালকোহল আপনার যকৃতের কতখানি ক্ষতি করতে পারে তা আপনার ধারণাতীত। যদি আপনি নিয়মিত মদ্যপান করেন তবে আপনার ফ্যাটি লিভার রোগ এবং লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি রয়েছে। অ্যালকোহল লিভারের কোষগুলির ক্ষতি করে যাতে লিভারে ঘা বা জ্বালা হয় এবং অবশেষে যকৃতের সিরোসিস রোগ হয়। আপনার শরীরের জন্য অ্যালকোহল কতটা পরিমাণ নিরাপদ তা জানুন।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন: সুস্থ খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা সুস্থ যকৃতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও স্বাস্থ্যকর লিভার বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধ করারও একটি কার্যকরি উপায়।

বিষাক্ত বস্তু বা টক্সিন এড়িয়ে চলুন: ক্ষতিকারক বা বিষাক্ত যে কোনও টক্সিনের সংস্পর্শে শ্বাস নেবেন না। Aerosols বা কীটনাশকের মতো কিছু রাসায়নিক পণ্য রয়েছে যা আপনার লিভারের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও, লিভারের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে ধূমপান এড়ান।

কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ এড়িয়ে চলুন: কিছু ওষুধ রয়েছে যা আপনার যকৃতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। পেনকিলার আপনার যকৃতের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকারক এবং শুধুমাত্র চরম পরিস্থিতিতেই পেনকিলারের শরণাপন্ন হন। কিছু ওষুধ আপনার লিভারের ক্ষতি করতে পারে যদি সেগুলি খাওয়ার করার আগে বা পরে আপনি অ্যালকোহল পান করেন। কিছু ওষুধ আবার অন্য ওষুধের সাথে মিশে গেলে যকৃতের ক্ষতি করে। ডাক্তারের নির্ধারিত ওষুধ, তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করেই খাবেন।