চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আতঙ্ক কেটে গেছে: আবহাওয়া অফিস

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে এসেছে। এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চল এবং এদের পাশ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি। এটি বাংলাদেশে ৬ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারে। এর পর এটি আবারও ভারতে প্রবেশ করবে। বাংলাদেশে অবস্থানের সময় এটির গতিবেগ থাকবে ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার।

শনিবার (৪ মে) সকালে আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝড় ও বজ্রপাতে দুই দিনে সারা দেশে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৩ মে) দুপুর ১২টা থেকে শনিবার (৪ মে) সকাল ৯টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ, বাগেরহাট, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরগুনা, নোয়াখালী ও ভোলায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

সারাদেশে বজ্রপাত ও ঝড়ের তাণ্ডবে ঘর চাপা পড়ে নিহত ১৫ জনের মধ্যে নোয়াখালীতে ঘর চাপা পড়ে ১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০। নোয়াখালী সদরে আরো ১ জন নিহত হয়েছেন। বরগুনার পাথরঘাটায় খলিফার হাটে ঘর চাপা পরে ২ জন নিহত। বাগেরহাটের থানপুরে গাছের ডাল পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শনিবার (৪ মে) সকালে ভোলা থেকে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আর ঝড়ো হাওয়ার দরুণ বজ্রপাতে কিশোরগঞ্জে ৬, নেত্রকোণায় ২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

স্বানীয় পুলিশ জানায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার (৩ মে) দুপুর থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ তুমুল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ সময় মাঠে কাজ করতে গিয়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, ইটনা ও মিঠামইনে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়। একই সময়ে মাঠে গরু আনতে গিয়ে আরো এক শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়া সন্ধ্যায় বজ্রপাতে মারা যান আরো দু’জন।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ভারতের ওডিশা রাজ্যে আঘাত হানায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গেছে। তবে বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা করছে প্রশাসন। যে কারণে সর্বাত্মক প্রস্তুতি হিসেবে সমন্বিতভাবে কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনও।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আগে থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাহাজের পণ্য ওঠানামা। লাইটারেজসহ ছোট নৌযানগুলো নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়েছে। বড় জাহাজগুলো অবস্থান নিয়েছে বন্দরের বহির্নোঙরে। আপাতত বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো। সেনাবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের ১০ হাজার ছাড়াও ৬ হাজার ৬৬০ স্বেচ্ছাসেবক, ২৮৪টি মেডিকেল টিম তাদের সঙ্গে কাজ করবে। প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসকদের টিম রাখা হয়েছে। খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল (নম্বর-৬৩০৭৩৯ ও ৬৩৩৪৬৯)। সেখানে ফোন করে সহায়তা নিতে পারবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।