ধর্মকে টেনে এনে মাশরাফিকে কটাক্ষ বিএসএমএমইউ চিকিৎসকের

নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা কিছুদিন পরেই স্বপ্নের বিশ্বকাপ খেলবেন। এদিকে বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছে টাইগাররা। তবে দেশ ছাড়ার আগে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার অর্জন করেছে এমপি মাশরাফি।

নিজ আসনের সদর আধুনিক হাসপাতালে গেয়ে রোগিদের কষ্টে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে ক্ষুব্ধ হন মাশরাফি। এরপর হাজিরা খাতা দেখে তিনি জানতে পারেন চিকিৎসকরা বিনা ছুটিতেই টানা কয়েক দিন কর্মস্থলে নেই। এরপর রোগি সেজে মাশরাফি নিজেই চিকিৎসকদের ফোন দেন।

এরপর কারণ জানতে চান মাশরাফি। তবে একসময় তিনি চিকিৎসককে বলেই বসেন, ‘আপনি কি আমার সঙ্গে ফাজলামো করছেন?’ অবশ্য এমন কথা বলার পর মাশরাফি ক্ষমাও চেয়েছেন। এদিকে এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের চিকিৎসক (এফসিপিএস, মেডিসিন ও এমডি, চেস্ট ডিজিস) আমিনুল ইসলাম মাশরাফির নামায পড়া থেকে শুরু করে পোশাক নিয়ে নানা কটাক্ষ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘কারো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। চেহারা ছুরতে বিশেষ মতবাদের ছাপ নিয়ে আসা কোন সেলেব্রেটি যখন তার এই নামাজ পড়াটাকে মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করতে থাকে সে আসলে তখন কোন বিশেষ গোষ্ঠীর ব্র‍্যান্ড এম্ব্যাসডর হিসাবে সুক্ষ্ম কৌশলে কাজ করে যায়। তাতেও সমস্যা নাই। কেউ ভাল ডাংগুলি খেলতে জানলেই তাকে ওহাবিজমকে না বলার মতো মননশীলতাও অর্জন করার যোগ্যতা থাকতে হবে তেমন কোন কথা নাই।

তবে একটা জায়গায় কথা আছে। যে মাশরাফি মিডিয়ায় সবাইকে জানিয়ে বেড়ায়, “বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব মুসলিম ক্রিকেটার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। আমরা প্রায় সবাই ওমরাহ সেরে ফেলেছি। বিদেশ সফরে আমরা জামাতে নামাজ পড়ি। সেখানে ইমামতি করেন মুশফিকুর রহিম না হলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ” তখন তার ঘিলুর ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত না হয়ে একদল প্রগতিমনা ব্যানার শেয়ার করে বেড়াচ্ছে মাশরাফির মাধ্যমে তারা ধর্মান্ধতামুক্ত বাংলাদেশ গড়বে। মাশরাফি তার মেয়েকে মাদ্রাসায় দিক বা আহলুল হুফফাজে তেলোয়াত করতে পাঠাক এটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। কিন্ত তার ইমাম মুশফিক রিয়াদেরা যখন নামাজের বাইরেও টেপ দিয়ে বাঘের ছবি তথা লোগোটা ঢেকে রাখে গুনাহ হবার ভয়ে তখন অধিনায়ক হিসাবে তা নিয়ে কিছু না বলাটা কোন ব্যাক্তিগত ব্যাপার নয়, সরাসরি ওসবকে সমর্থন করা। নানা অনুসঙ্গই বলে দেয় মাশরাফির মাইন্ডসেট সেই সাইদ আনোয়ার, সাকলায়েন মোস্তাক বা দেশী পাকি মুশফিকের চেয়ে উন্নত কিছু নয়। আর এরে নিয়া তোমরা গড়বা ধর্মান্ধতা মুক্ত বাংলাদেশ? ধর্মান্ধরে আইডল বানিয়ে ধর্মান্ধ মুক্ত বাংলাদেশ? ফাইজলামি পাইছো না?

জার্সির রং পাকিদের সাথে মিলে গেলে যাদের গা জ্বলে, ফ্যানাটিজমে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম যখন তাদেরকেও ছাড়িয়ে যায় এরাই আবার সেটার মৌন সমর্থক হয়ে থাকে। হিপোক্রেটের দল।

এদের নিয়ে একজন মন্তব্য করেছেন, “অনেকের মাশ্রাফী ফ্যানাটিসিজম মৌলবাদীদেরকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কারো কাছে পীর পুরোহিতদের নিয়ে কিছু বলা যায়না, আর আরেকদলের কাছে মাশরাফীরে নিয়েও কিছু বলা যায়না। ট্রল শুরু হয়ে যায়। একই ফ্যানাটিক জিন দুপক্ষের কোষে- শুধু প্রকাশটা ভিন্ন। একদল আশেকে মাশরাফি, অন্যরা আশেকে দেওয়ানবাগী। একই রোগ লক্ষন ভিন্ন। দুই গ্রুপই ছাগু।”

Ahsan Habib ভাইয়ের লেখাটা এখানে উল্লেখ করা প্রসঙ্গত। তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেছে- ‘আমি সব সময় ভাগ্যে বিশ্বাসী, পুরো দলের ভাগ্যে যেটা আছে সেটাই হবে । তবে কষ্ট করতে হবে’

এই হচ্ছে আমাদের সাহসী অধিনায়কের বিশ্বকাপ ভাবনা ! ‘ভাগ্যে যা আছে সেটাই হবে’, এর সংগে ‘তবে’ যুক্ত করে একটা দুর্বল লেজুড় লাগিয়েছে ‘কষ্ট করতে হবে’ ! ভাগ্যে যা আছে তাই ঘটবে তাহলে কষ্টের কি দরকার ? এই কথার একটাই মানে ‘ফলাফল যাই হোক মনে করতে হবে এটাই ভাগ্যে লেখা ছিল’ । এর চেয়ে দুর্বল মানসিকতার কি হতে পারে ?

এই বক্তব্য কোত্থেকে সে পেলো ? ধর্ম থেকে । ধর্মই ওকে শিখিয়েছে ‘ভাগ্য’ নামের এক অলীক বস্তুর কথা । মানুষ যতই চেষ্টা করুক ধর্ম বলছে ভাগ্যে না থাকলে হবে না । এই বস্তাপচা বাণীর আড়ালে সে নিজেদের সব দায় মুক্তি নিয়ে ফেলেছে, ফলাফল যাই হোক ।

তাই তো যখন দেখি মুশফিক তার বুক থেকে রয়াল বেঙ্গল টাইগারের ছবি ঢেকে দেয়, অধিনায়কের তা চোখে পড়ে না । কেউ উইকেট পেলে মাঠে সেজদা দিয়ে মাঠকে জায়নামাজ বানিয়ে ফেলে পাকিদের অনুকরণে ! সদ্য বানানো জার্সি থেকে ‘লাল’ রঙ মুছে ফেলা হয়েছে যে লাল বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার কথা বলে । এটাও আমাদের অধিনায়কের চোখে পড়ে না । অথচ সে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত বীর বলে ! এ কেমন আত্মপ্রবঞ্চনা ! ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে দলকে কেঁচো বানিয়ে ফেলা, লাল মুছে পাকিদের অনুকরণ করা, বুক থেকে রয়েল বেঙ্গল ঢেকে ফেলা, সেজদায় নত হওয়া !

এখন শুধু একটি প্রতীক যুক্ত করা বাকি- একটি চাঁদ তারা…’