ভোটের মাঠে পাগলু আর মহাগুরুর টক্কর

কয়েক বছর আগেও দুজন ছিলেন একই দলের দুই সংসদ সদস্য। লোকসভায় বয়সে ছিলেন তরুণ। প্রবীণ ছিলেন রাজ্যসভায়। প্রথমজন এখনও লোকসভার সংসদ সদস্য। দ্বিতীয়জন সংসদ সদস্যপদ ছেড়েছেন। ছেড়েছেন দলও। ভারতীয় বাংলা টেলিভিশনের রিয়্যালিটি শোয়ে দু-জনে বিচারকের আসনে থাকেন। একসঙ্গে শুট করেন। ঠাট্টাতামাশাও হয়। খানিক গল্পগুজবও।

কিন্তু জীবনের রিয়্যালিটি তার চেয়ে অনেক বেশি উঁচু নিচু। ধুলোবালিতে মাখা। স্টুডিওর মিঠে হাওয়া থেকে বেরিয়ে বাস্তবে ভোটের মাঠে তারা। দেব অধিকারী এখন ‘দিদির সৈনিক’। আর মিঠুন চক্রবর্তী মোদির তারকা সেনাপতি। মহাগুরু মিঠুনের শো শুরু হলো বাঁকুড়া থেকে।

‘পাগলু’ দেব অবশ্য আগেই নেমে পড়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। বৃহস্পতিবার তিনি গেলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে। এক অধিকারী গড়ে প্রচার করলেন অন্য অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে তার বিরুদ্ধে প্রচারে নামলেন দীপক অধিকারী।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) মোট চারটি রোড শো করছেন মিঠুন। শুরু সকাল ৯টা থেকে। প্রথমে বাঁকুড়া, তারপর পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম। চার জেলায় ঘুরছেন মিঠুন। সকালে বাঁকুড়ার ছাতনা এলাকার রোড-শো শুরু হতেই উপচে পড়ে ভিড়। পাকা দাড়ি, কালো চশমা, মাথায় কালো বান্দানা, পরণে সাদা কুর্তা, গলায় মালা আর গেরুয়া উত্তরীয়। খবর আনন্দবাজারের

মিঠুন বললেন, আমি গর্বিত যে আমি বাঙালি। আমি এসেছি পুরুলিয়ার গরির মানুষের কাছে। তাদের এটা বলতে যে, অধিকার আদায় করে নিতে হয়।

সম্প্রতি তিনি কলকাতার কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের ভোটার হয়েছেন। এতদিন পর বাংলার ভোটার হওয়া মিঠুনকেও বহিরাগত তকমা দিচ্ছে শাসক তৃণমূল। তাচ্ছিল্যভরে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ‘মহাগুরু’ বলেছেন, আমি যদি বাইরের লোক হই, তা হলে তো মাদার তেরেসা, ভগিনী নিবেদিতাও বাইরের লোক। বাঙালি ওদের মাথায় তুলে নাচে! কারণ, ওরা বাইরের লোক নন। সেটা প্রমাণিত হয়েছে ওদের কাজে। আসলে বাইরের লোক তারা, যারা বাংলায় থেকে বাংলার গরিব মানুষের কথা ভুলে গিয়েছেন। আমি বাইরের লোক না। নীতির লড়াই লড়ছি। তাই-ই লড়বো।

পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের টিকরাপাড়া হাইস্কুল মাঠে প্রচারে নেমেছিলেন দেব। দুপুরে ছিল রোড শো। এরপর বিকালের দিকে নন্দীগ্রামেও যাওয়ার কথা রয়েছে দেব-এর। মমতার কেন্দ্রে প্রচারে নামবেন তিনি। ক’দিন আগে গিয়েছিলেন পুরুলিয়াতে। বৃহস্পতিবার যেমন সেখানে মিঠুনকে দেখতে উপচে পড়েছে ভিড় (ভিড়ের চাপে একটা সময় হেলিকপ্টারেই মিনিট পনেরো আটক থাকতে হয়েছিল মিঠুনকে।

চারদিক থেকে দাবি উড়ে আসছি, ডায়ালগ বলুন। একটা ডায়ালগ! সেদিন দেবের জন্যও ঢল নেমেছিল মানুষের। চড়া রোদ মাথায় করেও স্বচক্ষে নায়ককে দেখার ভিড়। গত সোমবার রঘুনাথপুর সাব স্টেশন সংলগ্ন ময়দানের হেলিপ্যাডে নামেন দেব। তার আগে থেকেই সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। হেলিকপ্টার থেকে নেমে রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হাজারি বাউরিকে সঙ্গে নিয়ে হুডখোলা জিপে রঘুনাথপুর শহরে প্ৰায় দু-কিলোমিটার রোড শো করেন ঘাটালের সাংসদ দেব। তারপর যান রেলশহর আদ্রায়।

এই প্রথম বাংলার ভোটমঞ্চে দেব-মিঠুনের একইদিনে টক্কর। কারণ, মিঠুন বৃহস্পতিবারের আগে প্রচারে নামেননি। তবে টক্কর এই শুরু হলো। যত দিন যাবে, সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই তত বাড়বে। স্বাভাবিক। এটা তো আবার বাস্তবের রিয়্যালিটি শো!