খ্রিস্ট ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা লরেন বুথ পেশায় একজন মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক। প্রথম জীবনে তিনি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ছিলেন।

লরেন বুথ ১৯৬৭ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চল সফর করেন এবং ইসলাম ও মুসলমানের অনুরাগী হন। ফিলিস্তিনিদের অধিকার বিষয়ে বুথের দৃঢ় অবস্থানের কারণে ২০০৮ সালে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি ইসমাইল হানিয়া তাঁকে ফিলিস্তিনের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। ২০১০ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।

ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে লরেন বুথ বলেন, এক ফিলিস্তিনি পরিবার তাঁকে ইফতারের দাওয়াত দেয়। পরিবারটি খুবই দরিদ্র ও অসহায়। এমনকি তাদের কাছে ওই দিনের খাবারও ছিল না। কিন্তু ওই ঘরের নারীর অন্তরজুড়ে ছিল উচ্ছ্বাস, ভালোবাসা। ফিলিস্তিনি নারী আমাকে তাঁর ঘরে এমনভাবে সংবর্ধনা জানান যেন তিনি গাজা উপত্যাকার কোনো গলিতে নয়, বরং আমাকে তিনি তাজমহলে প্রবেশের সংবর্ধনা দিচ্ছেন। অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল মুখে তিনি আমাকে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। ’

আমার কথা শুনে ওই নারী কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। এরপর দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, বোন আমরা দরিদ্রদের কথা স্মরণ করতে রমজানের রোজা রাখি। তাঁর কথা আমার অন্তরের গভীরে টোকা দেয়। সবাই স্তব্ধ হয়ে যায় এবং চোখ অশ্রুসজল হয়। আমি ভাবতে থাকি যে ইসলাম অনেকের ভাবনাকে অনেক বড় করে তোলে। পরের বছর আমি সাংবাদিক হিসেবে ইরানে যাই। সেখানকার বিবি ফাতেমা মসজিদ নামের একটি মসজিদ পরিদর্শন করি। আগে থেকেই অজু করতে জানতাম। অজু করে একটি চাদর গায়ে দেই এবং মহান ‘আল্লাহ’র নাম উচ্চারণ করি। আল্লাহর প্রার্থনা করি। তবে তুমি ফিলিস্তিনের মানুষের কথা ভুলো না। ওই রাত আমি অনেকের সঙ্গে মসজিদে কাটিয়ে দিই। ফজর নামাজ পড়ে বের হয়ে নতুন সূর্য অবলোকন করি। তখন আমার মাথায় কেবল ইসলামের কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল।

লন্ডনে পৌঁছার সাত দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে আমি কলেমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করি। ওই সময় আমার আট বছর ও ১০ বছরের দুই মেয়ে ছিল। মুসলিম হওয়ার পর তারা আমাকে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, মুসলিম হওয়ার পরও আপনি কি মা হিসেবে থাকবেন? আমি বললাম, আমি আগের চেয়ে আরও উত্তম মা হব। তারা আনন্দিত হয়ে ফের জিজ্ঞেস করল, মা আপনি কি মদ পান করবেন? আমি বললাম, মুসলিম হয়ে কখনো আমি মদ পান করবো না। তাঁরা আনন্দিত হয়ে ফের প্রশ্ন করল, মুসলিম হয়ে আপনার বক্ষ কি উন্মুক্ত রাখবেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা এমন প্রশ্ন করলে কেন? তারা বলল, আপনার বক্ষ উন্মুক্ত রেখে আপনি যখন স্কুলে আসতেন, তখন আমরা খুবই লজ্জা বোধ করতাম। আমরা তা অপছন্দ করি এবং চাই আপনি আর এমন করবেন না। আমি বললাম, মুসলিম হওয়ার পর আমি পুরো দেহ ঢেকে রাখবো। এ কথা শুনে তারা বলল, আমরাও ইসলাম ভালোবাসি।

সূত্র: আইসিএনএও