ভয়াবহ পরিস্থিতি দিল্লি, শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে মরদেহের লাইন

চিকিৎসা পেতে প্রথমে হাসপাতালের বাইরে লাইন দিতে হয়েছিলো। মৃত্যুর সঙ্গে যখন পাঞ্জা লড়ছেন, তখন হাসপাতালের বাইরে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের স্বজনরা। মৃত্যুর পরেও সেই লাইন থেকে নিস্তার পেলেন না ভারতের দিল্লিতে করোনার কবলে প্রাণ হারানোরা। চিতায় ওঠার জন্যও মাচায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই শ্মশানে লাইন দিতে হলো তাদের। মহামারিতে বিধ্বস্ত রাজধানীতে এবার এমনই দৃশ্যই সামনে এ্রলো।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ৪০ ডিগ্রির উপরে হাঁসফাঁস করা গরমে দিল্লিতে কী দৃশ্য ধরা পড়লো? সুভাষনগর শ্মশানে টিনের চালের নীচে সারি সারি চিতা জ্বলছে। মিহি ছাই উড়ে এসে পড়ছে পাশের চাতালেও। আর খাঁ খাঁ রোদে তেতে ওঠা সেই চাতাল ধরেই এগিয়েছে মৃতদেহের সর্পিল রেখা। এক ঝলক তাকালেই মাচার সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা ১৫-২০টি দেহ চোখে পড়তে বাধ্য। পাশের উঁচু বাঁধানো জায়গায় ঘি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বসে রয়েছেন স্বজনরা।

কড়া স্বরে শ্মশানের এক কর্মী বললেন, অপনা অপনা ডেড বডি উঠাও অউর উধর লাইন মেঁ জা কে খড়ে হো জাও। তাতে প্লাস্টিকে মোড়া বাবার দেহের উপর চন্দনকাঠ সাজাতে গিয়ে থতমত খেয়ে গেলেন এক মহিলা। কোনটা নাভি আর কোনটা বুক, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তাকে ধমক লাগালেন অন্য এক শ্মশানকর্মী। তাতে ফুঁপিয়ে উঠলেন ওই মহিলা। কান্না চাপতে চাপতে বললেন, বাবার মুখটা পর্যন্ত দেখতে পাইনি।

সোমবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে সুভাষনগর শ্মশানে কোভিডে মারা যাওয়া বাবার দেহ নিয়ে গিয়েছিলেন বছর মনমীত সিংহ। সংবাদমাধ্যমে মনমীত সিংহ জানিয়েছেন, অ্যাম্বুল্যান্স, গাড়ির ভিড় কাটিয়ে শ্মশানে ঢুকতে যাবেন, তার আগেই রাস্তা আটকান এক কর্মী। জানিয়ে দেন, আর দেহ নেওয়া যাবে না। কারণ এতো দেহ লাইনে রয়েছে যে, সোমবার সব ক’টি দেহ দাহ করার জায়গা এবং কাঠ নেই। আর সিএনজি চুল্লিতে একসঙ্গে দু’টোর বেশি দেহ করা যায় না। তাতেও এক একটি দেহের পিছনে কমপক্ষে ৯০ মিনিট সময় লাগবে। ইতিমধ্যেই লাইনে ২৪টি দেহ রয়েছে। তাই অন্য কোথাও যেতে হবে তাকে।

বাধ্য হয়ে ছ’কিলোমিটার দূরে পশ্চিম বিহার এলাকার শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পৌরসভাকে ধরে সেখানেই শেষমেশ বাবার দেহ দাহ করেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনমীত বলেন, সরকার হাসপাতালে অক্সিজেন দিতে পারবে না। অন্তত শ্মশানে জায়গা তো দিক, যাতে পৃথিবী থেকে বিদায়টা অন্তত ঠিকঠাক হয়!