৩৫০ দরিদ্র শিক্ষার্থীকে লেখাপড়া করাচ্ছেন এক সেনা সদস্য

বাবার ধানের ব্যবসা ছিল, ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান যাওয়ায় পরিবারে অস্বচ্ছলতা দেখা দেয়। পরিবারের দিকে তাকিয়ে এসএসসির পর সংসারের হাল ধরতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করি।

স্বপ্ন ছিল নিজে পড়াশোনা করে অনেক দূর এগিয়ে যাবো। কিন্তু পারিনি, আমার মতো কেউ যেন পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে পড়াশোনা থেকে ঝরে না পরে সেই লক্ষ্য থেকেই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, আলাপচারিতায় এমনটিই জানাচ্ছিলেন সেনাসদস্য শাহিন মিয়া। বর্তমানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর সামরিক প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।

শাহিন মিয়া বলেন, ২০০১ সালে সেনা সদস্য হিসেবে যোগদানের পর বিভিন্ন সময় ছুটিতে এসে দেখি এলাকার অনেক ছেলে মেয়ে অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে পারে না। সে সময় তাদের সাথে কথা বলি, পড়াশোনার করার দিকে অনুপ্রাণিত করি খাতা কলম ও কিছু বই কিনে দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। আমার বেতনের কিছু টাকা পরিবারকে দিয়ে বাকি অর্থ তাদের পড়াশোনার জন্য খরচ করতে থাকি।

শিক্ষার্থীদের এই সহযোগিতার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারেন আমার কর্মস্থলের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে এ কাজের ব্যাপারে সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর থেকে বিভিন্ন মিডিয়ায় কথা বলার অনুমতি মিলে।

শাহিন মিয়া জানান, ২০০৮ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করা কার্যক্রমটির পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করি দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী উন্নয়ন সংস্থা (ডপস) নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নিজ জেলা শেরপুরের সদর, সীমান্তবর্তী এলাকা ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঝরে পড়া গরিব শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আওতায় আনতে শুরু করি সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে।

দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহিনের সংগঠনের আর্থিক সহযোগিতায় পড়াশোনা করছেন ৪৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থী, শেরপুরে ৫টি উপজেলার স্কুল কলেজে পড়াশোনা করছেন আরও তিন শতাধিক মেধাবী শিক্ষার্থী।

দরিদ্র ও অসহায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা শাহিনের এই মহৎ উদ্যোগ ইতোমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রপতির কর্তৃক ২০১৪-১৫ বর্ষে পেয়েছেন ‘বিশিষ্ট সেবা পদক (বিএসপি)’ এবং বিভাগীয় পর্যায়ে পান জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার-২০২০।

শাহিন মিয়া বিএসপি বলেন, শুধুমাত্র ঝরে পরা শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করা বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হলো তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। সুস্থ দেহ সুন্দর মন, শিক্ষাই জাতির উন্নয়ন এই স্লোগান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি দেশ ও সমাজের জন্য, আগামীদিনে কাজ করে যেতে চাই। যদি কোনো সহযোগিতা পাই ডপস একাডেমি করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে শুধু শিক্ষা থেকে ঝরে পরা শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারবে।