সাকিব-শিশিরের ভালোবাসা ও রোমাঞ্চকর প্রেমের গল্প

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসার পর আমাদের প্রতিদিনকার জীবন যাত্রাটাই পাল্টে গেছে। এমন কি কোন নিউজ খুঁজতে গেলেও ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব আর ইনস্টাগ্রামে চোখ রাখি আমরা। সত্যি বলতে কি এই প্রজন্ম ফেসবুক ছাড়া একটি দিন ভাবতেই পারেন না! গল্প নয়, সত্যি- বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জীবনেও প্রেম ধরা দিয়েছিল ফেসবুকে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের সবথেকে বড় পোস্টার বয়, বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান। এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যাকে নিয়ে সংসার পেতেছেন, সেই উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে পরিচয় নেটের জগতে। আজ তাহলে চলুন ফেসবুকের দিনগুলোর সেই প্রেমের গল্পটা শুনে নেই।

পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে থাকতেন শিশির। তখন পড়াশোনা করছিলেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও শিশিরের জন্ম ঢাকায়, বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর আগে তাঁর বাবা অগ্রণী ব্যাংকের চাকুরে ছিলেন। ১০ বছর বয়সে বাবা-মা’র সঙ্গে চলে যান মার্কিনমুল্লুকে। শিশিরের পরিবারে আছেন বাবা-মা, চার ভাই ও দুই বোন। সবাই থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটিতে দিন কাটছিল তার। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা পেয়ে গেলেন সাকিবের। বদলে গেল জীবন। যদিও ক্রিকেট খেলাটা তেমন টানতো না তাকে। তারপরও নামটা জানতেন। সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পরীক্ষা শেষ করে ২০১০ সালে বেড়াতে যান ইংল্যান্ডে। তখন সেখানে কাউন্টি ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। কোন এক অনুষ্ঠানে চোখে চোখ পড়তেই শুরু সিনেমার গল্পের মতো মুগ্ধতা।

কাউন্টির দল ওস্টারশায়ারে খেলতে থাকা সাকিব ভাবেননি এই মেয়েটিই একদিন তার ঘরণী হবেন। কিন্তু নিজেদের অজান্তেই একটু একটু করে ভালা লাগা থেকেই জন্ম নিল ভালোবাসা। তবে মন বিনিময় আরো পরে।

অন্তর্জাল আর মুঠোফোনই তখন তাদের সম্পর্কের সেতু তৈরি করে দিয়েছিল। ওস্টারশায়ারের হয়ে মিশন শেষে দেশে ফেরেন সাকিব। অন্যপ্রান্তে শিশির তখন ব্যস্ত পড়াশোনায়। চলে যান উইসকনসিনে। সাকিব খেলায় মন দেন। শিশির ইউনিভার্সিটির ব্যস্ত সূচিতে। তারপরও কোনো ব্যস্ততাই তাঁদেরকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে পারেনি। এভাবেই দিন কাটতে থাকল, একসময় গাঢ় হতে থাকে তাদের প্রেম। বাংলাদেশের ‘মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর’ ভাবতে থাকেন বিয়ের কথা। কিন্তু বিয়ে তো শুধুই দুজনের সম্পর্ক নয়। বিয়ে দুটো পরিবারেরও। পারিবারিকভাবেই এগিয়েছে বাকি আলোচনা। ঠিক হয় বিশেষ দিনে বিয়ে হবে তাদের। তারিখ ঠিক করা হয় ২০১২ ডিসেম্বরের ১২ তারিখ। বিশেষ দিনই তো- ১২.১২.১২! রূপসী বাংলা হোটেলে ২০ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয় তাদের। বিয়েতে সাকিব পড়েন সাদা পাঞ্জাবি আর শিশির লাল টুকটুকে শাড়ি!

এখন অহর্নিশ সুখের ভেলায় ভাসছেন সাকিব-শিশির ৯ টি বছর সংসারে এসেছে নতুন তিন অতিথি। দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে করছেন সুখের সংসার।

প্রতিনিয়ত স্ত্রী-সন্তানকে পাশে রাখছেন সাকিব। সাফল্যও পাচ্ছেন তিনি। ভালবাসার মানুষ পাশে থাকলে বুঝি সব লড়াই সহজ হয়ে উঠে! সাকিবের এই সাফল্যে শিশিরের অবদানও কম নয়!