পাঁচশ বছর ধরে মুসলিমদের শহর দখল করে রেখেছে স্পেন

শুধু ইসরায়েলই নয়, প্রায় পাঁচশ বছর ধরে মুসলিমদের শহর দখল করে রেখেছে স্পেনও। উঁচু উঁচু দেয়াল তুলে আর সেনা-পুলিশ মোতায়েন করে ইসরায়েলিরা যেভাবে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করছে ঠিক একইভাবে উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোর দুই শহর সেউটা ও মেলিল্লার নিয়ন্ত্রণ করছে স্পেনীয়রা।

স্বাধীনতার পর শহর দুটি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জোর দাবি জানিয়েছে আসছে মরক্কো কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের সেই দাবির প্রতি সম্মান জানায়নি স্পেন। মরক্কোর অধিবাসীরা অধিকৃত শহর দুটিকে এখনো যথাক্রমে ‘সেবতাহ’ ও ‘মেলিলাহ’ নামে ডাকে। তবে ইউরোপ ও অবশিষ্ট বিশ্বে এর পরিচিতি ‘সেউটা’ ও ‘মেলিল্লা’ বলে। আফ্রিকার এই শহর দুটিতে নিজেদের দখল জিইয়ে রেখেছে স্পেন। তবে নিজেদের এলাকায় ইউরোপের এই রাজনৈতিক বাস্তবতা কখনোই স্বীকার করেনি মরক্কো।

সেউটা ও মেলিল্লা ছাড়াও ভূমধ্যসাগরের জিব্রাল্টার প্রণালির ভেতর আরও ছোটে ছোট চারটি ভূখণ্ডের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য স্পেনের কাছে দাবি করে আসছে দেশটি। গত মাসে মরক্কো থেকে একদিনে আট হাজার মানুষ সীমান্ত ডিঙ্গিয়ে সেউটা ও মেলিল্লায় ঢুকে পড়ে। এই অভিবাসীদের সিংহভাগই ছিল মরক্কোর নাগরিক। স্পেন তাদেরকে ‘অবৈধ’ হিসাবে আখ্যায়িত করে।

ওই ঘটনা রাতারাতি স্পেন এবং মরক্কোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। স্পেন সঙ্গে সঙ্গেই ওই দুই ভূখণ্ডে বাড়তি সৈন্য পাঠায়। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ ঘটনাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মরক্কোর মধ্যে ‘নজিরবিহীন সংকট বলে’ বর্ণনা করেন। স্পেনের বিরুদ্ধে পালটা প্রচারণা শুরু করে মরক্কোর জনগণ।

মেলিল্লা দখলের প্রায় দুশ’ বছর পর সপ্তদশ শতাব্দীতে সেউটাও দখলে নেয় স্পেন। ১৯৫৬ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে মরক্কো স্বাধীনতা পেলেও সেইটা এবং মেলিল্লার নিয়ন্ত্রণ ছাড়েন স্পেন। মরক্কো এবং আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশের শত চেষ্টাও কাজে আসেনি। মুসলমানদের কাছে সেউটা এবং মেলিল্লা ইউরোপীয় খ্রিষ্টান শক্তির কাছে তাদের পরাজয় এবং অপমানের স্মৃতি-চিহ্ন।

বিশেষ করে উত্তর আফ্রিকার মুসলিম আরবরা মনে করে সেউটা এবং মেলিল্লা মুসলমানদের জায়গা, তা সে যতদিন ধরেই অন্যের দখলে থাকুক না কেন। মরক্কোর একজন লিখেছেন, পুরনো সেই ক্ষত এখনো সারেনি এবং তা সারবেও না যতদিন না ওই দুই ভূখণ্ড আবারও মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে আসে।