বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেছে, ক্লাসে একা হয়ে গেল নার্গিস!

সারা বিশ্বে বাল্যবিবাহের হার কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে। বাল্যবিবাহের হারে বাংলাদেশের অবস্থান এখন চতুর্থ, তবে সংখ্যার দিক থেকে ভারতের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ।

নতুন খবর হচ্ছে, নার্গিস নাহার নবম শ্রেণির ছাত্রী। তারা ৯ জন বান্ধবী অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। লকডাউনের সময় আটজন বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। এখন নার্গিস নাহার এক ক্লাসে শুধু একা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ধরলা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন চর সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ে করোনাপরবর্তী স্কুল খুললে উঠে আসে এ চিত্র।

ঝরে পড়েছে শিক্ষার্থী। কন্যাশিশুদের একটা বড় অংশ শিকার হয়েছে বাল্যবিয়ের। অনেকেই এখনো স্কুলমুখী হচ্ছে না। এরই মধ্যে নার্গিস নাহার নবম শ্রেণির একমাত্র মেয়ে হিসেবে বৃহস্পতিবার ক্লাসে আসে। প্রথম দিন তার কেটেছে খারাপ লাগার মধ্য দিয়ে। কোনো বান্ধবী নেই।

নার্গিস আক্ষেপ করে বলে- এখন শুধু আমিই বাকি রয়েছি। ক্লাসজুড়ে আমি শুধু একা। কারও সঙ্গে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারি না। তাই মন খারাপ করেই ক্লাস করতে হচ্ছে। বান্ধবীদের বিয়ের কথা জানতে পেরে নিজেরই কান্না পাচ্ছে। নিজের মধ্যেও শঙ্কা কাজ করছে। আমার শেষ পরিণতি কী হবে তাও অজানা।

সে বলে- আমি আমার বাবা-মাকে অনুরোধ করেছি। আমাকে যেন হঠাৎ করে বিয়ে না দেয়। আমি পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি করে নিজের অবস্থা তৈরি করেই বিয়ে করব। এর আগে নয়। কেননা নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে অন্যের কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।

সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়- এই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নার্গিস নাহার। সে শ্রেণির ছেলে সহপাঠীদের সঙ্গে একটি ব্রেঞ্চে একাই পাঠদানে অংশ নিয়েছে।

আনন্দমাখা মুখে সবাই যখন ক্লাস করে তখন নার্গিস নাহারের চোখেমুখে অদৃশ্য আতঙ্ত কাজ করছে। হাজারও দুশ্চিন্তায় হাসিমুখে ভরে ওঠে নার্গিসের মুখে মলিনতা। কীভাবে করবে স্বপ্ন পূরণ? কেননা এই শ্রেণিতে ৯ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮ জনই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।