আল্লাহর তরফ থেকে রাতারাতি নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদ

দিনাজপুর জেলার স্থাপত্য ঐতিহাসিক নিদর্শন সুরা মসজিদ। ১৯১৮ সালে মোঘল আমলে সম্রাট শাহাজান এবং সম্রাট সুজা উদ্দিনের মধ্যে ২ এলাকা নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়।

সম্রাট সুজা উদ্দিনের ঘোড়ার পালকে যে ঘাট দিয়ে পার হয়ে যুদ্ধ করতে যেত এবং যুদ্ধ শেষে ঐ ঘাট দিয়ে পার হয়ে ঘোড়ার পালকে পানি খাওয়ানো হতো। একই সঙ্গে গোসল করানো হতো সেই ঘোড়ার ঘাটে। এখানে ৫ জন পীর শায়িত আছেন। তারা হলেন, কাজী সদর উদ্দিন, বদেরে আরিফিন, শাহ ইসমাইল, দরিয়া বোখারী ও নুর উদ্দিন।

এই মসজিদের নাম নিয়ে আছে নানা রকম বক্তব্য। কেউ বলেন সৌর মসজিদ, কেউ বলেন সুরা মসজিদ, আবার কেউ বলে শাহ সুজা মসজিদ। সুর শব্দের অর্থ অপদেবতা বা জিন।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এক রাতের মধ্যে জিনেরা এটি নির্মাণ করে দেন। তাই এর নাম সুরা মসজিদ হয়েছে। সৌর শব্দের অর্থ আসমানি বা গায়েবী অর্থাৎ লোকচক্ষুর আড়ালে যা ঘটে বা হয় তাই গায়েবী। অর্থাৎ গায়েবী ভাবেই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সম্রাট সুজা উদ্দিন তার সৈন্য নিয়ে যে ঘরে গোপন বৈঠক করতো সেই ঘরটি পরবর্তীতে সেখানকার মুসল্লিরা মসজিদ নির্মাণ করেন। সেই থেকে এই মসজিদেও নাম হয় সুজা মসজিদ। এমন ধরণের আরও অনেক কথা লোকমুখে শোনা যায়।

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে ও ঘোড়াঘাট-হিলি পাকা সড়কের সংলগ্ন প্রাচীন দীঘির পরেই এই মসজিদটি অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি স্থাপনা। এ মসজিদে গ্রানাইটসহ নানা মূল্যবান পাথরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

মসজিদের পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। এর বাইরের ১২ দশমিক ১২ মিটার এবং প্রধান কক্ষের ভেতরের আয়তন ৪ দশমিক ৮৪ মিটার। মসজিদের প্রধান কামরায় ৪ কোণে ও বারান্দার ২ কোণে বাইরের দিকে একটি করে মিনার আছে। এগুলো কালো পাথরের তৈরি। প্রধান কামরার ও বারান্দার পূর্ব দেয়ালে ৩টি করে প্রবেশদ্বার আছে। প্রধান কক্ষের ওপরে একটি গম্বুজ আছে। বারান্দার ওপরে ৩টি ছোট গম্বুজ আছে।

এখানে রাস্তার উত্তর পাশে ৩৫০ গজ আয়তনের একটি প্রাচীন দীঘি রয়েছে। দীঘির ১৫ ফুট উঁচু পাড়গুলো বেশ প্রশস্ত। দক্ষিণ পাড়ের মধ্যভাগে একটি প্রশস্ত ঘাট রয়েছে। কারও কারও মতে ঘাটটি প্রায় ৫০ ফুট প্রশস্ত ছিল। ঘাট থেকে প্রায় ১০০ ফুট দক্ষিণ-পশ্চিমে দীঘির দক্ষিণ পাড়ের পশ্চিমাংশের দক্ষিণ দিকে এবং সদর সড়কের উত্তর দিক বরাবর প্রায় ৪ ফুট উঁচু একটি সমতল প্লাটফর্ম রয়েছে।

এদিকে নকশার মসজিদ উত্তর বাংলায় পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে এবং ষোড়শ শতকে খুবই জনপ্রিয় ছিল। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ বাইরের দেয়ালে ব্যবহৃত ইটের সুক্ষ রিলিফ নকশার সাদৃশ্য পাওয়া গেছে ১৫২৩ সালে নির্মিত রাজশাহীর বাঘা জামে মসজিদের সঙ্গে।

ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে মিহরাবগুলোতে রয়েছে উন্নতমানের কারুকাজ। মসজিদে ইটের সঙ্গে পাথরের ব্যবহার, দেয়ালের মাঝে পাথরের স্তম্ভ, ইটের গাঁথুনিগুলো চোখে পড়ার মতো। এছাড়া প্রতিটি দরজার নিচে চৌকাঠ পাথরের তৈরি। পূর্বে মসজিদে প্রবেশের সিঁড়ি আছে। এখানকার কালো ও বেলে পাথর বাংলার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত রাজমহল থেকে আনা হয়েছে।

সূত্র, আরটিভি