মহান আল্লাহ আমাদের অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন

মহান আল্লাহ আমাদের অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। আমরা সারাক্ষণ তার নেয়ামতের ভেতর ডুবে আছি। এসব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা জরুরি। শুকরিয়া আদায় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে এই নেয়ামতগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ব্যবহার করা। আর বড় অকৃতজ্ঞতা হচ্ছে এসব নেয়ামত উপভোগ করে আল্লাহর অবাধ্যাচার করা এবং তার দেওয়া সব কিছু ব্যবহার করেও গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বিস্তারিতভাবে সব গুনাহের কাজের বিবরণ দিয়েছেন যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। রাসূল (সা.) ও সতর্ক করে বলেছেন, তোমাদের বিরুদ্ধে রয়েছে দুটি দুশমন। ১. নফস ও ২. শয়তান।

শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচাই আমাদের মূল পরীক্ষা। নফসের ভেতর ভালো কাজের আগ্রহও জাগবে আবার গুনাহের চাহিদাও তৈরি হবে। এমন কোনো মানুষ নেই, যার মনে গুনাহের প্রতি আসক্তি তৈরি হয় না; আবার ভালো হয়ে যাওয়ার পবিত্র অনুভূতি তৈরি হয় না। মনে রাখতে হবে, মানুষ ফেরেশতার মতো না যে, অন্তরে গুনাহর উদ্রেক হবে না। ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে শুধুই ইবাদতের জন্য। তাদের অন্তরে এসব কিছুই আসে না। মানুষের মনে গুনাহের চাহিদা সৃষ্টি হবে। এই চাহিদা দূর করতে হবে। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে এবং তার প্রিয়পাত্র হতে পারবে।

আমাদের সামনে দুটো পথ। দুটোই খুব সুস্পষ্ট। এক হচ্ছে শয়তানের পথ; যে পথে পাপ, অন্যায়-আনাচার, মনের কুপ্রবৃত্তির ইচ্ছা পুরা করা হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে দয়াময় আল্লাহর পথ; এ পথ পবিত্র ও শুভ্র-স্বচ্ছ, এ পথে আল্লাহর হুকুম মানা হয় এবং শয়তানকে পরাস্ত করা হয়, কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকতে হয়। গুনাহের পথ থেকে যত কষ্টই হোক, দূরত্ব অবলম্বন করতে হবে। এটা হচ্ছে মুহাজাদা। এর জন্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে। মন ঝুঁকে যাচ্ছে গুনাহের দিকে। কিন্তু আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে বিরত থাকছে। ধৈর্য ধরছে। এই ধৈর্য ধারণের বিনিময়ে আল্লাহ অনেক উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন।

আল্লাহ মানুষকে চোখ দিয়েছেন আল্লাহর কুদরত দেখার জন্য। কিন্তু ঘর থেকে বের হলেই গুনাহের শত আয়োজন। চোখ তুললেই গুনাহ আর গুনাহ। আজকাল তো ঘরেই; এমনকি পকেটেই গুনাহের সব উপকরণ বিদ্যমান। মোবাইল আছে, তার মাধ্যমে আপনার কুপ্রবৃত্তির চাহিদা পুরা করতে পারেন। চোখের তৃপ্তি আস্বাদন করতে পারেন। কিন্তু সাবধান! আল্লাহ কিন্তু সব দেখছেন! পৃথিবীবাসী দেখুক আর নাই দেখুক। অন্তরের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করাই হচ্ছে ঈমানের দাবি। মনের ভেতর যে কুমন্ত্রণা তৈরি হয়, তা আল্লাহই সৃষ্টি করেন। বান্দা যেন দমন করে। বান্দা কুপ্রবৃত্তিকে যত দমন করবে ততই সে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবে। ঈমানি নূর তার অন্তরে সৃষ্টি হবে। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হবে।

এমন কোনো অজিফা নেই যা পড়লে গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। বরং চেষ্টা করেই বাঁচতে হবে। হ্যাঁ, আল্লাহর কাছে গুনাহ থেকে বাঁচার দোয়া করতে হবে। আপনি যেখানে আছেন সেখানে গুনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর স্মরণ অন্তরে উপস্থিত করা এবং কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যে, আল্লাহ! আমার চোখ-কান দ্বারা গুনাহের আশঙ্কা হচ্ছে, আপনি হেফাজত করুন; আমার চোখ দ্বারা গুনাহের কাজ হচ্ছে, আপনি হেফাজত করুন; আমার হাত-পা দ্বারা গুনাহের আশঙ্কা হচ্ছে, আপনি হেফাজত করুন। গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং ত্যাগ শিকার করতে হবে। নিজের ওপর বল প্রয়োগ করে হলেও তা থেকে বাঁচার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

ইউসুফকে (আ.) কে যখন বাদশাহর স্ত্রী পাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! এই নারী যে পাপ কাজের দিকে আমাকে আহ্বান করছে তারচেয়ে কারাগারই আমার কাছে বেশি পছন্দের।’ চিন্তা করুন, কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি! একদিকে পূর্ণ যৌবনদীপ্ত যুবক। দরজা-জানালা সব রুদ্ধ। অন্যদিকে এক নারী স্বপ্রণোদিত হয়ে তাকে অপকর্মের দিকে ডাকছে! ইউসুফ (আ.) আল্লাহর কাছে হেফাজত চাইলেন। অথচ তার অন্তরেও ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছিল। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। আসক্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাতে লিপ্ত না হয়ে বাঁচার জন্য চিন্তা-চেষ্টা করেছেন। যদি কোনো ধরনের পাপচিন্তাই না আসে, তাহলে তাতে কী আর বিশেষত্ব থাকল! যেমন ফেরেশতাদের অন্তরে গুনাহের কোনো ইচ্ছাই জাগে না। মানুষের অন্তরে গুনাহের ইচ্ছা জাগে। সেই ইচ্ছাকে দমন করাই মুমিনের কাজ।
একজন বুযুর্গ সুন্দর বলেছেন, ধরুন একজন পিপাসার্ত রোজাদার। গরমের মৌসুম। কেউ তার সামনে পানির পাত্র নিয়ে হাজির হলো। তার পানির প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে না? হবে, তবে সে সঙ্গে সঙ্গে ভাববে, আমি রোজাদার। ইচ্ছে জাগলেও সে পানি পান করতে চাইবে না। তো এমন পরিস্থিতিতে আমাদের প্রথম কাজ হলো আল্লাহর সাহায্য ও আশ্রয় পার্থনা করা।