সাহিলের আবদার ফেলতে পারলেন না অধ্যক্ষ, ক্লাস করলেন একাই

জীবনে প্রথমবার ক্লাস করেছে সাহিল, তাও একা। আজ রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে শিশুটির মা জানান, চলতি বছরের শুরুতে রাজধানীর উত্তরার চার নম্বর সেক্টরে চাইল্ড হ্যাভেন স্কুলে প্লে গ্রুপে ভর্তি হয়েছে সাহিল। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সশরীরে শ্রেণিকক্ষে বসার সুযোগ হয়নি তার। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় আজ রবিবার থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে সরকার। টেলিভিশনে এই খবর দেখে মায়ের কাছে স্কুলে আসার আবদার করে সে। আগে থেকে স্কুলের ব্যাগও গুছিয়ে রাখে নিজের হাতে।

কিন্তু প্রথম দিনতো ছেলের স্কুল নেই। নানাভাবে বুঝিয়েও নিরুপায় হয়ে অধ্যক্ষকেই ফোন দিয়ে বসেন তিনি। ফোনে তিনি অধ্যক্ষ মঞ্জুরুলকে অনুরোধ করেন তার ছেলেকে যেন বোঝানো হয় যে তাদের স্কুল এখনো খোলা হয়নি। এ সময় ছোট্ট সাহিল অধ্যক্ষকে উদ্দেশ করে বলে, স্যার আমার স্কুল খোলা, কিন্তু মা আমাকে স্কুলে আনছে না। জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, তোমাদের স্কুল তো এখনো খোলা হয়নি।

ছোট্ট সাহিলের একটাই কথা, আমি স্কুলে যাবো। টিভিতে শুনেছি, আজ থেকে স্কুল খোলা। এসব বলতে বলতে এক পর্যায়ে সে মোবাইলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। ছোট্ট শিশুটির আবদার মেনে নিয়ে সাহিলকে স্কুলে নিয়ে আসার অনুমতি দেন ওই শিক্ষক।

পরে মায়ের হাত ধরে স্কুলে আসে প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী সাহিল। শ্রেণিকক্ষে তার অন্য কোনও বন্ধু-বান্ধব না থাকলেও, নিজেই একা একা বই খাতা বের করে লেখাপড়া করে সে। তবে, স্কুলে তার ক্লাসে কোন শিক্ষার্থী না থাকলেও জুমে চলমান রয়েছে ক্লাসের কার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষেই বসে জুমের মাধ্যমে ক্লাসে অংশ নেয় সে। পরে হাস্যোজ্জ্বল মুখে স্কুল প্রাঙ্গন ছেড়ে যায় সে।

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারিতে এই দীর্ঘ সময়ে বিশেষ করে ছোট্ট শিশুরা বাইরে বের হওয়ার তেমন কোনও সুযোগ পায়নি। তাদের ঘরের ভেতরেই বন্দী থাকতে হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর আজ স্কুল খোলায় শিক্ষক হিসেবে আমরা যেমন খুশি, তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছিল উৎসব আনন্দের আমেজ।

তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্লে এবং কেজি শ্রেণিতে এখনো সশরীরে স্কুলে পাঠদানের কার্যক্রম শুরু করেনি সরকার। কিন্তু আমার স্কুলের প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী সাহিলের মোবাইল ফোনের কান্নাকাটি আমাকে খুব আবেগপ্রবণ করে ফেলে। সে কারণেই তার অভিভাবককে জানাই- তাকে যেন আজ স্কুলে নিয়ে আসা হয়। স্কুলে আসার পর সাহিলের মুখে ছিল আনন্দের ঢেউ।