জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো ঈমান

সফল ব্যক্তিদের পরিচয়: প্রতিটি প্রাণীই মরণশীল। তাই অন্য প্রাণীর মতো প্রতিটি মানুষও প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুনিয়ার এই ক্ষুদ্র জীবনে কে সফল আর কে ব্যর্থ- তা চূড়ান্ত হবে কিয়ামতের দিন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।

শুধু কিয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফল।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)

উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ তাদেরই সফল বলে ঘোষণা করেছেন, যারা কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যেতে পারবে। তাই আমরা যদি প্রকৃত সফলতা অর্জন করতে চাই, আমাদের জানতে হবে যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? কোন কোন কাজ মানুষের জন্য জাহান্নামকে হারাম করে দেয়। নিম্নে পবিত্র হাদিসের আলোকে এমন কিছু কাজ তুলে ধরা হলো—

ঈমান আনা
জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো ঈমান। যারা মহান আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য ও রাসুল (সা.)-কে তার রাসূল বলে মেনে নেবে না, তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার মুআজ (রা.) রাসূল (সা.)-এর পেছনে বাহনে ছিলেন, তখন তিনি তাকে ডাকলেন, হে মুআজ ইবনে জাবাল।

মুআজ (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার সার্বিক সহযোগিতা ও খেদমতে উপস্থিত আছি। তিনি ডাকলেন, মুআজ। মুআজ (রা.) উত্তর দিলেন, আমি উপস্থিত হে আল্লাহর রাসূল ও প্রস্তুত। তিনি আবার ডাকলেন, মুআজ। তিনি জবাব দিলেন, ‘আমি হাজির ও প্রস্তুত।’ এরূপ তিনবার করলেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সঙ্গে এ সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল, তার জন্য আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।

মুআজ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি মানুষকে এ খবর দেব না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে?’ তিনি বলেন, ‘তাহলে তারা এর ওপরই ভরসা করবে।’ মুআজ (রা.) (জীবনভর এ হাদিসটি বর্ণনা করেননি) মৃত্যুর সময় এ হাদিসটি বর্ণনা করে গেছেন, যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়। (বুখারি, হাদিস : ১২৮)

নামাজের প্রতি যত্নশীল হওয়া
যারা নামাজের প্রতি যত্নশীল হবে এবং একাগ্রচিত্তে খুশুখুজুর সহিত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ও সুন্নত আদায় করবে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। হানজালা আল আসইয়াদি (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সংরক্ষণ করবে তথা যথাযথভাবে অজু করে যথা সময়ে উত্তমরূপে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪/২৬৭)

কোনো কোনো হাদিসে ফজর ও আসর নামাজকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। উমারা ইবনে রুওয়াইবা সাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সূর্য উদয় হওয়ার আগের (ফজরের) নামাজ এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার আগের (আসরের) নামাজ আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (নাসায়ি, হাদিস : ৪৭১)

শুধু ফরজ নামাজই নয়, বিভিন্ন হাদিসে সুন্নত নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিলেও জাহান্নাম হারাম হওয়ার সুসংবাদ রয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সব সময় ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন। এ সুন্নতগুলো হলো, জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের (ফরজের) পর দুই রাকাত, এশার (ফরজের) পর দুই রাকাত এবং ফজরের (ফরজের) আগে দুই রাকাত। (তিরমিজি, হাদিস : ৪১৪)

দাওয়াত ও সংগ্রামে অগ্রগামী হওয়া
আবায়া ইবনে রিফাআ (রহ.) বলেন, আমি জুমার নামাজে যাওয়ার সময় আবু আবস (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে যার দুই পা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৯০৭)