আগামীকাল ঈদে মিলাদুন্নবী

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হবে আগামীকাল ২০ অক্টোবর বুধবার। মানুষের হেদায়তের জন্য যুগে যুগে আল্লাহ এই ধরণীতে অসংখ্য নবি-রসুল পাঠিয়েছেন। নবি-রসুলদের আগমন ধারায় সর্বশেষ নবি হলেন মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (স)। মহান আল্লাহর যত সৃষ্টি আছে সব সৃষ্টিকূলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী হলেন হজরত মুহাম্মাদ (স.)। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার সূর্যোদয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে, সুবহে সাদিকের সময় মহাকালের এক মহাক্রান্তিলগ্নে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আবার ৬৩ বছরের এক মহান আদর্শিক জীবন অতিবাহিত করে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ১১ হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে একই দিনে তিনি এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যান।

রসুল মুহাম্মদ (স) যেদিন এই জগতে এসেছিলেন, সেদিন বিশ্ব জাহান হেসেছিল, আনন্দে নেচেছিল। আমিরুল মুমিনিন হজরত আলি (রাযি.) বলেন, যে রাতে মুহাম্মদ (স) জগতে আসবেন সে রাতে পুরো রাত আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি আনন্দে মেতেছিল, প্রতিটি পাথর, প্রতিটি বালুকণা, প্রতিটি ধূলিকণা, গাছের পাতা, আকাশের তারকা, জমিনের সব সৃষ্টি আল্লাহর তাসবিহ্ পাঠ করছিল।

তাই রসুল (স)-এর জন্মের দিনে মুমিনদের জন্য খুশির বার্তা রয়েছে। শুধু মুমিনই নয়; সমগ্র জগতবাসীর জন্য। রসুল মুহাম্মদ (স) এই জগতে এসেছিলেন আল্লাহর রহমত হয়ে। সুরা আল-আম্বিয়ায় আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত করে পাঠিয়েছি।’

নবিজি ছিলেন রহমাতাল্লিল আলামীন, সমগ্র জগতবাসীর জন্য রহমত। তার আগমনে জগতবাসী জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে মানবতা ফিরে পেয়েছিল। রসুল মুহাম্মদ (স)কে আল্লাহ এই জগত থেকে নেওয়ার আগে ঘোষণা দেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন বিধানকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের ওপর আমার নেয়ামতরাজিকে পূর্ণতা দিলাম। আর ইসলামকে তোমাদের একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়েদার আয়াত-৩)

কেবল রবিউল আউয়াল মাস এলে আমরা নবিজিকে স্মরণ করব তা কিন্তু নয়! জীবনের প্রতিটি ক্ষণে, প্রতিটি মুহূর্তে তার নীতি আদর্শ আমাদের মেনে চলতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে তার নবিজির জীবন আদর্শ মেনে চলার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে রসুল! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহ তাআলা তোমাদের ভালো বাসবেন, তোমাদের গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন। তিনি পরম ক্ষমাশীল অসিম দয়ালু।’ (সুরা মায়েদা আয়াত-৩১)

রসুল (স) শ্রেষ্ঠ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে একটি শ্রেষ্ঠ জাতি গঠন করেছিলেন। ইবনে মাজাহ শরিফের এক বর্ণনায় এসেছে, নবিজি বলেন, ‘আমি সর্বোত্তম চরিত্রের পূর্ণাঙ্গতা দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ রসুল (স)-এর আদর্শ ধারণ করেই সাহাবায়ে কেরাম যুগের সর্বোত্তম মানুষ হতে পেরেছিলেন। নবিজি বলেন, ‘সর্বোত্তম মানুষ হলো আমার যুগের মানুষ, এরপর তাদের পরবর্তী যুগের মানুষ, এরপর তাদের পরবর্তী যুগের মানুষ।’

আমরা যদি সর্বোত্তম উম্মত হতে চাই, সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হতে চাই, তাহলে সর্ব ক্ষেত্রে আমাদেরকে নবিজির দেখানো পথ অনুসরণ করে চলতে হবে। নবিজি আমাদেরকে বলে গেছেন, ‘হে উম্মত! আমি তোমাদের মাঝে দুটো জিনিস রেখে গেলাম. আল্লাহর কিতাব কালামুল্লাহ শরিফ এবং আমার সুন্নাত। যতদিন তোমরা এ দুটিকে আকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা গোমরাহ হবে না।’