আগামীকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেতে মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ- শ্রীলঙ্কা খেলা মানেই টানটান উত্তেজনা। খেলার মাঠে কোন দুই হার মেনে নিতে চায়না, তবে শেষ হাসি হাঁসতে হয় যে কোন এক দলকেই

নতুন খবর হচ্ছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম জয়ের স্বাদ পেতে আগামীকাল চলমান আসরের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় শুরু হবে ম্যাচটি।

হার দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করে বাংলাদেশ। বাছাই পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হারে টাইগাররা। তবে পরের ম্যাচেই ঘুড়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। স্বাগতিক ওমানের বিপক্ষে ২৬ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। আর গ্রুপ পর্বে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ৯৭ রানের বড় জয়ে সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
তবে সুপার টুয়েলভ পর্ব বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বড় দল হিসেবে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছয় উইকেটে জয় আছে বাংলাদেশের। তবে বাছাই পর্বের বাইরে কোন দলকেই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।

এই ফরম্যাটে দুর্বলতার কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ কখনো খুব ভালো করতে পারেনি।২০০৭ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে সুপার এইটে খেলতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০০৯, ২০১০ ও ২০১২ সালের আসরে একটি জয়ও পায়নি টাইগাররা।

২০১৪ আসরটি ১৬ দলের হওয়ায় জয় পায় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে ৩ খেলায় ২টি জয়ে হয়েছিল গ্রুপ সেরা। এরপর সুপার টেনে ৪ ম্যাচের সবগুলোই হারে টাইগাররা।

একই ধরনের চিত্র ছিল ২০১৬ সালেও। প্রথম রাউন্ডে ৩ খেলায় ২ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিলো। গ্রুপ সেরা হয়ে সুপার টেন-এ উঠলেও, সেখানে কোন জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। সবগুলো ম্যাচই হারে টাইগাররা। সুপার টেন পর্বে ভারতের কাছে ১ রানে হার বাংলাদেশের জন্য ছিলো কষ্টদায়ক। শেষ তিন বলে তিন উইকেট হারায় তারা। যখন জয়ের জন্য দরকার ছিল তিন বলে মাত্র ২ রানের।

আগামী ম্যাচে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা হওয়ায় আত্মবিশ্বাসী হতেই পারে বাংলাদেশ। তবে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেই সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছে লঙ্কানরা।

এই ফরম্যাটে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় রান করেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেয়া ৬ উইকেটে ২১৪ রানের টার্গেট ৫ উইকেটে ২১৫ রান করে স্পর্শ করেছিল টাইগাররা। ৩৫ বলে অনবদ্য ৭২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম। এতে ৫ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয় পায় বাংলাদেশ। ডাবল-লিগের ঐ টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় লেগেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। আসরের আরেকটি দল ছিল ভারত।

টুর্নামেন্টের এক ম্যাচে দুই দলের খেলোয়াড়রা এক পর্যায়ে মৌখিক বাক-বিতাণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিল। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক পর্যায়ে ম্যাচটি না খেলার হুমকিও দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

পরিশেষে, টিম ম্যানেজমেন্ট সাকিবকে বুঝাতে সক্ষম হয় এবং বর্তমান অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দলের জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছিল টাইগাররা।

সে ম্যাচেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেদের সেরাটা মেলে ধরতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সেই বিবাদে জড়ানো ম্যাচটি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার শেষ লড়াই।

নিশ্চিতভাবেই আগামীকালের ম্যাচটি সেই ম্যাচের স্মৃতি জাগিয়ে তুলবে, যদিও শ্রীলঙ্কা দলের অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ই ম্যাচটি খেলেনি। কিন্তু বাংলাদেশের অভিজ্ঞরা সেই ম্যাচের অংশ ছিলেন।

এই ফরম্যাটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে চারটিতে জিতেছে টাইগাররা। সাতটিতে জিতে শ্রীলঙ্কা। সর্বশেষ দুই ম্যাচে জয় ছিল বাংলাদেশেরই।

কিন্তু সব কিছু পিছনে ফেলে রেখে প্রথমবারের মতো আসরের ফাইনালে খেলার লক্ষ্যে জয় দিয়ে শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য তরুণদের কাছ থেকে ভালো পারফরমেন্স আশা করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সাইফুদ্দিন, মাহেদি হাসান ও নাইম শেখের জ্বলে উঠার আশায় অধিনায়ক।
তিনি বলেন, ‘তাদের পারফরম্যান্স আমাদের জন্য ইতিবাচক। সাইফুদ্দিন তিন ম্যাচেই ভালো বোলিং করেছেন, ভালো ব্যাটিং করেছেন। মাহেদি ভালো বল করেছেন। নিজের প্রথম ম্যাচে ৬৪ রান করেন নাইম।’

মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমি আশা করি তারা এই ধারা অব্যাহত রাখবে। তারা যখন পারফর্ম করে তখন খুবই ভালো লাগে এবং এটা আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে। আমি আশা করি, সুপার টুয়েলভেও তারা আরও ভালো করবে।’