আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার মাধ্যম কুরআন তিলাওয়াত

কুরআনের প্রতিটি আয়াতে যেমন রয়েছে বিশ্বমানবতার হেদায়াত ও মুক্তির বারতা তেমনি কুরআন তিলাওয়াতে রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য অফুরান সওয়াব ও পুরস্কারের ঘোষণা। কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত নিয়ে বিশিষ্ট আলেম ড. মাওলানা মুশতাক আহমদের বয়ান শ্রুতিলিখন করেছেন- মিজান বিন রমজান

আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার মাধ্যম কুরআন তিলাওয়াতে : হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের শ্রম কম আর সম্মানী বেশি। এ উম্মতকে আল্লাহতায়ালা কালামুল্লাহ বা আল কুরআন দান করেছেন যা স্বয়ং আল্লাহর কথা। হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতেন তবে তা ছিল নির্ধারিত সময়ে। আর এ উম্মতের জন্য যখন খুশি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমার যখন মন চাইত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলব, তখন কুরআন তেলাওয়াত শুরু করে দিতাম।’

কুরআন খতমের সহজ পদ্ধতি : রমজান মাস ছাড়া কুরআন খতম করে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। অথচ কেউ চাইলে প্রতি দু’মাসে অন্তত একবার হলেও কুরআন খতম করতে পারে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ও পরে দেড়-দু পৃষ্ঠা করে চাইলেই পড়া যায়। এতে সময়, দশ মিনিটের বেশি লাগবে না। প্রতি ওয়াক্তে আপনি মাত্র দু’পৃষ্ঠা করে পড়লেও দিনে এক পারা পড়া হয়ে যায়। এভাবে পড়লে প্রতি মাসে খতম করা খুবই সহজ। এ ছাড়া আমরা কাজের সময় মনে মনে মুখস্থ ছোট ছোট সূরাগুলো পড়তে পারি। অফিসে যাওয়ার সময় গাড়িতে কোনো কাজ থাকে না তখনো চাইলে মুখস্থ সূরাগুলো পড়তে পারি সম্ভব হলে দেখে দেখেও পড়তে পারি।

কুরআন তিলাওয়াতে ১০ গুণ সওয়াব : মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে, বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বদলা হবে দশগুণ, এ কথা বলছি না যে, আলিফ-লাম-মিম, একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মিম একটি অক্ষর (তিরমিজি-২৯১)। কুরআনের একটি অক্ষর পড়লে সর্বনিম্নে ১০টা নেকি মেলে। সূরা ফাতিহা আমাদের সবারই মুখস্থ। আমরা আমাদের কর্মব্যস্ততার মাঝেও সূরা ফাতিহা পড়তে পারি। এতে কাজকর্মের মোটেও ব্যাঘাত ঘটে না। অতি সহজে বহু সওয়াবের ভাগি হওয়া যায়। এমন সহজ সুযোগ কারও হাতছাড়া করা ঠিক নয়।

কবরের আজাব থেকে মুক্তি : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, যখন মানুষকে কবরে দাফন করা হয় তখন ফেরেশতা মাথার দিক থেকে আজাব দেওয়ার জন্য আসে, তখন কুরআন তাকে বাধা দেয়। যখন ফেরেশতা সামনের দিক থেকে আসে, তখন দান-সদকা তাকে বাধা দেয়। যখন ফেরেশতা পায়ের দিক থেকে আসে, তখন মসজিদে পায়ে হেঁটে যাওয়া তাকে বাধা দেয়।

কুরআন তিলাওয়াতকারীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য : আবু মুসা আল আশ’আরি (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে তার উদাহরণ হলো লেবুর মতো তার স্বাদও ভালো আবার ঘ্রাণও ভালো। মুমিনের উদাহরণ হলো খেজুরের মতো, তার স্বাদ ভালো কিন্তু কোনো ঘ্রাণ নেই, আর কুরআন তিলাওয়াতকারী পাপী ব্যক্তির উদাহরণ হলো ফুলের মতো ঘ্রাণ ভালো কিন্তু স্বাদ তিক্ত, আর যে কুরআন তিলাওয়াত করে না এমন হাফেজের উদাহরণ হলো মাকাল ফলের মতো যার স্বাদ তিক্ত এবং সুগন্ধ নেই।’ (সহিহুল বুখারি, হাদিস : ৭৫৬০)