বিয়ে পাগল তালেবানদের আতঙ্কে বিধবাদের ঘুম হারাম

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা— ইউনিসেফ জানিয়েছে, আফগানিস্তানের পাঁচ প্রদেশের গার্লস স্কুলগুলো খুলে দিয়েছে তালেবান সরকার। এই পাঁচ প্রদেশ হচ্ছে— উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বালখ, জুযজান ও সামানগান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুন্দুজ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উরুজগান। খবর টোলো নিউজের।

নতুন খবর হচ্ছে, জোরপূর্বক বিয়ে এবং বিয়ের আগেই ‘বউ’ ঘোষণা-রাতদিন এই নিয়ে পড়ে আছে আফগানিস্তানের ‘বিয়ে পাগল’ তালেবানরা। ২০ বছর পর ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে তালেবান যোদ্ধারা। কে কখন কাকে বিয়ে করবে-মাথায় সারাক্ষণই শুধু এই চিন্তা। বাল্য বিয়ে, ধর্ষণ, অস্ত্রের মুখে নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া তালেবান যোদ্ধাদের কাছে ‘পান্তা ভাতের মতো’। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে তালেবান পুনঃরুত্থানের পর জেঁকে বসা এ দুঃশাসনের ভয়াবহ মূল্য দিচ্ছে দেশটির নারীরা। স্বপ্নে ধর্ষণ আতঙ্ক, ঘুম ভাঙলেই বিয়ের ভয়-তালেবানের আফগানিস্তানে এটাই হলো নারী সমাজের নিত্যদিনের বাস্তবতা। ভুক্তভোগী কয়েকজন নারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ডিপ্লোম্যাটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , ‘দেশটির বিধবা কিংবা অবিবাহিত যুবতীদের এখন সময় কাটে ধর্ষণাতঙ্কে’।

হেরাতের সিটি পুলিশ বিভাগে কাজ করতেন সুমা (এটা ছদ্মনাম)। প্রায় তিন বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন। তাই যত আতঙ্কই জীবনকে হুমকির মুখে ফেলুক, পাঁচ সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হবে। কিন্তু আগস্ট মাসে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পরপরই চাকরি হারালেন তিনি। এ অবস্থাতেই তার ওপর কু-নজর পড়ে এক তালেবান যোদ্ধার। তাকে বিয়ে করতে চায়। বিয়েতে রাজি না হলে ধর্ষণ এবং সন্তানসহ তাকে হত্যার হুমকি। উপায়ান্তর না দেখে সুমা তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। সুমা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে যেন সে আমাকে প্রতিরাতেই ধর্ষণ করেছে। ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব। কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে সেটা আর হয়ে ওঠে না।’ ২০১৮ সালে আফগানিস্তানে যতজন আত্মহত্যা করেছিলেন, তাদের ৮০ শতাংশই ছিলেন নারী। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েই তারা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনই বলছে, এখনো ৮০ শতাংশ আফগান নারী ক্রমাগতভাবে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই যোদ্ধাদের বিয়ে নিয়ে উদ্বেগে ছিল তালেবান। ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখলের পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ধর্মীয় নেতা-মাতব্বরদের ১৫ বছরের বেশি বয়সের মেয়েদের ও ৪৫ এর কম বয়সি বিধবাদের একটি তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। এ চিঠি পাঠানো হয় স্থানীয় মাতব্বরদের ঘরে ঘরে। তালেবান সাব কমান্ডারের স্পষ্ট নির্দেশ, মেয়ের বয়স ১৮ হলে আর ঘরে রাখা যাবে না, এটা পাপ, বিয়ে দিতে হবে। কাবুল দখলের মাসখানেক আগে দেওয়া এ নির্দেশনা ‘বিয়েপাগল’ তালেবানদের জন্য একটা বিয়ের সনদ হিসাবে কাজ করেছে। দখলদারিত্ব চুকে যাওয়ার পর তারা মরিয়া হয়ে এখন ‘বিয়ে বিয়ে’ খেলায় মত্ত।

পাকিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষা একটি শহরে আছে হাইস্কুলের ছাত্রী শবনম। তালেবানরা যখন তাদের বাড়িতে কড়া নাড়ে তখন এক যোদ্ধাকে দেখে চমকে ওঠে সে। যে ছেলেটি এতদিন তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল, সে-ই এখন ভরা মজলিশে শবনমকে নিজের ‘স্ত্রী’ ঘোষণা করেছে! এ কাজে নাকি স্থানীয় নেতারা তাকে অনুমতিও দিয়েছে!

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর পর্যবেক্ষণ বলছে, আফগানিস্তানে এখন ‘ফোর্সড ম্যারেজ’ তথা জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। তালেবানদের দাবি হলো, সুমার মতো বিধবাদের জোর করে হলেও বিয়ে করে তারা সমাজের ‘উপকার’ করছে। এ কারণে দেশটিতে যে ২০-৩০ লাখ বিধবা আছেন, তাদের প্রত্যেকেরই ঘুম হারাম। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা।