জিততে-জিততে ম্যাচ হেরে যাওয়া টাইগারদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে

প্রায় দুই বছর পর লাল সবুজের দর্শকদের গর্জনে কেঁপেছিল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপের ভরাডুবির পর বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল নিজেদের সামর্থ প্রমাণের। শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে যা এক প্রকার কঠিনও ছিল। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে বাংলাদেশের বোলাররা ম্যাচ জিতিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু, স্কোরবোর্ডে রান যে ছিল না। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিলের বলি হয়েছে বাংলাদেশ আরও একবার।

শুক্রবার শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। নির্ধারিত ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান করে আফিফ-মেহেদীরা। টার্গেটে খেলতে নেমে ৪ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। মোহাম্মদ নাওয়াজ ১৮ ও শাদাব ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন।

অথচ টাইগারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দিনটি হতে পারতো বাংলাদেশের। তাসকিনের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে মিড উইকেটে দারুণ চার মারেন বাবর আজম। পঞ্চম বলে ব্যাট ছুঁয়ে যায় উইকেটরক্ষক সোহানের গ্লাভসে। কিন্তু বাংলাদেশ বুঝতে পারেনি, রিভিউও নেয়নি। রিপ্লেতে পরিষ্কার বাবর আউট। গ্যালারির গগণ বিদারি গর্জন থেমে গেছে, ছড়িয়ে পড়েছে আক্ষেপ। কিন্তু তাসকিন বেশিক্ষণ আক্ষেপের সঙ্গে রাখলেন না। স্ট্যাম্প ওড়ালেন বাবরের। উল্লাসে যেন ফেটে পড়ে শের-ই-বাংলা। এর আগের ওভারেই আরেক ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানের স্ট্যাম্প উড়িয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাবর (৭), রিজওয়ান (১১) জুটি কতটা ভয়ঙ্কর তা দেখা গেছে সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। তাদেরই বাংলাদেশ ফিরিয়েছিল প্রথম চার ওভার না যেতেই। তখন স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ২২।

পাওয়ার প্লেতে শুধু বাবর-রিজওয়ানের নয়, বাংলাদেশ ফিরিয়েছে হায়দার আলী ও অভিজ্ঞ শোয়েব মালিককেও। দুজনেই ফেরেন ০ রানে। পাওয়ার প্লে-তে পাকিস্তান ৪ উইকেট হারিয়ে ২৪ রান তোলে। তাসকিনদের দারুণ বোলিং দুর্দান্ত শুরুর পর উঁকি দেয় জয়ের সম্ভাবনা।

তখনই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ফখর জামান ও খুশদিল শাহ। দুজনে ৫০ বলে ৫৬ রান যোগ করে ম্যাচের নাটাই নিজেদের দিকে নিতে থাকেন। ৩৬ বলে ৩৪ রান করা ফখরকে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন তাসকিন, তার আউটেই ভাঙে জুটিটি। এরপর খুশদিল এগোতে থাকেন শাদাব খানকে নিয়ে।

২৪ বলে প্রয়োজন হয় ৩৮ রান। উচ্ছ্বাসকে ঘিরে ধরেছে হতাশায়। বোলিংয়ে এসে সেই খুশদিলকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। আবারও গর্জনে কাঁপে শের-ই-বাংলা। খুশদিল আউট হন ৩৫ বলে ৩৪ রান করে। তবুও লাভ হলো না। ম্যাচ বের করে নিয়ে আসেন শাদাব খান ও মোহাম্মদ নাওয়াজ। ডেথ ওভারে মোস্তাফিজ মরণ কামড় দিতে পারেননি। আগের দুই ওভারে মাত্র ৩ রান দেওয়ার মোস্তাফিজ শেষ দুই ওভারে দেন ২৩ রান! ১৮তম ওভারে দেন ১৫ রান। দুজনের জুটি থেকে আসে ১৫ বলে ৩৬।

বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র তাসকিন নিয়েছেন দুটি উইকেট। পাঁচ নম্বর বোলার হিসেবে বোলিং করেছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিজে। আমিনুল ইসলাম বিপ্লব দলে থাকলেও তাকে দিয়ে করান কেবল শেষ ওভারটি!

এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল ব্যর্থতায় ভরা। ওপেনিংয়ে পরিবর্তন আসে কিন্তু রানে পরিবর্তন আসে না। শুরুটা সেই আগের মতোই হতশ্রী। টানা খেলা মোহাম্মদ নাঈমও ভরসার প্রতীক হতে পারেননি। নতুন মুখ সাইফ হাসানও রাঙাতে পারেননি অভিষেক ম্যাচ। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে দুটি সেঞ্চুরির মালিক নাজমুল হোসেন শান্তও করেছেন হতাশ।

দুই ওপেনার নাঈম-সাইফ ফেরেন ১ রান করে। স্কোরবোর্ডে রান আর উইকেট সংখ্যা প্রায় যেন সমানই ছিল। এরপর শান্তও ফেরেন দলকে বিপদে ফেলে। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে রান আসে মাত্র ২৫টি। বাংলাদেশ উইকেট হারায় ৩টি।

দ্রুত তিন উইকেট হারালেও ক্রিজে আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থাকায় আশা দেখছিল বাংলাদেশ। আফিফ তার সাবলীল ব্যাটিং করলেও মাহমুদউল্লাহ যেন খোলস থেকে বেরোতে পারেনি। মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে যদিও তিনি আউট হয়েছেন কী না বুঝতে পারেননি। পাকিস্তানের আবেদনে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বাংলাদেশ অধিনায়কের আউটের দৃশ্য। ১১ বলে ৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।

আফিফ ১৯ রানে রিভিউ নিয়ে জীবন পেয়েছিলেন। এরপরই তার ব্যাটে দেখা যায় ঝড়। নাওয়াজকে পরপর ২ ছক্কা মারেন। প্রথমটি লং অফে ও দ্বিতীয়টি বোলারের মাথার উপর দিয়ে। বাংলাদেশ প্রথম ছয়ের দেখা পায় এই ১১তম ওভারেই। ঝড় তুলেও বেশিদূর এগোতে পারেননি। দুটি করে চার-ছয়ে ৩৪ বলে ৩৬ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে।

আফিফের আউটের পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নুরুল হাসান সোহান। প্রথমদিকে তার ব্যাট হাসছিল না। থিতু হতে কিছুটা সময় নিয়েছেন। তিনিও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। শুরুতে ১০ বলে ৭ রান করা সোহান থামেন ২২ বলে ২৮ রান করে। তার ইনিংসে ছয়ের মার ছিল দুটি।

নুরুল চলে গেলেও ক্রিজে থাকা শেখ মেহেদী দারুণ ইনিংস খেলেছেন। ২টি ছয় ও ১টি চারে করেন ২০ বলে ৩০ রান। একপ্রান্তে উইকেট ধরে রাখার পাশাপাশি স্কোরবোর্ডে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন। সোহান ফেরার পর অপর প্রান্তে কাউকে সঙ্গী হিসেবে পাননি মেহেদী।

পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন হাসান আলী। দুটি উইকেট নেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। ১টি করে উইকেট নেন শাদাব খান ও মোহাম্মদ নাওয়াজ।