দীর্ঘ ২০ বছর পর ফার্মেসি ব্যবসায়ী জানলেন তিনি কারারক্ষী

বাংলাদেশে এত ঠক আর প্রতারক কেন? সম্ভবত বেশির ভাগ মানুষ সরল, সোজা, আলাভোলা, আয়োডিনের অভাবে স্বল্পবুদ্ধি বলে এদের মধ্য থেকেই আরেক দল লোক হয়ে উঠেছে প্রতারক।

নতুন খবর হচ্ছে, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের মঈন উদ্দিনের নিয়োগপত্রে ছবি বদলে ২০ বছর ধরে সিলেট কারাগারে কারারক্ষীর চাকরি করছেন কুমিল্লার মঈন উদ্দিন। সম্প্রতি এই জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় তদন্তে নেমেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

হবিগঞ্জ জেলা কারাগার ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের মো. নুর উদ্দিন খানের ছেলে মঈন উদ্দিন খান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে সশরীরে হাজির হয়ে শারীরিক ফিটনেস নিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তাঁকে চাকরিতে যোগদানপত্র পাঠানো হয়নি। যোগদানপত্র না পাওয়ায় মঈন উদ্দিন খান চাকরির আশা না করে মনতলা বাজারে ফার্মেসি দিয়ে ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন। চলতি বছরের ১২ আগস্ট কারারক্ষী ক্রমিক নং-২১৮৬২ মূলে মঈন উদ্দিন খান চাকরি করেন মর্মে শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বরাবর সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে (স্মারক নম্বর-৫৮০০৪.৯১০০.০৬৬.০১.০০১.২০২১-২২২৪) একটি চিঠি আসে। ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খান ওই চিঠি পেয়ে একটি প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে মঈন উদ্দিন খানকে অবগত করেন। ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র পেয়ে মঈন উদ্দিন খান কারারক্ষী পদে চাকরি করেন না এবং তার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে কে বা কারা চাকরি করছেন, এ বিষয়টি অবগত করার জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার নম্বর ৮৬০।

এরপর ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খান ১৬ নভেম্বর সিলেট কারাগারের উপমহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বরাবর একটি প্রত্যয়নপত্র পাঠান। প্রত্যয়নপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, তার ইউপির মঈন উদ্দিন খান একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী। তিনি কারারক্ষী পদে চাকরি করেন না। পরবর্তী সময়ে এ চিঠি পেয়ে সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক এক পত্রে মঈন উদ্দিন খানকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মঈন উদ্দিন খান সিলেট কারাগারের উপমহাপরিদর্শক কামাল হোসেনের কাছে গিয়ে জানান, তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চাকরিতে যোগদানের কোনো কাগজপত্র পাননি। এ সময় তিনি চাকরিতে যোগদানের জন্য লিখিত আবেদন করেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট কারাগারের উপমহাপরিদর্শক কামাল হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য হবিগঞ্জ কারাগারের সুপারকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুয়ায়ী হবিগঞ্জের জেল সুপারের পক্ষে জেলার জয়নাল আবেদীন ভুইয়া চিঠি ইস্যু করে উভয় মঈন উদ্দিন খানকে কাগজপত্র নিয়ে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী শাহজাহানপুরের মো. মঈন উদ্দিন খান এলাকার সাবেক চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কারাগারে হাজির হন। সকাল ১০টা থেকে দিনভর মঈন উদ্দিন খান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেন জেলার জয়নাল আবেদীন ভূঞা। কিন্তু মঈন উদ্দিন খান নাম, ঠিকানা ব্যবহার করে কুমিল্লার যে ব্যক্তি চাকরি করছেন তার হবিগঞ্জ কারাগারে হাজির থাকার নির্দেশনা থাকলেও তিনি কারাগারে হাজির হননি।