দেশ ছাড়তে পারেন মেয়র জাহাঙ্গীর!

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কৃত নেতা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে গুঞ্জন উঠেছে নিজেকে রক্ষায় দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন জাহাঙ্গীর।

একটি সূত্র জানায়, গত ৫ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমের পাসপোর্ট জব্দ করা হলেও সিঙ্গাপুরের সেকেন্ড হোমে যেতে চান তিনি। তবে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানায় একটি সূত্র। ওই সূত্র আরও জানায়, ওপরের নির্দেশনা পেলেই জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হবে। তাকে সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

মামলার বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, জাহাঙ্গীর যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এ প্রসঙ্গে কিছু বলব না। দেশত্যাগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

অন্যদিকে ‘জাহাঙ্গীর আলম পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার!’ এমন খবরে রোববার সন্ধ্যার পর গাজীপুরের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করেছেন। তবে এ বিষয়ে পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, এমন কোনো খবর তার কাছে নেই। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর।

রোববার সন্ধ্যায় মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বাসায় আছি। এখনও গ্রেফতার হইনি। গ্রেফতার হলে মোবাইলে কথা বলছি কীভাবে।’

শুক্রবার আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের পর গাজীপুরের দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশ তার গ্রেফতার ও মেয়র পদ থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিওতে বঙ্গবন্ধু ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোনার পর বহিষ্কারের পরও নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন এখনও জ্বলছে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাকিয়ে রয়েছেন আইনের দিকে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দিকে। কোন প্রক্রিয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলার পর গ্রেফতার করা যেতে পারে বা কোন আইনে মেয়র পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে জাহাঙ্গীর আলমকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাহাঙ্গীরকে কোনোভাবেই মেয়র পদে রাখা যাবে না। তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা। কারণ মেয়র যে দলে থেকে নৌকার প্রতীক পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, সেই প্রতীকের যিনি জনক সেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। ওই সূত্র জানায়, তাকে শিগগিরই গ্রেফতার করা উচিত।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও রাষ্ট্রদ্রোহসহ আরও একাধিক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে গাজীপুরের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে রাস্তা নির্মাণের নামে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর ও দখলের অভিযোগে একাধিক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তা বাড়ানোর নামে জাহাঙ্গীর সাধারণ মানুষের বসতঘর দখল করে নিয়েছেন। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী কারও জমির ওপর অধিক রাস্তা বাড়ানো হলে সিটি করপোরেশন ওই জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম হাজার হাজার একর জমি রাস্তার নামে জোর করে বুলডোজার দিয়ে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে জমি দখল করে নিয়েছেন। কোনো ক্ষতিপূরণ দেননি।

অন্যদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যা মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়া হয়েছে। ওই মামলার চার্জশিট উত্তরার তুরাগ থানা পুলিশ আদালতে দাখিল করলে নিহত দেলোয়ারের স্ত্রী ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছেন। নিহতের স্ত্রীর দাবি, দেলোয়ার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। পরে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে দেয়। দেলোয়ার হত্যার পর বরাবরই নিহতের স্বজনরা বলছিলেন এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নিহত দেলোয়ারের ভাই ওই সময় দাবি করে আসছিলেন, মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ঠিকাদারদের শত-কোটি টাকার ফাইল আটক রাখার কারণে দেলোয়ারের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের একাধিকবার কথাকাটাকাটি হয়।