বিনা টাকায় পুলিশের চাকরি পেল মেয়ে, কাঁদলেন মা

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক পুলিশ বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে৷ গুটিকয়েক পুলিশ সদস্যের নীতিভ্রষ্টতার কারণে এমন অভিযোগ পুরো পুলিশ বাহিনীর উপর এসে পড়ে৷ তবে এর পেছনে নাগরিক সমাজের ভূমিকাও কম দায়ী নয়?

নতুন খবর হচ্ছে, ‘অভাবের কারণে শিশু বয়সেই বড় ছেলে রুবেলকে চায়ের এবং মাইজ্জা (মেঝো) ছেলে রুহুলকে ওয়ার্কশপের কাজে দিয়া দেই। বেতন পাইত না। শুধু দুই বেলা খাওন দিত দোহানের (দোকান) মালিক। আমি কাম লই (গারমেছে) গার্মেন্টে। হেলপারি করতাম। খাইয়া না খাইয়া দিন কাটছে। এত কষ্ট, অভাব-অনটনের মইধ্যেও (মধ্যে) ছোড মাইয়া শিল্পী ও ছোট ছেলে সাগরকে ইসকুলে (স্কুলে) ভর্তি করি। কলেজে ভর্তির পর থাইক্ক্যা মাইয়া বলত পুলিশ অইব। হুনছি বড় আত্বীয়-স্বজন টেহা (টাকা) পয়সা না থাকলে সরহারি (সরকারি) চাকুরি অয় না। তাই মাইয়ার কথা হাইস্সা (হেসে) উড়াইয়া দিতাম। মাইয়া য়ে সত্য সত্য পুলিশ অইব তাও টেহা-পয়সা ছাড়াই কল্পনাও ছিল না। এখন আমাগো আর অভাব-অনটন থাকবো না’।

চোখের পানি মুছছিলেন আর এসব কথা বলছিলেন পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রতনপুর গ্রামের শিল্পী আক্তারের মা রয়েনা বেগম (৪৬)। টাকা ছাড়া চাকরি পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাতে গত রবিবার পুলিশ সুপারের সাথে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করতে আসেন তিনি। সেখানেই মেয়ের পুলিশ হওয়ার গল্প বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন সংগ্রামী ওই নারী।

রয়েনা বেগম বলেন, স্বামী দুলাল মিয়া ছিলেন কৃষি শ্রমিক। ছিলেন আওয়ামী লীগের পাগল। বঙ্গবন্ধু ছিল তাঁর প্রাণ। বিএনপির নামও শুনেতে পারতেন না। ২০০০ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু মৃত্যুবাষির্কীতে সারাদিন অনুষ্ঠানে কাজ করেন। রাতে বাড়ি ফিরে স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে যান। ওই সময় সম্পদ বলতে ছিল বাড়িভিটা। স্বামীর চিকিৎসায় তাও বিক্রি করে দিতে হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর দেড় শ টাকা ভাড়ায় থাকতেন খুপরির মতো একটি ঘরে। ২০০৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে বড় মেয়ে ইয়াসমিনকে বিয়ে দিয়ে যান দুলাল মিয়া। তখন বড় ছেলে রুবেলের বয়স ছিল বারো, মেঝো ছেলে রুহুলের দশ, শিল্পির চার এবং ছোট ছেলে সাগরের বয়স ছিল মাত্র ৪০দিন। স্বামীর মৃত্যুর পর ৪ শিশু সন্তান নিয়ে শুরু হয় তাঁর জীবন সংগ্রাম।

জীবন সংগ্রামের কাহিনী বলতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন অকাল বিধবা ওই নারী। জানান, দুই ছেলেকে দোকানের কাজে দিয়ে তিনি কাজ নেন একটি পোলট্রি ফার্মে। ফার্মের কাজ ছিল অনেক কষ্টের। মুরগির বিষ্টা পরিষ্কার করতে হতো। তার চেয়ে বেশী কষ্ট হতো ৪০ দিনের ছেলেটাকে দোলানায় শুয়ে রেখে কাজে আসতে।

বলেন, ‘সারাদিন কাঁদতাম আর কাজ করতাম। দুই বছর পর কাজ নেই গার্মেন্টে। বেতন পেতাম ১২’শ টাকা। কোনো রকমে চলতো সংসার। এখন দুই ছেলে নিজেরা দোকান দিয়েছে। কিছু টাকা জমিয়ে কয়েক শতাংশ সরকারি জমিতে ঘর তুলে কোনো রকমে দিন পার করছেন। কোনো দিন বাঁচ্চাদের ভালো কিছু খেতে দিতে পারিনি। কষ্টে বুক ফেটে গেছে। মেয়ের পুলিশের পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ও যেতে না করেছিলাম। শুনেনি। মেয়ে বলেছিল ‘‘একজনেরও যদি মেধায় হয়, তাহলে আমার চাকুরি হবে’’।