ব্রিটিশ এমপির বক্তব্যের জবাব দিলেন মিজানুর রহমান আজহারী

গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ এমপি ব্ল্যাক ম্যান ব্রিটেনের পার্লামেন্টে বক্তব্য দিতে গিয়ে মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনি বাংলাদেশে ঘৃণা ছড়িয়ে নিষিদ্ধ হয়ে দেশ ছেড়েছেন।’ এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন মিজানুর রহমান আজহারী। তার ভেরিফাইড ফেসবুক থেকে এই বক্তব্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-

” ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমরা শান্তির বাণীবাহক’

ইসলামের বাণী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য। ইসলামের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। বিশ্বনবী (সা.‬) সবার জন্য রহমত। পবিত্র কুরআন সবার জন্য উপদেশ। এটি একটি ইউনিভার্সাল ম্যাসেজ। এই ম্যাসেজ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে যারা আত্মনিয়োগ করবেন— তাঁরাও ইউনিভার্সাল ইমেজ লালন করবেন। তাই ইসলামের এ শান্তির পয়গাম সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়াই আমাদের মিশন। আর এ পয়গামেই রয়েছে আপনার আমার আলোকস্নাত মুক্তি।
ইউকে পার্লামেন্টের হাউ অব কমন্স-এ গ্রেটার লন্ডনের নির্বাচনী এলাকা ‘হারো ইস্ট’ এর কনজার্ভেটিভ পার্টির এমপি ‘বব ব্ল্যাকম্যান’ আমাকে হেইট প্রিচার আখ্যা দিতে গিয়ে কিছু মিসলিডিং ইনফো শেয়ার করেছেন।

আমি সাধারণত আমাকে নিয়ে কটুক্তি কিংবা সমালোচনা- এসব বিষয়ে খুব একটা মনোযোগ দেই না। শুধুমাত্র গঠনমূলক সমালোচনা হলে সেটাকে ওয়েলকাম করি। কিন্তু তিনি তার বক্তব্যে কিছু অসত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন- আমাকে বাংলাদেশে ব্যান করা হয়েছে এবং আমি নাকি দেশ থেকে পালিয়ে গেছি। আমি তার এই মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সরকার আমাকে ব্যান করেছে তার কোন প্রমাণ কি তিনি হাজির করতে পারবেন? না, পারবেন না। সরকার তো শত শত পুলিশ দিয়ে আমার প্রোগ্রামকে সফল করেছে। সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা আমার বিভিন্ন প্রোগ্রামে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই আমার প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। তাদের সকলের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।

তাহলে, আমি ২০২০ সালের বাকী প্রোগ্রামগুলো স্থগিত করে মালয়েশিয়া চলে আসলাম কেন? সেটা আমি আগেও বলেছি। আর তা হলো- আমাকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মাতামাতি, হইচই, প্রোগ্রামস্থলে ধারণ ক্ষমতার বাইরে উপস্থিতি, বেসামাল ক্রাউড এবং কিছু আল্লাহর বান্দার প্রতিহিংসাপরায়ণতা। এসব যখন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছিল তখন কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে সকল প্রোগ্রাম স্থগিত করে পুনরায় পিএইচডি গবেষণার কাজে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে তথা মালয়েশিয়ায় সাময়িকভাবে ফিরে আসি।

বাংলাদেশ আমার দেশ। আমি এদেশের সন্তান। করোনার কারণে গত বছর দেশে যেতে পারিনি। ইতিমধ্যে আমি ফ্যাকাল্টিতে পিএইচডি থিসিস সাবমিট করেছি। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন শেষে, শীঘ্রই আমি দেশে ফিরব ইনশাআল্লাহ।

২০১৩ সাল থেকেই আমি মালয়েশিয়াতে থাকি। তখন থেকেই নিয়মিত দেশে যাওয়া-আসা করি। তাই ২০২০ সালে হঠাৎ করে আমি মালয়েশিয়াতে পালিয়ে আসার কথাটা বড্ড বেমানান ও হাস্যকর। ব্রিটিশ এমপি ভালোভাবে পেপার ওয়ার্ক না করেই মন্তব্য করে ফেলেছেন। কেউ হয়তো উনার কান ভারী করেছেন আর উনি সেটাই বলে দিয়েছেন। এরকম উচ্চ পদ মর্যাদার অধিকারী কোন লোকের মুখে এমন অসত্য বক্তব্য কাম্য নয়।

সম্প্রতি লন্ডনে একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে গিয়ে কাতারেই আমাকে থেমে যেতে হয়। ভিসা দিয়েও যুক্তরাজ্যের হোম অফিস আমার যুক্তরাজ্য প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে কাতারে আমাকে সাময়িক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। আপনাদের সবাইকে শুকরিয়া জানাচ্ছি। আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমি ভালো আছি, নিরাপদে আছি।

আমরা হোম অফিসের এই অনাকাঙ্ক্ষীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল রিভিউর জন্য যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে আপিল করেছি। শীঘ্রই শুনানির দিন তারিখ ধার্য করা হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমত আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

ইউকের ভাইয়েরা একটি পিটিশন তৈরি করেছেন। দয়া করে সবাই পিটিশনে স্বাক্ষর করুন। এটা রিভিউতে আমাদের পক্ষে বেশ কাজে দিবে। সত্যের একটা আলাদা শক্তি আছে। সে শক্তিটা আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজে লাগাতে চাই।”