সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক, ধর্ষণ নয়: বিচারক

বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ বাদ যায়নি প্রতিবন্ধী কিংবা ছয় বছরের শিশুও৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে এসব নারী ও শিশুকে৷ বিচার না হওয়াকে এই পরিস্থিতির জন্য দুষছেন মানবাধিকারকর্মীরা৷

নতুন খবর হচ্ছে, ‘দুই ভিকটিম স্বেচ্ছায় রেইনট্রি হোটেলে যায়। সেখানে নিজেদের ইচ্ছায় তারা সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। তাদেরকে ভয়ভীতি বা মারধর করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করা হয়নি। স্বেচ্ছায় তারা আসামিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান।’

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে একথা বলেন বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা ফাইল করা হয়। ৩৯ দিন পর করা হয় মেডিক্যাল। ভিকটিমদের পোশাকে ধর্ষণর আলামত পাওয়া যায়নি। ধর্ষণ প্রমাণে মেডিক্যাল লাগে সেটাও প্রমাণিত হয়নি। বীর্যের উপস্থিতিও পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘ভিকটিমরা স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়ে ইচ্ছে করে আসামিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। পরবর্তীতে ৩৮ দিন পর আসামি সাফাত আহমেদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার প্ররোচনায় মামলা করেন। ধর্ষণের উপাদান না পাওয়ার পরও পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে অহেতুক ট্রায়ালে পাঠায়। মামলাটির বিচারকাজ এ আদালতে চলেছে ৯৩ কার্যদিবস। আজ ৯৪তম কার্যদিবস। এতে আদালতের সময় নষ্ট হয়েছে।’

বিচারক বলেন, ‘মামলায় যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আগে থেকেই ভিকটিমরা ফিজিক্যাল রিলেশনে অভ্যস্ত ছিল। তারা তাদের বয়ফ্রেন্ডদের সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশনে যান। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই আসামিদের খালাস দেওয়া হলো।’

এরআগে আদালত বেলা ১টা ১০মিনিট থেকে রায় পড়া শুরু করেন। শুরুতে বিচারক বলেন, ‘আমি একজন বিচারক। সবকিছু আমাকে পুঙ্খানুপঙ্খভাবে দেখতে হয়েছে। এজাহার, চার্জশিট, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হয়েছে। নরমাল মামলায় এত কিছু বলতে হয় না। আপনারা (আইনজীবীরা) এ মামলাকে বলেন আলোচিত মামলা। আমি এটা মনে করি না। আমার কাছে সব মামলায় সমান। এ মামলায় ৪০ জন সাক্ষির মধ্যে ২২ জন সাক্ষ্য দেন। ১১ জন সাক্ষি রেইনট্রি হোটেলের কর্মচারী। তারা কেউ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানত না। পুলিশের মাধ্যমে তারা ঘটনা জানে।’

বিচারক বলেন, ‘মামলার এজাহারে বাদী সাফাতের স্ত্রী পিয়াসাকে খালাতো বোন হিসেবে পরিচয় দেন। পরবর্তীতে তিনি বলেন, আসলে পিয়াসা তার খালাতো বোন না। এজাহারে তিনি মিথ্যা বলেছেন বলে উল্লেখ করেন। মামলার বাদীর সাক্ষ্য থেকে দেখা যায়, কখন, কোথায়, কীভাবে, কোন রুমে তাদের ধর্ষণ করা হয় সে সম্পর্কে তারা কিছু বলেননি।’
বিচারক বলেন, ‘এ মামলায় সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ ও বিল্লাল হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবনাবন্দি দিয়েছে। এদের মধ্যে সাদমান ও বিল্লাল ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে তা উঠে আসেনি। আর সাফাত বলেছে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে তারা শারীরিকভাবে মিলিত হয়। বিষয়টি ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে কি না? তবে নাঈম আশরাফ একজনকে জোর করে ধর্ষণ করে। সাক্ষি দ্বারা তা প্রমাণিত হয়নি। ভিকটিমদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে, তবে ধর্ষণ না।’