হারাম উপার্জন জান্নাতে প্রবেশের অন্তরায়

ইসলামে বৈধ উপায়ে জীবিকা উপার্জন করা অপরিহার্য। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে উপার্জনের বৈধ ক্ষেত্রকে ‘আত-তায়্যিবাত’ বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা হালাল বস্তু গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে রাসুলরা, তোমরা হালাল পবিত্র উত্তম রিজিক খাও আর সৎকর্ম কোরো।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, আমি যে জীবিকা তোমাদের দিয়েছি তা থেকে পবিত্রগুলো আহার কোরো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)

ইসলামী শরিয়ত মুমিনের জন্য বৈধ উপায়ে জীবিকা উপার্জনকে অপরিহার্য করেছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘হে লোকেরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কোরো এবং বৈধ উপায়ে জীবিকা অর্জন কোরো। কেননা কোনো প্রাণীই তার নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও কিছু বিলম্ব ঘটে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কোরো এবং সত্ভাবে জীবিকা অর্জন কোরো। যা হালাল তাই গ্রহণ কোরো এবং যা হারাম তা বর্জন কোরো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৪৪)

উপার্জনের উৎস হালাল হওয়া বিষয়ে সাহাবিরা অত্যন্ত সর্তকতা অবলম্বন করতেন। ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকরের (রা.) নিম্নোক্ত ঘটনাটি তারই একটি উদাহরণ।

আবু বকরের (রা.) নিয়ম ছিল, গোলাম খাবার নিয়ে এলে তিনি প্রথমে সেই খাবারের উৎস জিজ্ঞাসা করতেন। জেনে নিতেন—কোথা থেকে এসেছে এই খাবার? একদিন ঘটল ব্যতিক্রম ঘটনা। গোলাম খাবার নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি খেতে বসে যান। একবার জিজ্ঞাসাও করলেন না, কোথায় পেয়েছে সে এই খাবার? গোলাম নিজেও ব্যাপারটায় অবাক হয়। বিস্ময় চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞাসাই করে ফেলল ব্যাপার কী? প্রতিদিন আপনি খাওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করেন, এই খাবার আমি কোথা থেকে এনেছি। আজ জিজ্ঞাসা করেননি কেন?

আবু বকর (রা.) বলেন, প্রচণ্ড ক্ষুধার কারণে জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছি। এখন বোলো কোথা থেকে এনেছ? গোলাম বলল, জাহেলি যুগে একবার আমি মন্ত্র পড়ে একজনকে সুস্থ করেছিলাম। সে কথা দিয়েছিল, বিনিময়ে আমাকে কিছু দেবে। আজ তার বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি, সেখানে বিয়ের আয়োজন চলছে। সেই বিয়ের খাবার এগুলো।

আবু বকর (রা.) শুনে বলেন, সর্বনাশ! তুমি তো আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছ! এরপর তিনি গলার মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছিল না। তখন একজন পরামর্শ দিল, গলায় পানি দিয়ে এরপর চেষ্টা করুন কাজ হবে। পরামর্শ মতে তিনি সেভাবেই চেষ্টা করেন। এতে কাজ হয়। বমির সঙ্গে খাবারগুলো বের হয়ে আসে। কেউ একজন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, সামান্য খাবারের জন্য এত কিছু? তিনি বলেন, যদি এই খাবার বের করার জন্য আমার জানও বের করা লাগত তাহলে আমি তাই করতাম। কেননা আমি নবীজিকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘যে দেহ হারাম খাবারের মাধ্যমে বেড়ে ওঠে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই হলো সবচেয়ে উপযুক্ত।’ (সিফাতুস সফওয়া, পৃষ্ঠ ৯৮)

বস্তুত হালাল উপার্জন বিষয়ে আবু বকর (রা.)-এর মনন গঠনে নবীজির (সা.)-এর সুন্নাহই ছিল মূল প্রভাবক। নবীজি (সা.) বলেন, ‘হারাম দ্বারা পুষ্ট দেহ জান্নাতে যেতে পারবে না। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৫৭৫৯)

বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর জন্য হালাল উপার্জনের বিষয়ে অধিক সর্তকতা কাম্য। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের সম্মুখে এমন এক যুগ আসবে যে কেউ পরওয়া করবে না কি উপায়ে সম্পদ লাভ করল; হারাম না হালাল উপায়ে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৩১)