দাম না কমলে মুরগি ও মাংস বিদেশ থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত

দেশের বাজারে ক্রমাগত বেড়েই চলছে ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। অস্বাভাবিক দাম সহনীয় পর্যায়ে না এলে প্রয়োজনে তা বিদেশ থেকে আমদানির সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তাতেও কাজ না হলে দায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে নিত্যপণ্যের দাম পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এদিকে দামে লাগাম টানতে দেশের শীর্ষ চার করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে ডেকে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১৯০-১৯৫ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এতে খুচরায় ব্রয়লার মুরগির দাম কোনোভাবেই ২২০ টাকার বেশি হবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সকালে নিত্যপণ্যের দাম ও মজুত পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ডাকে এফবিসিসিআই।

এ সময় সংগঠনের সভাপতি জসিম উদ্দিন দুবাইয়ের গরুর মাংসের দামের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘দেশটিতে গরু পরিপালন হয় না। তারপরও তারা আমদানি করা মাংস ৫০০ টাকায় বিক্রি করে। তাহলে আমাদের দেশে কেন ৭৫০ টাকায় কিনতে হবে? ব্রয়লার মুরগির দাম এখন ২৮০ টাকা। এখন যদি সরকার মনে করে আমদানি করলে দাম কম পড়বে, তাহলে আমদানি করবে।’

সংগঠনের সভাপতি আরও বলেন, বর্তমানে গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এত দিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন যদি তাঁরা সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে শিল্পের কথা চিন্তা করে লাভ নেই।’

তিনি জানান, খেজুর, চিনি ও ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যও পর্যাপ্ত রয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কথায় উঠে এসেছে। তাহলে দাম বাড়ার কথা নয়। এরপরেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্য মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যেন কেউ দাম বাড়াতে না পারেন সে জন্য বাজার মনিটরিং করা হবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না রোজায় দাম বেশি নেওয়ার কারণে কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক বা কাউকে আটক করা হোক।

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, কেউ যদি অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ায় তাহলে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হবে। বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগির যে দাম তা অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে ডিম ও ব্রয়লার মুরগি আমদানি করার উদ্যোগ নেবে সরকার।

মতবিনিময়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পোলট্রিশিল্পে খাবারের উচ্চমূল্য নিয়ে বাংলাদেশ ভুট্টা সমিতির সহসভাপতি মো. মিজানুল হক বলেছেন, ব্রয়লার খাদ্যের ৮০ শতাংশ আসে ভুট্টা থেকে। ভুট্টার দাম কেজিতে এক সপ্তাহে ৬ টাকা কমেছে। আশা করা যায় যে, সামনে ৩২ টাকা কেজি হবে। আর নতুন বছরের ফসল তোলা শুরু হয়েছে। এবারে মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে। সেই হিসাবে ফিডের দাম বৃদ্ধির নামে ব্রয়লারে দাম বৃদ্ধির সুযোগ নেই।এ সময় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, কেউ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। কেউ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ‘বর্তমানে সরকারের ১২টা সংস্থা বিক্ষিপ্তভাবে অভিযান পরিচালনা করায় একধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এখন একটি মুরগি ৩০০ টাকায় কিনছি। তাহলে বিক্রি হবে কত? এর আগে রেস্তোরাঁয় কুকুর ও গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এটা কি করে সম্ভব? এবার হয়রানি বন্ধ করা না হলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হবে।’ মতবিনিময়ে এফবিসিসিআই সহসভাপতি এম এম মোমেন, মো. আমিন হেলালীসহ অন্য পরিচালক ও বিভিন্ন সমিতি ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।