বাংলাদেশের কাছে হেরে উইকেটের দোষ দিল ইংল্যান্ড

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারানোর আনন্দ পেল সাকিব আল হাসানের দল। বল হাতে হাসান মাহমুদদের মিতব্যয়ী বোলিংয়ের পর শান্ত ও সাকিবের ব্যাটে ভর করে ৬ উইকেটের জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ১৫৬ রান করে ইংল্যান্ড। তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জিতে মাঠ ছাড়ে।

এদিকে ম্যাচ হেরে সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন ইংলিশ ওপেনার ফিল সল্ট। জানিয়েছেন, ইংল্যান্ড আরো বড় স্কোর গড়তে পারতো। সল্ট বলেন, ‘আমরা ইনিংস আরও ভালোভাবে শেষ করতে পারতাম। টি-টোয়েন্টিতে টানা দুই বলে উইকেট হারানো সব সময়ই আঘাত করে, দুজন নতুন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা সব সময়ই কঠিন। তবে এটিই খেলার অংশ। অন্য কোনো দিন হয়তো আমরা ১৮০ রানে শেষ করতাম। আজ সেটি হয়নি।’

তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে হারায় ফিল সল্ট দায় দেখছেন চট্টগ্রামের উইকেটের। সল্ট জানান, আমাদের ব্যাটিংয়ের সময় শুরুতে উইকেট মন্থর ছিল। কিন্তু আমাদের বোলিংয়ের সময় গতি বেড়েছে উইকেটের। বাংলাদেশ এই বিষয়টিকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমি বলব, উইকেট ভালো হয়ে গিয়েছিল। তিনি আরও যোগ করেন, খেলা যত এগিয়েছে, উইকেট তত ভালো হয়েছে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, ফ্লাডলাইট জ্বলে ওঠার পর উইকেট ভালো হয়ে গিয়েছিল। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের কন্ডিশনে খেলা কতটা কঠিন, তা আমরা জানি। তাই বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে।

রান তাড়ার সময় শান্তর ইনিংসটিকে টার্নিং পয়েন্ট বলেছেন ফিল সল্ট। তার ধারণা, ‘শান্তর ব্যাটিংয়েই ম্যাচ ঘুরে গেছে। যেই এসেছে, ওভারের শুরুতে বাউন্ডারির দেখা পেয়েছে নিয়মিত। সিঙ্গেল-ডাবলসও ভালোভাবে নিয়েছে। আমার মনে হয়, ওরা এখন ড্রেসিংরুমে বসে ভাবছে, এমন কন্ডিশনে এটিই পারফেক্ট রান তাড়া, যেটি তারা চায়।

এর আগে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন শান্ত। এ ছড়া তৌহিদ হৃদয় ২৪ ও রনি তালুকদার ২১ রান করেন। শান্ত-হৃদয়ের জুটি বাংলাদেশকে জয়ের ভিত গড়ে দেয়। মাত্র ৩৯ বলে ৬৫ রান আসে এই জুটি থেকে। এরপর সাকিব-আফিফের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশ জয় নিশ্চিত করে। দুজনের জুটি থেকে আসে ৩৪ বলে ৪৬ রান। সাকিব ৩৪ ও আফিফ ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন উড-আর্চার-মঈন-রশিদ।

এর আগে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন বাটলার। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের শুরুটা স্পিনার নাসুম আহমেদকে দিয়ে। প্রথম ওভারেই ৯ রান খরচ করেন এই বাঁহাতি বোলার। সাফল্য পেতে নাসুমের পরই দ্বিতীয় ওভারে তাসকিন ও তৃতীয় ওভারে মুস্তাফিজকে আক্রমণে আনেন সাকিব। যদিও তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জস বাটলার ও ফিল সল্ট শুরুটা করেন দেখেশুনেই। দলীয় ৪৫ রানেই ইংলিশদের প্রতিরোধ ভাঙার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে নাসুমের বলে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আর এই সুযোগে এই প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ইংলিশদের সংগ্রহ ৫১ রান।

এরপর আরও আক্রমণাত্নক হয়ে ওঠে ইলিংশরা। ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলে ৮০ রান। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সাফল্য এনে দেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। দলীয় ৮০ রানে ৩৮ রান করা সল্টকে ফেরান নাসুম। এরপর উইকেটে আসেন ডেভিড মালান। তাকে খুব বেশিক্ষণ উইকেটে থিতু হতে দেননি সাকিব। দলীয় ৮৮ রানে মালানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ দলে স্বস্তি এনে দেন সাকিব। তবে এরপরই ডাকেটকে নিয়ে নতুন করে পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন বাটলার। এই দুইজনের ৪৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলে ইংল্যান্ড। দলীয় ১৩৫ রানে ডাকেটকে ফিরিয়ে স্বস্তি ফেরান মোস্তাফিজ। মুস্তাফিজের পরই বাটলারকে ফেরার হাসান মাহমুদ। ৪২ বলে ৬৭ রান করেন বাটলার। এরপর হাসান মাহমুদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের বড় স্কোরের আশায় লাগাম টানে বাংলাদেশ। শেষমেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রানের বেশি তুলতে পারেনি সফরকারী ইংল্যান্ড