নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভিভো মোবাইলের কারখানায় বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। বেতন না দিয়ে ‘মারধর’ করে শ্রমিক বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভিভো মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভিভো মোবাইলের একটি কারখানায় শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে । এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা কারখানার বিক্ষোভ ও অবস্থান করেছে।
শুভ নামে এক শ্রমিক জানান, ভিভো মোবাইল ফ্যাক্টরিতে নিজের ইচ্ছা মতো যখন ইচ্ছা শ্রমিক নিয়োগ দেয় আবার যখন ইচ্ছা শ্রমিক বের করে দেয়। এরকম একজন শ্রমিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যানান “তিন মাসের স্যালারি না দিয়ে কাজ করিয়েছে এবং তিন মাসের বেতন ভাতা প্রদান না করেই বের করে দেওয়া হয়েছে অনেক শ্রমিককে।
কালকে একটু প্রতিবাদ হয়েছে আজকে সকালে ২৬ জন শ্রমিককে বের করে দিয়েছে ।”
সাদ্দাম নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, আমি ফ্যাক্টরিতে কাজ করছি বেশকিছুদিন ধরে । এখানে শ্রমিকদের চাকুরি নিয়ে খুব চিন্তায় থাকতে হয় । আমরা আমাদের বেতন বোনাস নিয়ে কারখানার শান্তিপূর্ণ ভাবে কথা বলি কিন্তু বাসায় আসতে আসতে আমাকে সহ বেশ কিছু জন কে জানানো হয় যে আমাদের আর কাজে আসতে হবে না ।
মনোয়ার নামে একজন সাবেক কর্মী জানান, গত বছর আমি সহ আরো বেশ কয়জন চাকরি ছেডে দিতে বাধ্য হই । কারখানাতে একটি বিশেষ নিয়ম তারা ফলো করে । তারা নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে গনহারে কর্মী ছাটাই করে কারণ সেই সময় চায়নাতে হলিডে থাকে আর তখন তেমন কোন ফোন বাজারে আসে না। আবার নতুন করে ফেব্রুয়ারি মাসে তারা নিয়োগ দেয় এতে করে তাদের বিশাল অংকের টাকা বাচায় আর সাধারন কর্মীরা হঠাৎ কাজ হারিয়ে দিশে হারা হয়ে যায়।
বাংলাদেশের শ্রম আইন কি বলে:
বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা-২(১১) অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অপ্রয়োজনীতার কারনে মালিক শ্রমিকে ছাঁটাই করতে পারবেন। চাকুরীর বয়স ১ বছর বা এর বেশি হলে উক্ত কর্মীকে ছাঁটাইয়ের ক্ষেএে ১ মাসে নোটিশ প্রদান করতে হবে বা নোটিশ এর পরিবর্তে ১ মাসের মূল মজুরী প্রদান করতে হবে। এছাড়াও প্রতি বছরের কাজের জন্য ১ মাস করে মূল মজুরী প্রদান করতে হবে।
ভিভো যা জানায়…
অভিযোগটি সঠিক নয় এবং ভিভো শ্রম আইনের কোনো ধারার লঙ্ঘন করেনি। যেসব কর্মী অভিযোগটি করছেন তারা ফ্যাক্টরির নিয়মিত কর্মচারি নন, থার্ড পার্টি রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে চুক্তির আওতায় ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসাবে ফ্যাক্টরিতে কাজ করছিলেন। সম্প্রতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ি রিক্রুটিং এজেন্সিকে তাদের সার্ভিস এরিয়া কিছুটা কমাতে বললে, তারা তাদের কিছু কর্মচারিকে বাদ দেয়। উল্লেখ্য বাংলাদেশে অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানে থার্ড পার্টি থেকে চুক্তিভিত্তিতে বিভিন্ন সেবা ক্রয় করে থাকে। এটিও তারই একটি অংশ। এখানে রিক্রুটিং এজেন্সি স্বাধীনভাবে তাদের নিজস্ব পলিসি দ্বারা পরিচালিত হয়। ফ্যাক্টরি রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। রিক্রুটিং এজেন্সি তার কর্মচারীর সব অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। এখানে ফ্যাক্টরির কোনো কর্তৃত্ব নেই। সম্প্রতি যে অভিযোগ উঠেছে তাতে কারখানার শ্রম আইনের কোন লঙ্ঘন হয়নি। কারখানা সব সময় শ্রম আইনের নিয়ম-নীতি মেনে চলে।
ভিভো বলছে বাংলাদেশে অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানে থার্ড পার্টি থেকে চুক্তিভিত্তিতে বিভিন্ন সেবা ক্রয় করে থাকে । কিন্তু বাংলাদেশে বেশি কিছু মোবাইল কারখানায় খোঁজ নিয়ে জানা তাদের প্রোডাকশন কমে গেলেও শ্রমিক বের করে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও আরো জানা যায় কারখানায় থার্ড পার্টি রিক্রুটার দিয়ে কাজ করানোর কোন নীতিমালা নেই যেটা আছে সেটা হলো থার্ড পার্টি দিয়ে ব্র্যান্ড প্রমোটোর দের কে চাকরি দেওয়া হয় এবং সেটা শুধুমাত্র দোকানের সেলস বাড়ানোর লক্ষ্যে। ভিভোর এরকম অনেক আউটলেট ঘুরে দেখা গেছে এখনো অনেক ব্র্যান্ড প্রমোটোরও বেতন বা অন্যান্য ভাতা পায়নি বোনাস তো দূরের বিষয়।
উঠতি অর্থনীতির দেশ হিসেবে গ্রাহক ধরতে বাংলাদেশে স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু করেছিল চীনা কম্পানি ভিভো। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মোবাইল উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ভিভো কারখানা শুরুর পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠতে শুরু করে। শুল্ক্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের একটি দল অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো দুনিয়ায় জনপ্রিয় ক্যাসিনোর অত্যাধুনিক টেবিল, যা ‘মাহাজং’ নামে পরিচিত তা উদ্ধার করে।
বাংলাদেশে কি ভিভোর নিজস্ব মোবাইল কারখানা আছে? এই প্রশ্নের জবাবে ভিভোর উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে তাদের মোবাইল কারখানার বিষয় জানতে চাইলে কেউ কোন কথা বলতে চাননি। দেশের সরকারি বিভিন্ন সহায়তা ও ৫৮.৬ শতাংশ ভ্যাট ফাকি দিতেই এই কারখানার সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন মহলে।