শবে বরাতের রাতেও যাদের ক্ষমা করবেন না আল্লাহ

‘শবে বরাত’ ফারসি ভাষার শব্দ। শব মানে রাত; আর বরাত মানে মুক্তি। কোরআন-হাদিসে ও তাফসিরের গ্রন্থগুলোতে শবে বরাত শব্দটি নেই। তবে ভিন্ন নামে, ভিন্ন শব্দে ও ভিন্ন পরিভাষায় এই রাতের আলোচনা এসেছে। কোরআনের পরিভাষায় শবে বরাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ বলা হয়। হাদিসের ভাষায় বলা হয়- ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ১৫ শাবানের রাত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে অভাব-অনটন, রোগ-শোক, বিপদ-আপদ ও গুনাহ থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিকহের কিতাবে শবে বরাতের অনেক নাম এসেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— লাইলাতুল বারাআহ বা মুক্তির রাত। লাইলাতুর রহমাহ বা রহমতের রাত। লাইলাতুল কিসমাহ বা ভাগ্যরাত। লাইলাতুল আফভি বা ক্ষমার রাত। লাইলাতুত তাওবাহ বা তাওবার রাত। লাইলাতুল ইতক বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত। লাইলাতুত দোয়া বা প্রার্থনার রাত নামেও শবে বরাতকে অভিহিত করা হয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াজি : ৩/৩৬৪; হাশিয়াতুস সিনদি : ১/৪২২; উমদাতুল কারি : ২/১৭; ফয়জুল কাদির : ২/২৬৩)

শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে অনেকগুলো হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘এমন পাঁচটি রাত রয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না। সেই রাতগুলো হলো, জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, দুই ঈদের রাত।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৬০৮৭; শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৪০; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯২৭)

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন— রাসুল (সা.) এই রাতে মদিনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি বলেন, এই রাতে কালব গোত্রের বকরির পশমের সংখ্যার চেয়েও বেশিসংখ্যক বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
(তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৯, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৫৪৪)

যাদের ক্ষমা করা হবে না- বহু হাদিসে এসেছে, শবে বরাত ক্ষমার রাত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু এরপরও কিছু লোক আছেন, যাদের আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। এই রাতে তাদের ভাগ্যে ক্ষমা নেই। কিন্তু কারা তারা?

মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) সূত্রে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মধ্য শাবানের রাতে, অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক, হিংসুক ও বিদ্বেষী লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৬৫; আল মুজামুল কাবির : ২০/১০৯; শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৬৬২৮)