মানুষ মানুষের জন্য। পৃথিবীতে ঋণ করেনি এমন মানুষ খুবই কম। নবীজিও ঋণ করেছেন। জীবনের তাগিদে ঋণ তো করতেই হয়, তবে ঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে রাসুল সা. বারবার সতর্ক করেছেন। তা ছাড়া যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের ফজিলতও রয়েছে।
রাসুল সা. ঋণ যথাসময়ে আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধ করে দেয়ার নিয়তে কারও কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহ তাআলা তার পক্ষ থেকে তা আদায় করে দেন।’ (বুখারি হাদিস ২৩৮৭)
যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ ওয়াদা রক্ষা করার নামান্তর। সময়মতো যেন ঋণ পরিশোধ করে দেয়া যায় এ জন্য হাদিসে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। রাসুল সা. ঋণ আদায় করার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে উহুদ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন,
‘আমি চাই না উহুদ পাহাড় আমার জন্য স্বর্ণে পরিণত করে দেয়া হলেও এর একটি দিনার আমার নিকট তিন দিনের বেশি সময় থাকুক; হ্যাঁ, যদি কোনো দিনার আমি আমার ঋণ পরিশোধের জন্য রেখে দিই সেটা ভিন্ন।’ (বুখারি হাদিস ২৩৮৮)
যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ না করলে রাসুল সা.-এর হুঁশিয়ারি রয়েছে। নবী কারিম সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে মানুষের সম্পদ গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেন। আর যে তা বিনষ্ট করার নিয়তে গ্রহণ করে থাকে, আল্লাহ তাকে বিনষ্ট করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস ২৯১০) রাসুল সা. আরও বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ করা ছাড়া মৃত্যুবরণ করলে হাশরের মাঠে নিজের নেকি থেকে ঋণের দাবি পূরণ করতে হবে।’ (বুখারি, হাদিস ২৪৪৯)
অন্য হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ‘মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয় তার ঋণের কারণে, যতক্ষণ-না তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস ১০৭৮)
ঋণ পরিশোধ না করে শহিদ হলেও জান্নাতে যেতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাসুল সা.। তিনি বলেন, সুবহানাল্লাহ! ঋণ প্রসঙ্গে কী কঠোর বাণীই-না আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। যার হাতে আমার জীবন তার শপথ, ঋণগ্রস্ত অবস্থায় কেউ যদি আল্লাহর পথে শহিদ হয়, তারপর জীবিত হয়, তারপর শহিদ হয়, তারপর জীবিত হয়, তারপর আবার শহিদ হয়, তবু ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (নাসাঈ, হাদিস ৪৬৮৪)
সুতরাং আমাদের উচিত আখিরাতে মুক্তির স্বার্থে ঋণ পরিশোধের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাওয়া এবং মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা। ঋণমুক্তির দোয়া হচ্ছে, ‘আল্লা-হুম্মাকফিনি বিহালা-লিকা আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়া-ক।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন!’
রাসুল সা. বলেন, ‘এই দোয়ার ফলে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬৩)

ডেস্ক রিপোর্ট 

























