ঢাকা , সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
মেহেরপুরে খোকসা যুব সংঘের কমিটি গঠন: সভাপতি হামিদুল, সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা নাটোরে জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি-জাতীয় পার্টির ৫০ নেতাকর্মী বরিশালে জামায়াত নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা মেহেরপুরে পদ্মফুল তুলতে গিয়ে একই পরিবারের চার শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু বিএনপির পাঁচ নেতাকে সব পদ থেকে বহিষ্কার ‘ফজু পাগলা’ উপাধিতে গর্বিত বিএনপি প্রার্থী ফজলুর রহমান: বলেন, আমার জন্য সারা দেশের মানুষ পাগল গৌরীপুরে সংঘর্ষের জেরে বিএনপির ৫ নেতা বহিষ্কার জিয়া পরিবারের আদর্শ ধরে রাখতে জীবন দিতেও পিছু হটবো না: এস এম জাহাঙ্গীর শাপলাকলি’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে এনসিপি: জনগণের রাজনীতি গড়ে তুলতে আহ্বান নাহিদ ইসলামের গৌরীপুরে বিএনপির মনোনয়ন দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত অন্তত ৪০

ঘর আর নেই, তবু ঘরে ফিরছে গাজাবাসী

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১০:৪৫:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৪৯ বার পড়া হয়েছে

গাজায় দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অবশেষে শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি। যুদ্ধবিরতি শুরু হতেই ফিলিস্তিনিরা দলে দলে ফিরতে শুরু করেছেন নিজেদের ভিটেমাটিতে—যে ভিটেমাটির অধিকাংশই আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। তবুও, তাদের চোখে এখন একটিই আশা—শান্তি ফিরবে, হয়তো এবার স্থায়ীভাবে।

 

 

দুই বছর আগে শুরু হওয়া এই বিধ্বংসী যুদ্ধে গাজাবাসীর জীবনে এসেছে অগণিত মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি ও ধ্বংস। অনেকেই নিজেদের ঘরবাড়ি একাধিকবার ছেড়ে গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। এখন সেই মানুষগুলোর অনেকেই আবার ফিরে যাচ্ছেন, যদিও তাদের ঘর আর ঘর নেই—শুধু ভাঙা দেয়াল, পোড়া ছাদ, আর স্মৃতির স্তূপ।

 

 

 

 

 

যুদ্ধবিরতির খবর শুনে গাজার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনিসের বাসিন্দা আমির আবু ইয়াদে বলেন, “এই অবস্থার জন্য আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। যদিও আমরা ক্ষতবিক্ষত, তবু নিজ এলাকায় ফিরছি—এটাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা।”

 

 

গাজার কেন্দ্রীয় শহর এলাকার বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সী মুহাম্মদ মুর্তজা বলেন, “আমি সব সময় প্রার্থনা করেছি যেন ফিরে গিয়ে দেখি আমার বাড়ি এখনো টিকে আছে। কিন্তু জানি, অনেকের মতো আমার ঘরও হয়তো গুঁড়িয়ে গেছে।” তার এখন একমাত্র আকাঙ্ক্ষা—এই যুদ্ধ যেন আর কখনো না ফিরে আসে।

 

 

 

৫৩ বছর বয়সী আরিজ আবু সাদায়েহও ফিরছেন নিজের ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িতে। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতি ও শান্তি ফিরে আসায় আমি খুশি। কিন্তু আমি এক মা, যিনি এই যুদ্ধে এক ছেলে ও এক মেয়ে দুজনকেই হারিয়েছি। এই কষ্ট কোনোদিন কাটবে না, কিন্তু অন্তত এখন আমরা ঘরে ফিরছি—এটাই কিছুটা স্বস্তি।”

 

 

মিসরের শারম আল শেখে গত বুধবার হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়। দীর্ঘ বৈঠকের পর ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা শুক্রবার ভোরে তা অনুমোদন দেয়, এবং একই দিন সকাল থেকেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

 

 

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে। আগামী সোমবারের মধ্যে হামাস জীবিত সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেবে।

 

 

এই যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই পরিকল্পনার আলোচনায় অংশ নেয় হামাস, ইসরায়েল, ইসলামিক জিহাদ এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএলএফপি)।

 

 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি কার্যকরের পর ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যে গাজার কয়েকটি এলাকা থেকে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করেছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার উত্তরাঞ্চলের দিকে ফিরে যাচ্ছেন—যেখানে গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে সম্পূর্ণ এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছিল।

 

 

চুক্তি অনুসারে, প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে এবং খাদ্য, ওষুধ ও পুনর্গঠনের সামগ্রী পৌঁছে দেবে। তবে বাস্তবে এই সরবরাহ নির্বিঘ্নে চলছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

 

যুদ্ধের বিধ্বস্ত গাজায় এখন ঘরে ফেরার যাত্রা মানে এক অনিশ্চিত পথ—যেখানে ঘর নেই, তবুও মানুষ ফিরছে ঘরে। কারণ, সেই মাটিই তাদের পরিচয়, সেই ধ্বংসস্তূপই তাদের শেষ আশ্রয়।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মেহেরপুরে খোকসা যুব সংঘের কমিটি গঠন: সভাপতি হামিদুল, সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা

ঘর আর নেই, তবু ঘরে ফিরছে গাজাবাসী

আপডেট সময় ১০:৪৫:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অবশেষে শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি। যুদ্ধবিরতি শুরু হতেই ফিলিস্তিনিরা দলে দলে ফিরতে শুরু করেছেন নিজেদের ভিটেমাটিতে—যে ভিটেমাটির অধিকাংশই আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। তবুও, তাদের চোখে এখন একটিই আশা—শান্তি ফিরবে, হয়তো এবার স্থায়ীভাবে।

 

 

দুই বছর আগে শুরু হওয়া এই বিধ্বংসী যুদ্ধে গাজাবাসীর জীবনে এসেছে অগণিত মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি ও ধ্বংস। অনেকেই নিজেদের ঘরবাড়ি একাধিকবার ছেড়ে গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। এখন সেই মানুষগুলোর অনেকেই আবার ফিরে যাচ্ছেন, যদিও তাদের ঘর আর ঘর নেই—শুধু ভাঙা দেয়াল, পোড়া ছাদ, আর স্মৃতির স্তূপ।

 

 

 

 

 

যুদ্ধবিরতির খবর শুনে গাজার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনিসের বাসিন্দা আমির আবু ইয়াদে বলেন, “এই অবস্থার জন্য আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। যদিও আমরা ক্ষতবিক্ষত, তবু নিজ এলাকায় ফিরছি—এটাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা।”

 

 

গাজার কেন্দ্রীয় শহর এলাকার বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সী মুহাম্মদ মুর্তজা বলেন, “আমি সব সময় প্রার্থনা করেছি যেন ফিরে গিয়ে দেখি আমার বাড়ি এখনো টিকে আছে। কিন্তু জানি, অনেকের মতো আমার ঘরও হয়তো গুঁড়িয়ে গেছে।” তার এখন একমাত্র আকাঙ্ক্ষা—এই যুদ্ধ যেন আর কখনো না ফিরে আসে।

 

 

 

৫৩ বছর বয়সী আরিজ আবু সাদায়েহও ফিরছেন নিজের ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িতে। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতি ও শান্তি ফিরে আসায় আমি খুশি। কিন্তু আমি এক মা, যিনি এই যুদ্ধে এক ছেলে ও এক মেয়ে দুজনকেই হারিয়েছি। এই কষ্ট কোনোদিন কাটবে না, কিন্তু অন্তত এখন আমরা ঘরে ফিরছি—এটাই কিছুটা স্বস্তি।”

 

 

মিসরের শারম আল শেখে গত বুধবার হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়। দীর্ঘ বৈঠকের পর ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা শুক্রবার ভোরে তা অনুমোদন দেয়, এবং একই দিন সকাল থেকেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

 

 

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে। আগামী সোমবারের মধ্যে হামাস জীবিত সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেবে।

 

 

এই যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই পরিকল্পনার আলোচনায় অংশ নেয় হামাস, ইসরায়েল, ইসলামিক জিহাদ এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএলএফপি)।

 

 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি কার্যকরের পর ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যে গাজার কয়েকটি এলাকা থেকে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করেছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার উত্তরাঞ্চলের দিকে ফিরে যাচ্ছেন—যেখানে গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে সম্পূর্ণ এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছিল।

 

 

চুক্তি অনুসারে, প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে এবং খাদ্য, ওষুধ ও পুনর্গঠনের সামগ্রী পৌঁছে দেবে। তবে বাস্তবে এই সরবরাহ নির্বিঘ্নে চলছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

 

যুদ্ধের বিধ্বস্ত গাজায় এখন ঘরে ফেরার যাত্রা মানে এক অনিশ্চিত পথ—যেখানে ঘর নেই, তবুও মানুষ ফিরছে ঘরে। কারণ, সেই মাটিই তাদের পরিচয়, সেই ধ্বংসস্তূপই তাদের শেষ আশ্রয়।