মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যেন ঘনিয়ে আসছে আগুনের মেঘ, আর তার কেন্দ্রে রয়েছে ইরান। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সামরিক হামলার আশঙ্কায় রাজধানী তেহরান পূর্ণ সামরিক সতর্কতা ঘোষণা করেছে। জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ বাহিনী যেকোনো সময় ইরানে সামরিক হামলা চালাতে পারে। এমন উত্তেজনার মধ্যেই ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট ইতিমধ্যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ইরানের দাবি: সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পূর্ণ প্রস্তুতি
তেহরানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, ইরান এখন সম্পূর্ণ সামরিক সতর্ক অবস্থায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা যায়, ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল থেকে আসা সম্ভাব্য হামলার হুমকি ইরান অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাবি করেন, গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ হামলার সময় ইরান সফলভাবে নিজেদের রক্ষা করেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশটি এখন আরও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তার মতে, ইরান বর্তমানে এমন অবস্থানে রয়েছে, যেখানে যেকোনো ধরনের আগ্রাসন প্রতিহত করার পূর্ণ সক্ষমতা তাদের আছে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলোতে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইরান মনে করছে, ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সীমিত হামলার চেষ্টা হলেও তা দ্রুত প্রতিরোধ করা হবে।
ইসরায়েলের ‘প্রতারণামূলক আচরণ’ নিয়ে তেহরান সতর্ক
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নতুন করে সংঘাতে জড়াতে চান না—এমন বার্তা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ইরান বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। তবে অতীতের ইসরায়েলের প্রতারণামূলক আচরণের কারণে তেহরান এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
শান্তি আলোচনা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা
শার্ম আল শেখ সম্মেলনে অনুপস্থিতি: মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহর কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেলেও শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মুখপাত্র জানান, সবদিক বিবেচনা করে তেহরান জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সংঘাত: আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশই ইরানের প্রতিবেশী ও মুসলিম রাষ্ট্র। তাদের মধ্যে সংঘাত তৈরি হলে পুরো অঞ্চলে স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। তাই তিনি দুই পক্ষকে সংলাপ ও কূটনৈতিক পথে সমাধানে আসার আহ্বান জানান।
পারমাণু আলোচনা: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য পরমাণু আলোচনা প্রসঙ্গে ইরানের মুখপাত্র বলেন, গত জুনে যখন আলোচনা চলছিল, তখনই যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়। সে অভিজ্ঞতা থেকে তেহরান এখন খুবই সতর্ক। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানান, কূটনীতি ও সংলাপের দরজা ইরান বন্ধ করে দেয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ভবিষ্যতে ইরান নিজের জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কোন পক্ষের সঙ্গে সংগ্রাম ও কূটনীতি দেশটির স্বার্থের পক্ষে যায়, তা নির্ধারণ করবে রাষ্ট্রব্যবস্থা।

ডেস্ক রিপোর্ট 

























