ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বিচারকের বাসায় হা’ম’লা, ছু’রিকা’ঘাতে ছেলে নি’হত: হা’মলা’কারী বিএনপি নেতার ছেলে ধানের শীষের প্রার্থীকে রেখে নেতাকর্মীরাই খেয়ে ফেললেন সব খাবার পুণেতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ নিহত, ১৫ আহত; আগুনে পুড়ে গেছে ট্রাক রাজশাহীতে ধানের শীষ সমর্থক নারী নেতা ও তার বোনকে হামলার অভিযোগ, বিএনপির সংবাদ সম্মেলন আসন সমঝোতায় অচলাবস্থা: জমিয়তের ১২ আসন দাবি, বিএনপি রাজি মাত্র ৫টিতে দেবীদ্বার আসনে লড়বেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের আত্মিক বন্ধন অটুট: ফজলুর রহমান তোমাদের আপা আর আসবে না, আ.লীগকে লায়ন ফারুক জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিএনপিতে যোগদান: বিএনপির মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানালো জামায়াত এনসিপি এলে ৪০, না এলে ২৩ আসনে সমঝোতা করবে বিএনপি

ছাত্রলীগ থেকে আসা ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ, যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০১:২৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ৪০৫ বার পড়া হয়েছে

 

 

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন ছাত্রলীগ থেকে আসা ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন (২২। সোমবার (২৭ অক্টোবর) গভীর রাতে সৈয়দ শাহ রোডের মদিনা আবাসিক এলাকার সামনে রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষ ঘটে।

 

নিহত সাজ্জাদ এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তিনি যোগ দেন যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশার দলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই দলে যোগ দেওয়াই তার জীবনের সমাপ্তি টেনে দিল। তাকে গুলি করা সোহেল-বোরহান গ্রুপও যুবলীগ থেকে আসা এখন যুবদল কর্মী।

 

 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের দুই নেতা এমদাদুল হক বাদশা ও গাজী সিরাজের অনুসারী বোরহান-সোহেলদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ হয়।

 

সোহেল ও বোরহান ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির কর্মী। আর বাদশা দীর্ঘদিন ছাত্রদল ও যুবদলের সংগঠক। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর নিহত সাজ্জাদ ও যুবলীগ কর্মী বোরহান-সোহেল দুই পক্ষই ছাত্রদল-যুবদলে যোগ দেন। বোরহান-সোহেল গাজী সিরাজ, সাজ্জাদ এমদাদুল হক বাদশার দলে। নিহত সাজ্জাদ ছিলেন বাদশা গ্রুপের কর্মী।

 

সূত্র জানায়, সাজ্জাদের রাজনীতি শুরু ছাত্রলীগের হাত ধরে। ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা পালানোর পর তিনি ছাত্রদলে যোগ দেন। নগরের বাকলিয়া থানার ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদে তিনি প্রার্থী ছিলেন। নগরীর পাথরঘাটার একটি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সাজ্জাদ আওয়ামী লীগের সাবেক নগর সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাজ্জাদ মহিউদ্দিনের ছেলে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পক্ষে ভোট চাওয়ার বিভিন্ন ছবিও দেখা গেছে।

 

অন্যদিকে যুবদল নেতা গাজী সিরাজের অনুসারী বোরহান-সোহেলও আগে আ.লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর বোরহান যুবদলে যোগ দেন।

 

 

সাজ্জাদের পরিবারের অভিযোগ, গাজী ফিরোজের অনুসারী বোরহান ও অন্যরা সাজ্জাদকে গুলি করে হত্যা করে।

 

 

সাজ্জাদের বড় ভাই মো. হানিফ বলেন, আমার ভাই বাসায় ছিল। মোবারক নামে এক যুবদল কর্মী ফোন দিয়ে ডেকে নেয়। কয়েক মিনিট পরই শুনি, সৈয়দ শাহ রোডে গুলাগুলি শুরু হয়েছে। রাত দুইটার দিকে জানতে পারি ভাই মেডিকেলে মারা গেছে।

 

 

স্থানীয়রা জানান, বোরহান সৈয়দ শাহ রোডে মেয়র শাহাদাত হোসেনের ছবিসহ যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি ব্যানার টানান। পরে বাদশা গ্রুপের কর্মীরা এসে সেটি নামাতে গেলে কথা কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষে রূপ নেয়। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবিনিময়। এতে সাজ্জাদসহ অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসক সাজ্জাদকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন-জুয়েল, সাব্বির, শরীফ, ইয়াসিন, একরাম, পারভেজ ও মারুফ।

 

বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল হয়েছে। গুলিবিদ্ধ একজন মারা গেছেন। আমরা তদন্ত করছি।

 

স্থানীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ থেকে যুবদলে আসা বোরহান ও আগে থেকে যুবদল করা বাদশা এখন দখল, চাঁদাবাজি ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। উভয়পক্ষের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই বহুদিনের। সোমবারের রাতের রক্তপাত সেই বিরোধেরই ভয়াবহ পরিণতি।

 

এদিকে চমেক হাসপাতালে সাজ্জাদের মরদেহ দেখতে গিয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বোরহানসহ অন্যদের বিষয়ে ‍পুলিশকে বলেছিলাম। তারা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে নগরে এসে এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। তাদের বিষয়ে পুলিশকে বলেছিলাম, কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ ব্যবস্থা নিলে, আজকের এই হত্যাকাণ্ড ঘটতনা।

 

সাজ্জাদকে হত্যায় সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্রের ব্যবহার

 

এদিকে ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেনকে হত্যায় সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্র ব্যবহারের তথ্য মিলেছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘটনাস্থলে গুলির কোনো শব্দ শোনা যায়নি। শুধু মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সাজ্জাদ। পরে তার শরীরে গুলির চিহ্ন দেখে সবাই বুঝতে পারেন, এটি কোনো সাধারণ অস্ত্রের গুলি নয়।

 

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সাইলেন্ট গান বা সাপ্রেসড ফায়ারআর্ম এমন এক ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, যাতে সাইলেন্সার নামের একটি বিশেষ যন্ত্র যুক্ত থাকে। এটি গুলির শব্দ ও ফ্ল্যাশ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত দমন করে। ফলে কাছ থেকে গুলি ছোড়া হলেও আশপাশের কেউ বুঝতে পারে না। বাংলাদেশে এই অস্ত্রের ব্যবহার বৈধ নয়, তবে সীমান্তপথে চোরাচালানের মাধ্যমে সাইলেন্সারযুক্ত পিস্তল দেশে ঢোকে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল হক বলেন, সাপ্রেসড অস্ত্র সাধারণত গুপ্তহত্যা বা টার্গেট কিলিংয়ে ব্যবহৃত হয়। চট্টগ্রামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এর ব্যবহার নতুন নিরাপত্তা সংকেত। এর উৎস ও প্রবাহ এখনই শনাক্ত করা জরুরি।

 

হাসপাতালের বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন সাজ্জাদের বাবা মোহাম্মদ আলম। চোখ মুছে তিনি বলেন, আমার ছেলেটা রাজনীতি করতো, কিন্তু কারও ক্ষতি করেনি। যারা ওরে সাইলেন্সার লাগানো গুলিতে মেরেছে, আল্লাহ যেন বিচার করেন। আমি ওদের ফাঁসি চাই।

 

সাজ্জাদের বড় ভাই মো. হানিফ বলেন, যারা হত্যায় অংশ নিয়েছে তারা সবাই গাজী সিরাজের গ্রুপের লোক। ভাইকে টার্গেট করেই ডেকে নেয়। একটু পরেই খবর পাই ওরে গুলি করা হয়েছে। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার জানায়, ও তো আগেই মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, ওরা এমন অস্ত্র ব্যবহার করছে যেটাতে শব্দই হয় না। সাইলেন্ট বা সাপ্রেসড গান দিয়ে গুলি করেছে মনে হয়েছে। দোকানের লোকজনও বুঝে নাই গুলি হয়েছে।

 

বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকার আবুল কাশেম নামে এক দোকানি বলেন, রাত তখন ২টা। হঠাৎ দেখি কয়েকটা মোটরসাইকেল। কয়েকজন সাজ্জাদের সঙ্গে কথা বলে। হঠাৎ একটা ‘টিক’ শব্দ, তারপর দেখি ও মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আমরা ভেবেছিলাম পাথর পড়েছে। পরে দেখি বুকে গুলির চিহ্ন।

 

পুলিশ ধারণা করছে, বাদশা ও প্রতিদ্বন্দ্বী গাজী ফিরোজ গ্রুপের দখল-সংঘর্ষের জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।

 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গুলির শব্দ না পাওয়া এবং ঘটনাস্থলে মাত্র একটি খোসা মেলার পরও সাজ্জাদের শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন-এটি সাপ্রেসড অস্ত্রের ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।

 

এই ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অস্ত্রটির উৎস ও ব্যবহৃত চক্র চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ শুরু করেছে।

 

এদিকে পুলিশ বলছে, ঘটনাটি রাজনৈতিক বিরোধের জেরে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে। জড়িতদের শনাক্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার পর এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দুই যুবদল গ্রুপের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হতে পারে।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বিচারকের বাসায় হা’ম’লা, ছু’রিকা’ঘাতে ছেলে নি’হত: হা’মলা’কারী বিএনপি নেতার ছেলে

ছাত্রলীগ থেকে আসা ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ, যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত

আপডেট সময় ০১:২৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

 

 

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন ছাত্রলীগ থেকে আসা ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন (২২। সোমবার (২৭ অক্টোবর) গভীর রাতে সৈয়দ শাহ রোডের মদিনা আবাসিক এলাকার সামনে রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষ ঘটে।

 

নিহত সাজ্জাদ এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তিনি যোগ দেন যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশার দলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই দলে যোগ দেওয়াই তার জীবনের সমাপ্তি টেনে দিল। তাকে গুলি করা সোহেল-বোরহান গ্রুপও যুবলীগ থেকে আসা এখন যুবদল কর্মী।

 

 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের দুই নেতা এমদাদুল হক বাদশা ও গাজী সিরাজের অনুসারী বোরহান-সোহেলদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ হয়।

 

সোহেল ও বোরহান ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির কর্মী। আর বাদশা দীর্ঘদিন ছাত্রদল ও যুবদলের সংগঠক। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর নিহত সাজ্জাদ ও যুবলীগ কর্মী বোরহান-সোহেল দুই পক্ষই ছাত্রদল-যুবদলে যোগ দেন। বোরহান-সোহেল গাজী সিরাজ, সাজ্জাদ এমদাদুল হক বাদশার দলে। নিহত সাজ্জাদ ছিলেন বাদশা গ্রুপের কর্মী।

 

সূত্র জানায়, সাজ্জাদের রাজনীতি শুরু ছাত্রলীগের হাত ধরে। ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা পালানোর পর তিনি ছাত্রদলে যোগ দেন। নগরের বাকলিয়া থানার ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদে তিনি প্রার্থী ছিলেন। নগরীর পাথরঘাটার একটি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সাজ্জাদ আওয়ামী লীগের সাবেক নগর সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাজ্জাদ মহিউদ্দিনের ছেলে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পক্ষে ভোট চাওয়ার বিভিন্ন ছবিও দেখা গেছে।

 

অন্যদিকে যুবদল নেতা গাজী সিরাজের অনুসারী বোরহান-সোহেলও আগে আ.লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর বোরহান যুবদলে যোগ দেন।

 

 

সাজ্জাদের পরিবারের অভিযোগ, গাজী ফিরোজের অনুসারী বোরহান ও অন্যরা সাজ্জাদকে গুলি করে হত্যা করে।

 

 

সাজ্জাদের বড় ভাই মো. হানিফ বলেন, আমার ভাই বাসায় ছিল। মোবারক নামে এক যুবদল কর্মী ফোন দিয়ে ডেকে নেয়। কয়েক মিনিট পরই শুনি, সৈয়দ শাহ রোডে গুলাগুলি শুরু হয়েছে। রাত দুইটার দিকে জানতে পারি ভাই মেডিকেলে মারা গেছে।

 

 

স্থানীয়রা জানান, বোরহান সৈয়দ শাহ রোডে মেয়র শাহাদাত হোসেনের ছবিসহ যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি ব্যানার টানান। পরে বাদশা গ্রুপের কর্মীরা এসে সেটি নামাতে গেলে কথা কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষে রূপ নেয়। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবিনিময়। এতে সাজ্জাদসহ অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসক সাজ্জাদকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন-জুয়েল, সাব্বির, শরীফ, ইয়াসিন, একরাম, পারভেজ ও মারুফ।

 

বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল হয়েছে। গুলিবিদ্ধ একজন মারা গেছেন। আমরা তদন্ত করছি।

 

স্থানীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ থেকে যুবদলে আসা বোরহান ও আগে থেকে যুবদল করা বাদশা এখন দখল, চাঁদাবাজি ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। উভয়পক্ষের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই বহুদিনের। সোমবারের রাতের রক্তপাত সেই বিরোধেরই ভয়াবহ পরিণতি।

 

এদিকে চমেক হাসপাতালে সাজ্জাদের মরদেহ দেখতে গিয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বোরহানসহ অন্যদের বিষয়ে ‍পুলিশকে বলেছিলাম। তারা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে নগরে এসে এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। তাদের বিষয়ে পুলিশকে বলেছিলাম, কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ ব্যবস্থা নিলে, আজকের এই হত্যাকাণ্ড ঘটতনা।

 

সাজ্জাদকে হত্যায় সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্রের ব্যবহার

 

এদিকে ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেনকে হত্যায় সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্র ব্যবহারের তথ্য মিলেছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘটনাস্থলে গুলির কোনো শব্দ শোনা যায়নি। শুধু মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সাজ্জাদ। পরে তার শরীরে গুলির চিহ্ন দেখে সবাই বুঝতে পারেন, এটি কোনো সাধারণ অস্ত্রের গুলি নয়।

 

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সাইলেন্ট গান বা সাপ্রেসড ফায়ারআর্ম এমন এক ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, যাতে সাইলেন্সার নামের একটি বিশেষ যন্ত্র যুক্ত থাকে। এটি গুলির শব্দ ও ফ্ল্যাশ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত দমন করে। ফলে কাছ থেকে গুলি ছোড়া হলেও আশপাশের কেউ বুঝতে পারে না। বাংলাদেশে এই অস্ত্রের ব্যবহার বৈধ নয়, তবে সীমান্তপথে চোরাচালানের মাধ্যমে সাইলেন্সারযুক্ত পিস্তল দেশে ঢোকে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল হক বলেন, সাপ্রেসড অস্ত্র সাধারণত গুপ্তহত্যা বা টার্গেট কিলিংয়ে ব্যবহৃত হয়। চট্টগ্রামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এর ব্যবহার নতুন নিরাপত্তা সংকেত। এর উৎস ও প্রবাহ এখনই শনাক্ত করা জরুরি।

 

হাসপাতালের বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন সাজ্জাদের বাবা মোহাম্মদ আলম। চোখ মুছে তিনি বলেন, আমার ছেলেটা রাজনীতি করতো, কিন্তু কারও ক্ষতি করেনি। যারা ওরে সাইলেন্সার লাগানো গুলিতে মেরেছে, আল্লাহ যেন বিচার করেন। আমি ওদের ফাঁসি চাই।

 

সাজ্জাদের বড় ভাই মো. হানিফ বলেন, যারা হত্যায় অংশ নিয়েছে তারা সবাই গাজী সিরাজের গ্রুপের লোক। ভাইকে টার্গেট করেই ডেকে নেয়। একটু পরেই খবর পাই ওরে গুলি করা হয়েছে। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার জানায়, ও তো আগেই মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, ওরা এমন অস্ত্র ব্যবহার করছে যেটাতে শব্দই হয় না। সাইলেন্ট বা সাপ্রেসড গান দিয়ে গুলি করেছে মনে হয়েছে। দোকানের লোকজনও বুঝে নাই গুলি হয়েছে।

 

বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকার আবুল কাশেম নামে এক দোকানি বলেন, রাত তখন ২টা। হঠাৎ দেখি কয়েকটা মোটরসাইকেল। কয়েকজন সাজ্জাদের সঙ্গে কথা বলে। হঠাৎ একটা ‘টিক’ শব্দ, তারপর দেখি ও মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আমরা ভেবেছিলাম পাথর পড়েছে। পরে দেখি বুকে গুলির চিহ্ন।

 

পুলিশ ধারণা করছে, বাদশা ও প্রতিদ্বন্দ্বী গাজী ফিরোজ গ্রুপের দখল-সংঘর্ষের জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।

 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গুলির শব্দ না পাওয়া এবং ঘটনাস্থলে মাত্র একটি খোসা মেলার পরও সাজ্জাদের শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন-এটি সাপ্রেসড অস্ত্রের ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।

 

এই ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অস্ত্রটির উৎস ও ব্যবহৃত চক্র চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ শুরু করেছে।

 

এদিকে পুলিশ বলছে, ঘটনাটি রাজনৈতিক বিরোধের জেরে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে। জড়িতদের শনাক্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার পর এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দুই যুবদল গ্রুপের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হতে পারে।