ইসলামের ইতিহাসে কারবালার যুদ্ধ এক গভীর শোক ও আত্মত্যাগের প্রতীক। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ বা হিজরি ৬১ সালে ইরাকের কারবালার প্রান্তরে নবী মুহাম্মদের দৌহিত্র ইমাম হোসাইন ও তার পরিবার-সহচরদের ওপর অন্যায়ভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এই যুদ্ধে ইমাম হোসাইনের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন এমন এক ব্যতিক্রমী যোদ্ধার নাম ইতিহাসের প্রান্তরেই রয়ে গেছে—ভারতের এক হিন্দু সারস্বত ব্রাহ্মণ, রিহাব সিধ দত। জনশ্রুতি বলে, তিনি শুধু নিজেই নয়, তার সাত পুত্রও ইমামের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ইউফ্রেটিস নদীর তীরে।
এই কিংবদন্তির ইতিহাস গবেষণামূলক সত্যতা বিতর্কিত হলেও, উপমহাদেশের একাংশে আজও বহু মানুষ এই বিশ্বাসে অবিচল যে তারা সেই ‘বীর ব্রাহ্মণ’-এর উত্তরসূরি। তারা নিজেদের বলে ‘হুসাইনি ব্রাহ্মণ’—একটি অনন্য সম্প্রদায়, যারা ধর্মবিশ্বাসে হিন্দু হলেও হৃদয়ে ধারণ করেন ইমাম হোসাইনের আদর্শ। ভারতের পাঞ্জাব, জম্মু, হিমাচল প্রদেশ ও দিল্লিসহ বিভিন্ন এলাকায় এই সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব টিকে আছে। কোথাও কোথাও তাদের ‘মোহিয়াল ব্রাহ্মণ’ নামেও চিহ্নিত করা হয়।
এই হুসাইনি ব্রাহ্মণরা আশুরার দিনে কালো পোশাক পরেন, তাজিয়া মিছিলে অংশ নেন, কপালে ছাই বা চন্দনের দাগ কেটে শোক প্রকাশ করেন, এমনকি মাতমেও শামিল হন। তবুও তারা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেননি। বরং, এক অদ্ভুত ধর্ম-সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণের নিদর্শন হিসেবে তারা দাঁড়িয়ে আছেন ইতিহাসের এক জীবন্ত সেতুবন্ধনে।
বাংলা সাহিত্যে কারবালার এই হৃদয়বিদারক অধ্যায়কে অমর করে তুলেছিলেন মীর মশাররফ হোসেন তাঁর কালজয়ী উপন্যাস ‘বিষাদ সিন্ধু’-তে। যদিও সেখানে রিহাব সিধ দতের নাম নেই, তবে উপমহাদেশের লোককথা ও মৌখিক ঐতিহ্যে তার স্থান সুদৃঢ়।