ঢাকা , শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
চাঁদপুর-৩ আসনে জামায়াত প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার ব্যাপক গণসংযোগ, ন্যায়-ইনসাফের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লায়’ ভোট চাইলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম: ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন, ঠেকানোর ক্ষমতা কারো নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল ও গাঁজা-মদের আড্ডা বন্ধ হয়েছে, ডালের ঘনত্ব বেড়েছে ছত্তিশগড়ে রোমহর্ষক রহস্য — শেষকৃত্য করা যুবকই কুমারে ফিরে এসে বাড়িতে হাজির ইসলামী দলের নায়েবে আমিরের ‘নো হাংকি পাংকি’ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ এ্যানি: “এটা রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না” “আগামী বাংলাদেশের রিহার্সেল চলছে ছাত্র সংসদে”—ডা. শফিকুর রহমান “৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের প্রগতির টার্নিং পয়েন্ট” — মির্জা ফখরুল বিতর্কিত প্রার্থী বাছাইয়ে চাপে বিএনপি: তৃণমূলে ক্ষোভ ও আন্দোলন, একাধিক আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি ডাকসু থেকে শেখ হাসিনার আজীবন সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত কুমারখালীতে আগাম শীতকালীন সবজিতে কৃষকদের বাম্পার ফলন, লাখে লাখে আয়

বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রতীকের ইতিহাস: নৌকা ও লাঙলের হাতবদলের গল্প

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১০:১৫:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • ৬২৫ বার পড়া হয়েছে

পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)-এর বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল ১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একত্র হয়ে গঠন করে ‘যুক্তফ্রন্ট’। এ জোটের প্রধান নেতারা ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীখাজা নাজিমুদ্দিন। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে মুসলিম লীগ সরকারকে পরাজিত করে।

জোটের সবচেয়ে বড় দল ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ, আর যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল ‘নৌকা’। জোট ভেঙে যাওয়ার পর ‘নৌকা’ প্রতীকটি আওয়ামী মুসলিম লীগের কাছে আসে। ১৯৫৭ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নতুন নাম হয় ‘আওয়ামী লীগ’

অন্যদিকে, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল ‘লাঙল’। পরবর্তীতে এর মালিকানা যায় আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগে। ১৯৮৪ সালে এরশাদের শাসনামলে আতাউর রহমান খান প্রধানমন্ত্রী হলে দলটি বিলুপ্ত হয়। পরে ‘লাঙল’ প্রতীকটি গ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

গবেষকরা বলছেন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যুক্তফ্রন্ট ও মুসলিম লীগ—যেখানে মুসলিম লীগ প্রতীক নেয় ‘হারিকেন’, আর যুক্তফ্রন্ট নেয় ‘নৌকা’

১৯৭০ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথমবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে। বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে নৌকা ছিল পরিচিত ও প্রিয় প্রতীক—তাই এটি আওয়ামী লীগের প্রতীকে পরিণত হয়।

পরে প্রতিটি সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘নৌকা’ মার্কায় অংশ নেয়। তবে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দলটির কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিলে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন ও ‘নৌকা’ প্রতীক স্থগিত করে

লাঙল প্রতীকের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থান

‘নৌকা’ বা ‘ধানের শীষ’-এর মতো ‘লাঙল’ প্রতীকও বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অবিভক্ত ভারতে শেরেবাংলা ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল লাঙল, যা পরে আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগ এবং পরবর্তীতে এরশাদের জাতীয় পার্টির দখলে আসে।

১৯৭০ সালের পাকিস্তান আমলের নির্বাচন ও ১৯৭৩ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে আতাউর রহমান খান লাঙল প্রতীকে অংশ নেন। এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর লাঙল হয়ে যায় জাতীয় পার্টির স্থায়ী প্রতীক

স্বাধীনতার পর আটটি জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি লাঙল মার্কায় ভোটে অংশ নিলেও কখনো এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলটি আবারও বিভক্ত হয়েছে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশ নির্বাচন কমিশনের কাছে লাঙল প্রতীক চাইলেও, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তালিকায় লাঙল প্রতীক এখনো রয়েছে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশের কাছে।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদপুর-৩ আসনে জামায়াত প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার ব্যাপক গণসংযোগ, ন্যায়-ইনসাফের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লায়’ ভোট চাইলেন

বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রতীকের ইতিহাস: নৌকা ও লাঙলের হাতবদলের গল্প

আপডেট সময় ১০:১৫:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)-এর বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল ১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একত্র হয়ে গঠন করে ‘যুক্তফ্রন্ট’। এ জোটের প্রধান নেতারা ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীখাজা নাজিমুদ্দিন। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে মুসলিম লীগ সরকারকে পরাজিত করে।

জোটের সবচেয়ে বড় দল ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ, আর যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল ‘নৌকা’। জোট ভেঙে যাওয়ার পর ‘নৌকা’ প্রতীকটি আওয়ামী মুসলিম লীগের কাছে আসে। ১৯৫৭ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নতুন নাম হয় ‘আওয়ামী লীগ’

অন্যদিকে, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল ‘লাঙল’। পরবর্তীতে এর মালিকানা যায় আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগে। ১৯৮৪ সালে এরশাদের শাসনামলে আতাউর রহমান খান প্রধানমন্ত্রী হলে দলটি বিলুপ্ত হয়। পরে ‘লাঙল’ প্রতীকটি গ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

গবেষকরা বলছেন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যুক্তফ্রন্ট ও মুসলিম লীগ—যেখানে মুসলিম লীগ প্রতীক নেয় ‘হারিকেন’, আর যুক্তফ্রন্ট নেয় ‘নৌকা’

১৯৭০ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথমবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে। বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে নৌকা ছিল পরিচিত ও প্রিয় প্রতীক—তাই এটি আওয়ামী লীগের প্রতীকে পরিণত হয়।

পরে প্রতিটি সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘নৌকা’ মার্কায় অংশ নেয়। তবে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দলটির কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিলে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন ও ‘নৌকা’ প্রতীক স্থগিত করে

লাঙল প্রতীকের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থান

‘নৌকা’ বা ‘ধানের শীষ’-এর মতো ‘লাঙল’ প্রতীকও বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অবিভক্ত ভারতে শেরেবাংলা ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল লাঙল, যা পরে আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগ এবং পরবর্তীতে এরশাদের জাতীয় পার্টির দখলে আসে।

১৯৭০ সালের পাকিস্তান আমলের নির্বাচন ও ১৯৭৩ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে আতাউর রহমান খান লাঙল প্রতীকে অংশ নেন। এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর লাঙল হয়ে যায় জাতীয় পার্টির স্থায়ী প্রতীক

স্বাধীনতার পর আটটি জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি লাঙল মার্কায় ভোটে অংশ নিলেও কখনো এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলটি আবারও বিভক্ত হয়েছে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশ নির্বাচন কমিশনের কাছে লাঙল প্রতীক চাইলেও, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তালিকায় লাঙল প্রতীক এখনো রয়েছে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশের কাছে।