ঢাকা , শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
চাঁদপুর-৩ আসনে জামায়াত প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার ব্যাপক গণসংযোগ, ন্যায়-ইনসাফের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লায়’ ভোট চাইলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম: ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন, ঠেকানোর ক্ষমতা কারো নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল ও গাঁজা-মদের আড্ডা বন্ধ হয়েছে, ডালের ঘনত্ব বেড়েছে ছত্তিশগড়ে রোমহর্ষক রহস্য — শেষকৃত্য করা যুবকই কুমারে ফিরে এসে বাড়িতে হাজির ইসলামী দলের নায়েবে আমিরের ‘নো হাংকি পাংকি’ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ এ্যানি: “এটা রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না” “আগামী বাংলাদেশের রিহার্সেল চলছে ছাত্র সংসদে”—ডা. শফিকুর রহমান “৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের প্রগতির টার্নিং পয়েন্ট” — মির্জা ফখরুল বিতর্কিত প্রার্থী বাছাইয়ে চাপে বিএনপি: তৃণমূলে ক্ষোভ ও আন্দোলন, একাধিক আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি ডাকসু থেকে শেখ হাসিনার আজীবন সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত কুমারখালীতে আগাম শীতকালীন সবজিতে কৃষকদের বাম্পার ফলন, লাখে লাখে আয়

ডাকসুর ৩৫ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখাতে পারছে না প্রশাসন, অভিযোগ নবনির্বাচিতদের

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৩:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ১১৬ বার পড়া হয়েছে

এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) দীর্ঘ ৩৫ বছরের আয়-ব্যয়ের কোনো নির্ভরযোগ্য হিসাব না থাকা এবং শূন্য তহবিল নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ তুলেছেন নবনির্বাচিত নেতারা। ১৯৯০ সালের পর থেকে ডাকসু কার্যত অকার্যকর থাকলেও, প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ফিয়ের বিপুল অঙ্কের অর্থের কোনো হিসাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখাতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদের জন্য শিক্ষার্থীরা মোট ৩৬ লাখ ৬ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন, যার অর্ধেক ডাকসুর এবং বাকি অর্ধেক হল সংসদের জন্য নির্ধারিত।

সেই হিসাবে গত ছয় বছরে (২০১৯-২০২৫) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ডাকসুর হিসাবের খাতে থাকার কথা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে ডাকসুর বাজেট বরাদ্দ মাত্র ৩০ লাখ টাকা, ফলে বাকি অর্থের গন্তব্য নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এইচ এম মোশারফ হোসেন বলেন, “বিব্রতকর পরিস্থিতি হলো যে ডাকসুর নামে কোনো আলাদা ব্যাংক হিসাব নেই। কার্যক্রম চালাতে আমরা ব্যক্তিগতভাবে খরচ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় বাজেটে ডাকসুর ফি ‘নিজস্ব আয়’ হিসেবে ধরা হয়, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি তৈরি করছে।”

অন্যদিকে, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য হাতে নেই। ডাকসু ও হল সংসদ বাবদ কত টাকা জমা হয়েছে এবং কোথায় খরচ হয়েছে, তার একটি স্টেটমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেটি প্রস্তুত হবে।” ডাকসুর নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম বলেন, “১৯৯০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ডাকসু ও হল সংসদের জন্য যে অর্থ দিয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রশাসনের কাছে চেয়েছি। এমনকি ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ের অডিট রিপোর্ট ও হিসাব ডাকসুর অ্যাকাউন্টে হস্তান্তরের দাবিও জানিয়েছি। কিন্তু তিন সপ্তাহ আগে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কোনো জবাব পাইনি।”

তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে এই অর্থের হিসাব গোপন করছে। তার ভাষ্য, “শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য প্রদত্ত অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করলে তারও জবাবদিহি থাকতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বেতন বন্ধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতেও আমরা বাধ্য হবো।” ডাকসুর জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) এস এম ফরহাদ বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বাজেট পাইনি। ডাকসুর একাউন্টে এক টাকাও নেই। বাধ্য হয়ে স্পনসরদের সহায়তায় কার্যক্রম চালাচ্ছি। ২০১৯ সালের পর থেকে শিক্ষার্থীরা কত টাকা দিয়েছে এবং কোথায় খরচ হয়েছে, সে বিষয়ে প্রশাসনের কাছে বারবার চিঠি দিয়েও কোনো সাড়া পাইনি।”

ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্যরা জানান, নির্বাচনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও আলাদা তহবিল গঠনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। ফলে সব কার্যক্রমই এখন চলছে ব্যক্তিগত বা স্পন্সর সহযোগিতায়। এ অবস্থায় তিন দফা দাবিতে রোববার বিক্ষোভ মিছিল ও রেজিস্ট্রার ভবন ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ডাকসু। তাদের দাবিগুলো হলো- ডাকসু ও হল সংসদের অতীতের সব ফান্ডের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ ও স্বচ্ছ বাজেট উপস্থাপন; নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনে টোকাই, ভবঘুরে ও মাদকচক্র নির্মূল; ‘খুনি হাসিনার পক্ষে’ মিছিলে অংশ নেওয়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার রুহুল আমিনসহ ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ ও বিচার।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদপুর-৩ আসনে জামায়াত প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার ব্যাপক গণসংযোগ, ন্যায়-ইনসাফের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লায়’ ভোট চাইলেন

ডাকসুর ৩৫ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখাতে পারছে না প্রশাসন, অভিযোগ নবনির্বাচিতদের

আপডেট সময় ০৩:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) দীর্ঘ ৩৫ বছরের আয়-ব্যয়ের কোনো নির্ভরযোগ্য হিসাব না থাকা এবং শূন্য তহবিল নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ তুলেছেন নবনির্বাচিত নেতারা। ১৯৯০ সালের পর থেকে ডাকসু কার্যত অকার্যকর থাকলেও, প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ফিয়ের বিপুল অঙ্কের অর্থের কোনো হিসাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখাতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদের জন্য শিক্ষার্থীরা মোট ৩৬ লাখ ৬ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন, যার অর্ধেক ডাকসুর এবং বাকি অর্ধেক হল সংসদের জন্য নির্ধারিত।

সেই হিসাবে গত ছয় বছরে (২০১৯-২০২৫) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ডাকসুর হিসাবের খাতে থাকার কথা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে ডাকসুর বাজেট বরাদ্দ মাত্র ৩০ লাখ টাকা, ফলে বাকি অর্থের গন্তব্য নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এইচ এম মোশারফ হোসেন বলেন, “বিব্রতকর পরিস্থিতি হলো যে ডাকসুর নামে কোনো আলাদা ব্যাংক হিসাব নেই। কার্যক্রম চালাতে আমরা ব্যক্তিগতভাবে খরচ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় বাজেটে ডাকসুর ফি ‘নিজস্ব আয়’ হিসেবে ধরা হয়, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি তৈরি করছে।”

অন্যদিকে, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য হাতে নেই। ডাকসু ও হল সংসদ বাবদ কত টাকা জমা হয়েছে এবং কোথায় খরচ হয়েছে, তার একটি স্টেটমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেটি প্রস্তুত হবে।” ডাকসুর নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম বলেন, “১৯৯০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ডাকসু ও হল সংসদের জন্য যে অর্থ দিয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রশাসনের কাছে চেয়েছি। এমনকি ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ের অডিট রিপোর্ট ও হিসাব ডাকসুর অ্যাকাউন্টে হস্তান্তরের দাবিও জানিয়েছি। কিন্তু তিন সপ্তাহ আগে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কোনো জবাব পাইনি।”

তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে এই অর্থের হিসাব গোপন করছে। তার ভাষ্য, “শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য প্রদত্ত অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করলে তারও জবাবদিহি থাকতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বেতন বন্ধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতেও আমরা বাধ্য হবো।” ডাকসুর জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) এস এম ফরহাদ বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বাজেট পাইনি। ডাকসুর একাউন্টে এক টাকাও নেই। বাধ্য হয়ে স্পনসরদের সহায়তায় কার্যক্রম চালাচ্ছি। ২০১৯ সালের পর থেকে শিক্ষার্থীরা কত টাকা দিয়েছে এবং কোথায় খরচ হয়েছে, সে বিষয়ে প্রশাসনের কাছে বারবার চিঠি দিয়েও কোনো সাড়া পাইনি।”

ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্যরা জানান, নির্বাচনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও আলাদা তহবিল গঠনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। ফলে সব কার্যক্রমই এখন চলছে ব্যক্তিগত বা স্পন্সর সহযোগিতায়। এ অবস্থায় তিন দফা দাবিতে রোববার বিক্ষোভ মিছিল ও রেজিস্ট্রার ভবন ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ডাকসু। তাদের দাবিগুলো হলো- ডাকসু ও হল সংসদের অতীতের সব ফান্ডের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ ও স্বচ্ছ বাজেট উপস্থাপন; নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনে টোকাই, ভবঘুরে ও মাদকচক্র নির্মূল; ‘খুনি হাসিনার পক্ষে’ মিছিলে অংশ নেওয়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার রুহুল আমিনসহ ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ ও বিচার।