ঢাকা , সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
মেহেরপুরে খোকসা যুব সংঘের কমিটি গঠন: সভাপতি হামিদুল, সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা নাটোরে জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি-জাতীয় পার্টির ৫০ নেতাকর্মী বরিশালে জামায়াত নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা মেহেরপুরে পদ্মফুল তুলতে গিয়ে একই পরিবারের চার শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু বিএনপির পাঁচ নেতাকে সব পদ থেকে বহিষ্কার ‘ফজু পাগলা’ উপাধিতে গর্বিত বিএনপি প্রার্থী ফজলুর রহমান: বলেন, আমার জন্য সারা দেশের মানুষ পাগল গৌরীপুরে সংঘর্ষের জেরে বিএনপির ৫ নেতা বহিষ্কার জিয়া পরিবারের আদর্শ ধরে রাখতে জীবন দিতেও পিছু হটবো না: এস এম জাহাঙ্গীর শাপলাকলি’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে এনসিপি: জনগণের রাজনীতি গড়ে তুলতে আহ্বান নাহিদ ইসলামের গৌরীপুরে বিএনপির মনোনয়ন দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত অন্তত ৪০

সুদানের এল-ফাশেরে গণহত্যা: রাস্তাজুড়ে লাশ, কবর দেওয়ারও কেউ নেই

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৮:২০:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৪৫৩ বার পড়া হয়েছে

 

সুদানের যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশের (El-Fasher) থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন বর্ণনা করছেন র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) কর্তৃক সংঘটিত ভয়াবহ সহিংসতার চিত্র। ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে মানবতার এক ভয়াল অধ্যায়—যেখানে রাস্তাজুড়ে পড়ে আছে শত শত মৃতদেহ, আর কবর দেওয়ার মতো মানুষও নেই।

গত রবিবার শহরটি দখলের পর থেকে কমপক্ষে ১,৫০০ জনকে হত্যা করেছে RSF। এর মধ্যে শুধুমাত্র একটি হাসপাতালে ৪৬০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ভয়াবহ এই গণহত্যার পর থেকে শহর ছেড়ে পালিয়েছে ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই হেঁটে ৭০ কিলোমিটার দূরের তাভিলা শহরে পৌঁছেছেন—যেখানে আগেই ৬ লাখ ৫০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।

পাঁচ সন্তানের জননী হায়াত এএফপিকে জানান, সাতজন RSF যোদ্ধা তাদের বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে তার ১৬ বছর বয়সী ছেলেকে তার সামনেই হত্যা করে। তিনি বলেন,

“আমরা রাস্তায় বহু মৃতদেহ দেখেছি, আহতরা খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিলো—কারণ তাদের কেউ বহন করতে পারেনি।”

আরেক বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি হুসেইন জানান,

“এল-ফাশেরের রাস্তায় লাশে ভরা, কবর দেওয়ার কেউ নেই। আমরা জীবিত বের হতে পেরেছি, এটিই আমাদের সৌভাগ্য।”

বাস্তুচ্যুত আরেক নারী আয়েশা ইসমাইল বলেন,

“দিনরাত চলছিল কামানের গোলা আর ড্রোন হামলা। আমরা লুকিয়ে না থাকলে তারা রাইফেলের বাট দিয়ে মারত। বাড়ি ছেড়ে পালানোর সময় আমাদের সবকিছু লুট করে নেয়, এমনকি জুতাও।”

তাভিলা ক্যাম্পে কর্মরত নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের কর্মকর্তা মাথিল্ড ভু বলেন,

“যারা এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছেন, তারা খুবই অল্পসংখ্যক। বাকিদের কী হয়েছে আমরা জানি না—এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়।”

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক জানিয়েছেন, তাভিলা ও দারফুরে মানবিক সহায়তা জোরদারের জন্য সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড (CERF) থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি হাসপাতাল’-এ ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যেখানে রোগী ও আশ্রয়প্রার্থীরা নিরাপত্তা খুঁজছিলেন।

সুদান বিশেষজ্ঞ শায়না লুইস আল জাজিরাকে বলেন,

“এই হত্যাযজ্ঞ সবচেয়ে মর্মান্তিক, কারণ আমরা বহুবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছিলাম যে উত্তর দারফুরের বেসামরিকরা এমন নৃশংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে।”

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব (HRL) স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন স্থানে মৃতদেহের গুচ্ছরক্তাক্ত লালচে এলাকা, যা গণহত্যার প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে মহাকাশ থেকেও।

সূত্র: আল জাজিরা

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মেহেরপুরে খোকসা যুব সংঘের কমিটি গঠন: সভাপতি হামিদুল, সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা

সুদানের এল-ফাশেরে গণহত্যা: রাস্তাজুড়ে লাশ, কবর দেওয়ারও কেউ নেই

আপডেট সময় ০৮:২০:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

 

সুদানের যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশের (El-Fasher) থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন বর্ণনা করছেন র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) কর্তৃক সংঘটিত ভয়াবহ সহিংসতার চিত্র। ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে মানবতার এক ভয়াল অধ্যায়—যেখানে রাস্তাজুড়ে পড়ে আছে শত শত মৃতদেহ, আর কবর দেওয়ার মতো মানুষও নেই।

গত রবিবার শহরটি দখলের পর থেকে কমপক্ষে ১,৫০০ জনকে হত্যা করেছে RSF। এর মধ্যে শুধুমাত্র একটি হাসপাতালে ৪৬০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ভয়াবহ এই গণহত্যার পর থেকে শহর ছেড়ে পালিয়েছে ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই হেঁটে ৭০ কিলোমিটার দূরের তাভিলা শহরে পৌঁছেছেন—যেখানে আগেই ৬ লাখ ৫০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।

পাঁচ সন্তানের জননী হায়াত এএফপিকে জানান, সাতজন RSF যোদ্ধা তাদের বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে তার ১৬ বছর বয়সী ছেলেকে তার সামনেই হত্যা করে। তিনি বলেন,

“আমরা রাস্তায় বহু মৃতদেহ দেখেছি, আহতরা খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিলো—কারণ তাদের কেউ বহন করতে পারেনি।”

আরেক বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি হুসেইন জানান,

“এল-ফাশেরের রাস্তায় লাশে ভরা, কবর দেওয়ার কেউ নেই। আমরা জীবিত বের হতে পেরেছি, এটিই আমাদের সৌভাগ্য।”

বাস্তুচ্যুত আরেক নারী আয়েশা ইসমাইল বলেন,

“দিনরাত চলছিল কামানের গোলা আর ড্রোন হামলা। আমরা লুকিয়ে না থাকলে তারা রাইফেলের বাট দিয়ে মারত। বাড়ি ছেড়ে পালানোর সময় আমাদের সবকিছু লুট করে নেয়, এমনকি জুতাও।”

তাভিলা ক্যাম্পে কর্মরত নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের কর্মকর্তা মাথিল্ড ভু বলেন,

“যারা এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছেন, তারা খুবই অল্পসংখ্যক। বাকিদের কী হয়েছে আমরা জানি না—এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়।”

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক জানিয়েছেন, তাভিলা ও দারফুরে মানবিক সহায়তা জোরদারের জন্য সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড (CERF) থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি হাসপাতাল’-এ ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যেখানে রোগী ও আশ্রয়প্রার্থীরা নিরাপত্তা খুঁজছিলেন।

সুদান বিশেষজ্ঞ শায়না লুইস আল জাজিরাকে বলেন,

“এই হত্যাযজ্ঞ সবচেয়ে মর্মান্তিক, কারণ আমরা বহুবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছিলাম যে উত্তর দারফুরের বেসামরিকরা এমন নৃশংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে।”

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব (HRL) স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন স্থানে মৃতদেহের গুচ্ছরক্তাক্ত লালচে এলাকা, যা গণহত্যার প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে মহাকাশ থেকেও।

সূত্র: আল জাজিরা