ঢাকা , শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম সরিয়ে নিলো যুক্তরাষ্ট্র উন্মুক্ত মাঠে এবছরের সব তাফসির মাহফিল স্থগিত ঘোষণা করলেন মিজানুর রহমান আজহারী আরিফিন শুভর রাজউকের ১০ কাঠার প্লট ফিরিয়ে দিতে বললেন পরিচালক শেখ হাসিনা ও আ. লীগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: প্রেসসচিব দুর্নীতি-দুঃশাসন মুক্তিতে কারও সাথে আপস করবে না জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান জবিতে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে জমকালো কাওয়ালি সন্ধ্যা দলগুলো না পারলে গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব কিছু ভুলের জন্য এনসিপিকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে: জিল্লুর রহমান মিশরের উদ্দেশ্যে এনসিপি নেতা সারজিস আলম  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় খুন হন ছাত্রদল নেতা সাম্য

উন্মুক্ত মিম্বর: ইসলামি সমাজে জ্ঞান, ন্যায় ও নৈতিক পুনর্জাগরণের প্রেরণা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১১:১৬:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে

 

মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়; এটি মুসলিম সমাজের হৃদয়কেন্দ্র, যেখানে আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা ও সামাজিক চেতনা মিলিত হয়। ইসলামের সূচনালগ্নে মসজিদ ছিল জ্ঞান, নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার এবং সমাজকল্যাণের কেন্দ্র। নবী করিম (সা.) মসজিদের মিম্বর থেকে যেমন ঈমান ও আমলের দাওয়াত দিতেন, তেমনি সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্যবিমোচন ও মানবিক মূল্যবোধ প্রচার করতেন।
কিন্তু আজ অনেক ক্ষেত্রেই মিম্বর সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে কেবল ধর্মীয় উপদেশে। এখন সময় এসেছে মিম্বরকে পুনরায় উন্মুক্ত করার—যাতে এটি সমাজের দিকনির্দেশনা, নৈতিক শিক্ষা ও পুনর্জাগরণের কেন্দ্র হতে পারে।


ইতিহাসের আলোকে মিম্বরের গুরুত্ব

নবীজি (সা.) তাঁর মসজিদের মিম্বরকে শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক শিক্ষার আসন হিসেবে ব্যবহার করেননি; বরং সেখানে সমাজের বাস্তব সমস্যা, ন্যায়বিচার, দারিদ্র্যবিমোচন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হতো।
সাহাবায়ে কিরামরা শিখতেন—কীভাবে একজন মুসলিম দুনিয়া ও আখিরাত উভয় দিকেই সফল হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“আর তোমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলো সৌজন্য ও মনের প্রশান্তির সঙ্গে।” (সুরা আলে ইমরান : ১৫৯)


বর্তমান বাস্তবতা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা

আজকের দিনে মসজিদের মিম্বর অনেক স্থানে সীমিত। খুতবা প্রায়ই আধ্যাত্মিক আলোচনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। অথচ সমাজে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পারিবারিক ভাঙন, কিশোর অপরাধ, নারী নির্যাতন, প্রযুক্তির অপব্যবহার ও সামাজিক বৈষম্যের মতো গুরুতর সমস্যা রয়েছে—যা নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক প্রভাব, দলীয় আগ্রহ ও সামাজিক চাপ অনেক সময় মিম্বরের স্বাধীনতা সংকুচিত করে। ফলে সমাজে সত্য ও ন্যায়ের বার্তা পৌঁছায় না।
নবী করিম (সা.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি মানুষের জন্য উপকারে আসে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে বসাবেন।” (মুসলিম)
অতএব, সমাজের বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরা এবং সমাধানের পথ দেখানো ইসলামি দায়িত্বের অংশ।


উন্মুক্ত মিম্বরের প্রয়োজনীয়তা

উন্মুক্ত মিম্বর মানে কেবল বক্তার স্বাধীনতা নয়, বরং জ্ঞান, চিন্তা ও সচেতনতার মুক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“তুমি তোমার প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে, আর বিতর্ক হলে উৎকৃষ্ট পন্থায় করো।” (সুরা নাহল : ১২৫)

উন্মুক্ত মিম্বরের মাধ্যমে শিক্ষিত তরুণ, আলেম, সমাজকর্মী ও চিন্তাবিদরা ইসলামিক মূল্যবোধের আলোয় সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন।
এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে—

  • যুবসমাজের সামনে আধুনিক জীবনের সমস্যাগুলোর ইসলামি সমাধান তুলে ধরা।
  • নারীর শিক্ষা, মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করা।
  • সামাজিক সম্প্রীতি, মানবতা ও নৈতিকতার প্রচার।
  • বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও নৈতিকতার সমন্বয়ে সচেতনতা সৃষ্টি।

মিম্বরের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা

উন্মুক্ত মিম্বর হতে হবে সংযত, যুক্তিসংগত ও মানবকল্যাণমুখী। রাজনৈতিক প্রভাব বা পারিপার্শ্বিক চাপের মধ্যেও এটি সমাজে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের বার্তা প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
নবী করিম (সা.) বলেছেন—
“উত্তম মানুষ সেই, যার প্রতিবেশী তার থেকে নিরাপদ থাকে।” (বুখারি)

সামাজিক শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখা মিম্বরের অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও যদি মিম্বর থেকে সত্য ও ন্যায়ের বাণী প্রচারিত হয়, তবে সমাজে বিভাজন কমবে এবং সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে।


আধুনিক যুগে মিম্বরের পুনর্জাগরণ

আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে ইসলামবিরোধী চিন্তা, ভোগবাদ ও নৈতিক অবক্ষয় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হচ্ছে অসৎ প্রবণতায়।
এ অবস্থায় মসজিদের মিম্বর হতে পারে ইসলামি চিন্তার পুনর্জাগরণের প্রধান হাতিয়ার।
যদি মিম্বর বাস্তব জীবনের সমস্যা, নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ ও জ্ঞানচর্চার সমন্বয়ে ব্যবহৃত হয়, তবে মুসলমানরা পুনরায় ফিরে পাবে হারানো নেতৃত্ব ও ঐক্য।


শেষকথা

মসজিদের মিম্বর শুধুই কাঠের ধাপ নয়—এটি জাতির আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক উত্থানের প্রতীক।
নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে যদি আমরা মিম্বরকে সমাজ উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলি, তবে ইনশাআল্লাহ মসজিদ আবারও হবে শান্তি, ঐক্য ও প্রগতির কেন্দ্র।
উন্মুক্ত মিম্বরই হতে পারে জ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবকল্যাণের আলোয় মুসলিম সমাজের নবজাগরণের সূচনা।


 

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম সরিয়ে নিলো যুক্তরাষ্ট্র

উন্মুক্ত মিম্বর: ইসলামি সমাজে জ্ঞান, ন্যায় ও নৈতিক পুনর্জাগরণের প্রেরণা

আপডেট সময় ১১:১৬:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

 

মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়; এটি মুসলিম সমাজের হৃদয়কেন্দ্র, যেখানে আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা ও সামাজিক চেতনা মিলিত হয়। ইসলামের সূচনালগ্নে মসজিদ ছিল জ্ঞান, নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার এবং সমাজকল্যাণের কেন্দ্র। নবী করিম (সা.) মসজিদের মিম্বর থেকে যেমন ঈমান ও আমলের দাওয়াত দিতেন, তেমনি সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্যবিমোচন ও মানবিক মূল্যবোধ প্রচার করতেন।
কিন্তু আজ অনেক ক্ষেত্রেই মিম্বর সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে কেবল ধর্মীয় উপদেশে। এখন সময় এসেছে মিম্বরকে পুনরায় উন্মুক্ত করার—যাতে এটি সমাজের দিকনির্দেশনা, নৈতিক শিক্ষা ও পুনর্জাগরণের কেন্দ্র হতে পারে।


ইতিহাসের আলোকে মিম্বরের গুরুত্ব

নবীজি (সা.) তাঁর মসজিদের মিম্বরকে শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক শিক্ষার আসন হিসেবে ব্যবহার করেননি; বরং সেখানে সমাজের বাস্তব সমস্যা, ন্যায়বিচার, দারিদ্র্যবিমোচন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হতো।
সাহাবায়ে কিরামরা শিখতেন—কীভাবে একজন মুসলিম দুনিয়া ও আখিরাত উভয় দিকেই সফল হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“আর তোমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলো সৌজন্য ও মনের প্রশান্তির সঙ্গে।” (সুরা আলে ইমরান : ১৫৯)


বর্তমান বাস্তবতা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা

আজকের দিনে মসজিদের মিম্বর অনেক স্থানে সীমিত। খুতবা প্রায়ই আধ্যাত্মিক আলোচনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। অথচ সমাজে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পারিবারিক ভাঙন, কিশোর অপরাধ, নারী নির্যাতন, প্রযুক্তির অপব্যবহার ও সামাজিক বৈষম্যের মতো গুরুতর সমস্যা রয়েছে—যা নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক প্রভাব, দলীয় আগ্রহ ও সামাজিক চাপ অনেক সময় মিম্বরের স্বাধীনতা সংকুচিত করে। ফলে সমাজে সত্য ও ন্যায়ের বার্তা পৌঁছায় না।
নবী করিম (সা.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি মানুষের জন্য উপকারে আসে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে বসাবেন।” (মুসলিম)
অতএব, সমাজের বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরা এবং সমাধানের পথ দেখানো ইসলামি দায়িত্বের অংশ।


উন্মুক্ত মিম্বরের প্রয়োজনীয়তা

উন্মুক্ত মিম্বর মানে কেবল বক্তার স্বাধীনতা নয়, বরং জ্ঞান, চিন্তা ও সচেতনতার মুক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“তুমি তোমার প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে, আর বিতর্ক হলে উৎকৃষ্ট পন্থায় করো।” (সুরা নাহল : ১২৫)

উন্মুক্ত মিম্বরের মাধ্যমে শিক্ষিত তরুণ, আলেম, সমাজকর্মী ও চিন্তাবিদরা ইসলামিক মূল্যবোধের আলোয় সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন।
এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে—

  • যুবসমাজের সামনে আধুনিক জীবনের সমস্যাগুলোর ইসলামি সমাধান তুলে ধরা।
  • নারীর শিক্ষা, মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করা।
  • সামাজিক সম্প্রীতি, মানবতা ও নৈতিকতার প্রচার।
  • বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও নৈতিকতার সমন্বয়ে সচেতনতা সৃষ্টি।

মিম্বরের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা

উন্মুক্ত মিম্বর হতে হবে সংযত, যুক্তিসংগত ও মানবকল্যাণমুখী। রাজনৈতিক প্রভাব বা পারিপার্শ্বিক চাপের মধ্যেও এটি সমাজে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের বার্তা প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
নবী করিম (সা.) বলেছেন—
“উত্তম মানুষ সেই, যার প্রতিবেশী তার থেকে নিরাপদ থাকে।” (বুখারি)

সামাজিক শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখা মিম্বরের অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও যদি মিম্বর থেকে সত্য ও ন্যায়ের বাণী প্রচারিত হয়, তবে সমাজে বিভাজন কমবে এবং সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে।


আধুনিক যুগে মিম্বরের পুনর্জাগরণ

আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে ইসলামবিরোধী চিন্তা, ভোগবাদ ও নৈতিক অবক্ষয় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হচ্ছে অসৎ প্রবণতায়।
এ অবস্থায় মসজিদের মিম্বর হতে পারে ইসলামি চিন্তার পুনর্জাগরণের প্রধান হাতিয়ার।
যদি মিম্বর বাস্তব জীবনের সমস্যা, নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ ও জ্ঞানচর্চার সমন্বয়ে ব্যবহৃত হয়, তবে মুসলমানরা পুনরায় ফিরে পাবে হারানো নেতৃত্ব ও ঐক্য।


শেষকথা

মসজিদের মিম্বর শুধুই কাঠের ধাপ নয়—এটি জাতির আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক উত্থানের প্রতীক।
নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে যদি আমরা মিম্বরকে সমাজ উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলি, তবে ইনশাআল্লাহ মসজিদ আবারও হবে শান্তি, ঐক্য ও প্রগতির কেন্দ্র।
উন্মুক্ত মিম্বরই হতে পারে জ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবকল্যাণের আলোয় মুসলিম সমাজের নবজাগরণের সূচনা।