ঢাকা , রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
চকরিয়াতে জাতীয় নাগরিক পার্টির গাড়িবহর আটকে রেখেছে বিএনপির লোকজন: হান্নান মাসুদ সালাউদ্দিনকে ‘গডফাদার’ ডাকায় উত্তাল কক্সবাজার, এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর চাঁদা নেব না, নিতেও দেব না: জামায়াত আমির বক্তব্যের মাঝে মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলেন জামায়াত আমির মজলুমরা আজ জালিম হয়ে উঠছে: নুর জামায়াতের সমাবেশে দাওয়াত পায়নি বিএনপি বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের জায়গা হবে না: জামায়াতের সমাবেশে সারজিস উগান্ডায় বোম পড়লেও কি বিএনপির দোষ?: পার্থ বর্তমানে আওয়ামী লীগ বলে কিছু নেই, এটি একটি মাফিয়া চক্রে পরিণত: সোহেল তাজ ভারতের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আমার ছেলে শহীদ হয়: আবরার ফাহাদের বাবা

গাজায় ইসরায়েলি ‘গণহত্যায়’ সহায়তাকারী কোম্পানিগুলোর তালিকা দিলো জাতিসংঘ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৪:৪৫:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
  • ১৯৭১ বার পড়া হয়েছে

এবার অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এতে যেসব প্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ, গাজায় ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও গণহত্যায় সহযোগিতা করছে, তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মার্কিন জায়ান্টও রয়েছে। ফ্রান্সেসকা আলবানিজের এই সর্বশেষ প্রতিবেদন আগামী বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) জেনেভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হবে। এতে মোট ৪৮টি বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের জায়ান্ট মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেড এবং অ্যামাজনের নাম রয়েছে এ তালিকায়। পাশাপাশি হাজারের বেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একটি ডাটাবেসও তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের এই চিরস্থায়ী দখলদারিত্ব অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য আদর্শ এক পরীক্ষার মাঠে পরিণত হয়েছে—যেখানে সরবরাহ ও চাহিদা উভয়ই ব্যাপক, নজরদারির সুযোগ নেই বললেই চলে এবং জবাবদিহির কোনো বালাই নেই। বিনিয়োগকারী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অবাধে মুনাফা অর্জন করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর শুধু দখলদারিত্বে জড়িয়ে পড়ছে না, বরং তারা সম্ভবত “গণহত্যার অর্থনীতির” অংশ হয়ে উঠছে।’

ইসরায়েল বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করছে। এতে আটটি দেশের কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০ কোম্পানি জড়িত। এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন। তবে এই যুদ্ধবিমানের বিভিন্ন অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৈরি হচ্ছে। ইতালির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লিওনার্দো এসপিএকে সামরিক খাতের প্রধান সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জাপানের ফ্যানুক করপোরেশন অস্ত্র তৈরির লাইনে ব্যবহৃত রোবট যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে।

প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারি ও তাদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সরকারের ব্যবহারের সুবিধা দিচ্ছে। এতে ইসরায়েলের বৈষম্যমূলক অনুমতি ব্যবস্থা আরও কার্যকর হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট এবং অ্যামাজন ইসরায়েলকে তাদের ক্লাউড এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে প্রায় পুরোপুরি প্রবেশাধিকার দিয়েছে, যা ইসরায়েলের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও নজরদারির ক্ষমতা বাড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইটি প্রতিষ্ঠান আইবিএম ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা সদস্যদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, দেশটির অভিবাসন ও সীমান্ত কর্তৃপক্ষের বায়োমেট্রিক ডেটাবেজ পরিচালনার দায়িত্বও পালন করছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম পালান্টির টেকনোলজিস ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রতি তাদের সহযোগিতা আরও বাড়িয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান ‘স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের’ সক্ষমতা সম্পন্ন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক নজরদারি প্রযুক্তি দিয়েছে, যার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয় এবং ‘ল্যাভেন্ডার’, ‘গসপেল’, ‘হোয়্যার’স ড্যাডি’ এর মতো এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তু তালিকা তৈরি করা হয়।

এ ছাড়া, বহু প্রতিষ্ঠান বেসামরিক প্রযুক্তি তৈরি করলেও সেগুলো ‘ডুয়াল-ইউজ টুল’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, অর্থাৎ একই সঙ্গে সেগুলো দখলদারিত্ব বজায় রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কেটারপিলার, লিওনার্দোর মালিকানাধীন রাডা ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিজ, দক্ষিণ কোরিয়ার এইচডি হুন্দাই এবং সুইডেনের ভলভো গ্রুপ। এ প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধ বসতি স্থাপন এবং ঘরবাড়ি ধ্বংসে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে।

বাড়িভাড়া প্ল্যাটফর্ম বুকিং ডটকম এবং এয়ারবিএনবিও ইসরায়েলি দখলকৃত এলাকায় অবস্থিত সম্পত্তি ও হোটেল রুম ভাড়ার মাধ্যমে অবৈধ বসতি স্থাপনে পরোক্ষ সহযোগিতা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রামন্ড কোম্পানি ও সুইজারল্যান্ডের গ্লেনকোর মূলত কলম্বিয়া থেকে কয়লা সরবরাহের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখছে। কৃষি খাতেও একই চিত্র। চীনের ব্রাইট ডেইরি অ্যান্ড ফুড ইসরায়েলের বৃহত্তম খাদ্য কোম্পানি টনুভার মালিক, যেটি ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে উৎপাদিত পণ্যে লাভবান হচ্ছে। মেক্সিকোর অরবিয়া অ্যাডভান্স করপোরেশনের ৮০ শতাংশ মালিকানাধীন নেটাফিম কোম্পানি পশ্চিম তীরের দখলকৃত অঞ্চলে পানি সম্পদ শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তি সরবরাহ করছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রেজারি বন্ডও গাজায় চলমান যুদ্ধের অর্থ জোগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের বড় বড় ব্যাংক, যেমন ফ্রান্সের বিএনপি পারিবাস এবং যুক্তরাজ্যের বার্কলেস, ইসরায়েলের ঋণ সংকট সামাল দিতে অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকরক ও ভ্যাঙ্গার্ড এসব কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগকারী হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক ব্ল্যাকরক পালান্টির ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, মাইক্রোসফটের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, অ্যামাজনের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, অ্যালফাবেটের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, আইবিএমের ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, লকহিড মার্টিনের ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং কেটারপিলারের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

ভ্যাঙ্গার্ড, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক, কেটারপিলারের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, শেভরনের ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, পালান্টির ৯ দশমিক ১ শতাংশ, লকহিড মার্টিনের ৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং ইসরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারক এলবিট সিস্টেমসের ২ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর এসব প্রতিষ্ঠান দখলদার অর্থনীতি থেকে সরে আসার পরিবর্তে সরাসরি গণহত্যার অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

বিশ্বের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এই যুদ্ধ হয়ে উঠেছে লাভের সুবর্ণ সুযোগ। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে ইসরায়েলের সামরিক বাজেট ৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু সামরিক ব্যয়ের মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে অস্ত্র, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো খাতের তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে বিপুল মুনাফা করেছে। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জও নজিরবিহীনভাবে ১৭৯ শতাংশ বেড়েছে, যার বাজারমূল্য বেড়েছে ১৫৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। সূত্র: আল জাজিরা

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চকরিয়াতে জাতীয় নাগরিক পার্টির গাড়িবহর আটকে রেখেছে বিএনপির লোকজন: হান্নান মাসুদ

গাজায় ইসরায়েলি ‘গণহত্যায়’ সহায়তাকারী কোম্পানিগুলোর তালিকা দিলো জাতিসংঘ

আপডেট সময় ০৪:৪৫:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

এবার অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এতে যেসব প্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ, গাজায় ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও গণহত্যায় সহযোগিতা করছে, তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মার্কিন জায়ান্টও রয়েছে। ফ্রান্সেসকা আলবানিজের এই সর্বশেষ প্রতিবেদন আগামী বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) জেনেভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হবে। এতে মোট ৪৮টি বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের জায়ান্ট মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেড এবং অ্যামাজনের নাম রয়েছে এ তালিকায়। পাশাপাশি হাজারের বেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একটি ডাটাবেসও তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের এই চিরস্থায়ী দখলদারিত্ব অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য আদর্শ এক পরীক্ষার মাঠে পরিণত হয়েছে—যেখানে সরবরাহ ও চাহিদা উভয়ই ব্যাপক, নজরদারির সুযোগ নেই বললেই চলে এবং জবাবদিহির কোনো বালাই নেই। বিনিয়োগকারী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অবাধে মুনাফা অর্জন করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর শুধু দখলদারিত্বে জড়িয়ে পড়ছে না, বরং তারা সম্ভবত “গণহত্যার অর্থনীতির” অংশ হয়ে উঠছে।’

ইসরায়েল বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করছে। এতে আটটি দেশের কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০ কোম্পানি জড়িত। এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন। তবে এই যুদ্ধবিমানের বিভিন্ন অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৈরি হচ্ছে। ইতালির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লিওনার্দো এসপিএকে সামরিক খাতের প্রধান সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জাপানের ফ্যানুক করপোরেশন অস্ত্র তৈরির লাইনে ব্যবহৃত রোবট যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে।

প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারি ও তাদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সরকারের ব্যবহারের সুবিধা দিচ্ছে। এতে ইসরায়েলের বৈষম্যমূলক অনুমতি ব্যবস্থা আরও কার্যকর হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট এবং অ্যামাজন ইসরায়েলকে তাদের ক্লাউড এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে প্রায় পুরোপুরি প্রবেশাধিকার দিয়েছে, যা ইসরায়েলের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও নজরদারির ক্ষমতা বাড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইটি প্রতিষ্ঠান আইবিএম ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা সদস্যদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, দেশটির অভিবাসন ও সীমান্ত কর্তৃপক্ষের বায়োমেট্রিক ডেটাবেজ পরিচালনার দায়িত্বও পালন করছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম পালান্টির টেকনোলজিস ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রতি তাদের সহযোগিতা আরও বাড়িয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান ‘স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের’ সক্ষমতা সম্পন্ন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক নজরদারি প্রযুক্তি দিয়েছে, যার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয় এবং ‘ল্যাভেন্ডার’, ‘গসপেল’, ‘হোয়্যার’স ড্যাডি’ এর মতো এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তু তালিকা তৈরি করা হয়।

এ ছাড়া, বহু প্রতিষ্ঠান বেসামরিক প্রযুক্তি তৈরি করলেও সেগুলো ‘ডুয়াল-ইউজ টুল’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, অর্থাৎ একই সঙ্গে সেগুলো দখলদারিত্ব বজায় রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কেটারপিলার, লিওনার্দোর মালিকানাধীন রাডা ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিজ, দক্ষিণ কোরিয়ার এইচডি হুন্দাই এবং সুইডেনের ভলভো গ্রুপ। এ প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধ বসতি স্থাপন এবং ঘরবাড়ি ধ্বংসে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে।

বাড়িভাড়া প্ল্যাটফর্ম বুকিং ডটকম এবং এয়ারবিএনবিও ইসরায়েলি দখলকৃত এলাকায় অবস্থিত সম্পত্তি ও হোটেল রুম ভাড়ার মাধ্যমে অবৈধ বসতি স্থাপনে পরোক্ষ সহযোগিতা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রামন্ড কোম্পানি ও সুইজারল্যান্ডের গ্লেনকোর মূলত কলম্বিয়া থেকে কয়লা সরবরাহের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখছে। কৃষি খাতেও একই চিত্র। চীনের ব্রাইট ডেইরি অ্যান্ড ফুড ইসরায়েলের বৃহত্তম খাদ্য কোম্পানি টনুভার মালিক, যেটি ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে উৎপাদিত পণ্যে লাভবান হচ্ছে। মেক্সিকোর অরবিয়া অ্যাডভান্স করপোরেশনের ৮০ শতাংশ মালিকানাধীন নেটাফিম কোম্পানি পশ্চিম তীরের দখলকৃত অঞ্চলে পানি সম্পদ শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তি সরবরাহ করছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রেজারি বন্ডও গাজায় চলমান যুদ্ধের অর্থ জোগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের বড় বড় ব্যাংক, যেমন ফ্রান্সের বিএনপি পারিবাস এবং যুক্তরাজ্যের বার্কলেস, ইসরায়েলের ঋণ সংকট সামাল দিতে অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকরক ও ভ্যাঙ্গার্ড এসব কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগকারী হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক ব্ল্যাকরক পালান্টির ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, মাইক্রোসফটের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, অ্যামাজনের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, অ্যালফাবেটের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, আইবিএমের ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, লকহিড মার্টিনের ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং কেটারপিলারের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

ভ্যাঙ্গার্ড, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক, কেটারপিলারের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, শেভরনের ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, পালান্টির ৯ দশমিক ১ শতাংশ, লকহিড মার্টিনের ৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং ইসরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারক এলবিট সিস্টেমসের ২ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর এসব প্রতিষ্ঠান দখলদার অর্থনীতি থেকে সরে আসার পরিবর্তে সরাসরি গণহত্যার অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

বিশ্বের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এই যুদ্ধ হয়ে উঠেছে লাভের সুবর্ণ সুযোগ। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে ইসরায়েলের সামরিক বাজেট ৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু সামরিক ব্যয়ের মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে অস্ত্র, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো খাতের তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে বিপুল মুনাফা করেছে। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জও নজিরবিহীনভাবে ১৭৯ শতাংশ বেড়েছে, যার বাজারমূল্য বেড়েছে ১৫৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। সূত্র: আল জাজিরা