ঢাকা , শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
সংবিধানে গণভোট নেই, কথায় কথায় রাস্তায় নামবেন না: আমীর খসরু হাসিনাকে প্রমোট করতে ভারত সর্বশক্তি ব্যবহার করছে: দাবি রনির মঞ্জু ভাই টাচ করে কথা বলা পছন্দ করতেন, শোল্ডার- হাতে ধরতো: বিস্ফোরক মন্তব্য সাবেক অধিনায়কের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম সরিয়ে নিলো যুক্তরাষ্ট্র উন্মুক্ত মাঠে এবছরের সব তাফসির মাহফিল স্থগিত ঘোষণা করলেন মিজানুর রহমান আজহারী আরিফিন শুভর রাজউকের ১০ কাঠার প্লট ফিরিয়ে দিতে বললেন পরিচালক শেখ হাসিনা ও আ. লীগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: প্রেসসচিব দুর্নীতি-দুঃশাসন মুক্তিতে কারও সাথে আপস করবে না জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান জবিতে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে জমকালো কাওয়ালি সন্ধ্যা দলগুলো না পারলে গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব

যুদ্ধবিরতি কার্যকর, তবু গাজায় মানবিক বিপর্যয়: ক্ষুধা, ঠান্ডা ও চিকিৎসা সংকটে ফিলিস্তিনিরা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৯:৩৯:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
  • ৪৮ বার পড়া হয়েছে

 

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অবরোধে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ কমেনি। ক্ষুধা, ঠান্ডা, চিকিৎসা সংকট আর অব্যাহত হামলার ভয়— সব মিলিয়ে গাজা এখন এক মানবিক বিপর্যয়ের নাম।
সোমবার (৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এক মাসে অন্তত ২৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু ও ধসে পড়া ভবন থেকে আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের খবর দিয়েছে গাজার হাসপাতালগুলো। নিহতদের মধ্যে একজন আগের হামলায় আহত হয়ে মারা যান।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ধ্বংসস্তূপ থেকে ৫০০ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সবাই ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি বোমাবর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার।

রোববার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানায়, রেডক্রসের মাধ্যমে তিনজন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত আনা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহের বিনিময়ে ইসরায়েলকে ১৫ জন করে মৃত ফিলিস্তিনি বন্দির মরদেহ ফেরত দিতে হবে।

এদিকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) অভিযোগ করেছে, হামাস দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ত্রাণবাহী ট্রাক লুট করেছে। তবে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি তারা। ড্রোন ফুটেজের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, ‘হামাস সদস্যরা’ মানবিক সহায়তা দখল করেছে।
কিন্তু গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, এটি মিথ্যা ও সাজানো প্রচারণা, যার উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কলঙ্কিত করা। বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে সহায়তা সরবরাহে বাধা দিচ্ছে, যাতে ক্ষুধা তৈরি করে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঘটানো যায়।”

ইসরায়েলি অবরোধে গাজার হাসপাতালগুলোও তীব্র সংকটে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন এমন ১৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি রোগী এখনো গাজায় আটকা রয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মিসর গ্রহণ করেছে ৪ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ১ হাজার ৪৫০, কাতার ৯৭০, তুরস্ক ৪৩৭ ও ইতালি ২০১ জনকে। তবে এখনো ৩ হাজার ৮০০ শিশুসহ হাজারো মানুষ বিদেশে চিকিৎসার অপেক্ষায় আছেন।

শীত ঘনিয়ে আসায় বাস্তুচ্যুত গাজার বাসিন্দারা টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাণসামগ্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকেই কাদামাটির ঘর বানিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।
গাজা সিটির বাসিন্দা খালেদ আল-দাহদুহ বলেন, “শীত আসছে, তাই ধ্বংসস্তূপের ইট ও কাদা দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়েছি। অন্তত ঠান্ডা, পোকা আর বৃষ্টি থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।”
তার আত্মীয় সাইফ আল-বায়েক জানান, “পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যতটুকু পাথর পেয়েছি তা দিয়েই দেয়াল তুলেছি, কিন্তু ছাদ অসমান, ফাঁকফোকর দিয়ে পানি ঢোকে।”

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) গাজা প্রতিনিধি আলেসান্দ্রো ম্রাকিচ বলেন, “নির্মাণসামগ্রীর অভাবে মানুষকে প্রাচীন পদ্ধতিতে আশ্রয় গড়তে হচ্ছে। এটি তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।”

সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, তাপমাত্রা কমতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ক্ষুধা, ঠান্ডা ও অনিশ্চয়তায় গাজার মানুষ এখনো মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সংবিধানে গণভোট নেই, কথায় কথায় রাস্তায় নামবেন না: আমীর খসরু

যুদ্ধবিরতি কার্যকর, তবু গাজায় মানবিক বিপর্যয়: ক্ষুধা, ঠান্ডা ও চিকিৎসা সংকটে ফিলিস্তিনিরা

আপডেট সময় ০৯:৩৯:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

 

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অবরোধে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ কমেনি। ক্ষুধা, ঠান্ডা, চিকিৎসা সংকট আর অব্যাহত হামলার ভয়— সব মিলিয়ে গাজা এখন এক মানবিক বিপর্যয়ের নাম।
সোমবার (৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এক মাসে অন্তত ২৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু ও ধসে পড়া ভবন থেকে আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের খবর দিয়েছে গাজার হাসপাতালগুলো। নিহতদের মধ্যে একজন আগের হামলায় আহত হয়ে মারা যান।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ধ্বংসস্তূপ থেকে ৫০০ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সবাই ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি বোমাবর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার।

রোববার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানায়, রেডক্রসের মাধ্যমে তিনজন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত আনা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহের বিনিময়ে ইসরায়েলকে ১৫ জন করে মৃত ফিলিস্তিনি বন্দির মরদেহ ফেরত দিতে হবে।

এদিকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) অভিযোগ করেছে, হামাস দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ত্রাণবাহী ট্রাক লুট করেছে। তবে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি তারা। ড্রোন ফুটেজের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, ‘হামাস সদস্যরা’ মানবিক সহায়তা দখল করেছে।
কিন্তু গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, এটি মিথ্যা ও সাজানো প্রচারণা, যার উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কলঙ্কিত করা। বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে সহায়তা সরবরাহে বাধা দিচ্ছে, যাতে ক্ষুধা তৈরি করে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঘটানো যায়।”

ইসরায়েলি অবরোধে গাজার হাসপাতালগুলোও তীব্র সংকটে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন এমন ১৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি রোগী এখনো গাজায় আটকা রয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মিসর গ্রহণ করেছে ৪ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ১ হাজার ৪৫০, কাতার ৯৭০, তুরস্ক ৪৩৭ ও ইতালি ২০১ জনকে। তবে এখনো ৩ হাজার ৮০০ শিশুসহ হাজারো মানুষ বিদেশে চিকিৎসার অপেক্ষায় আছেন।

শীত ঘনিয়ে আসায় বাস্তুচ্যুত গাজার বাসিন্দারা টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাণসামগ্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকেই কাদামাটির ঘর বানিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।
গাজা সিটির বাসিন্দা খালেদ আল-দাহদুহ বলেন, “শীত আসছে, তাই ধ্বংসস্তূপের ইট ও কাদা দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়েছি। অন্তত ঠান্ডা, পোকা আর বৃষ্টি থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।”
তার আত্মীয় সাইফ আল-বায়েক জানান, “পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যতটুকু পাথর পেয়েছি তা দিয়েই দেয়াল তুলেছি, কিন্তু ছাদ অসমান, ফাঁকফোকর দিয়ে পানি ঢোকে।”

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) গাজা প্রতিনিধি আলেসান্দ্রো ম্রাকিচ বলেন, “নির্মাণসামগ্রীর অভাবে মানুষকে প্রাচীন পদ্ধতিতে আশ্রয় গড়তে হচ্ছে। এটি তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।”

সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, তাপমাত্রা কমতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ক্ষুধা, ঠান্ডা ও অনিশ্চয়তায় গাজার মানুষ এখনো মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।