ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বিচারকের বাসায় হা’ম’লা, ছু’রিকা’ঘাতে ছেলে নি’হত: হা’মলা’কারী বিএনপি নেতার ছেলে ধানের শীষের প্রার্থীকে রেখে নেতাকর্মীরাই খেয়ে ফেললেন সব খাবার পুণেতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ নিহত, ১৫ আহত; আগুনে পুড়ে গেছে ট্রাক রাজশাহীতে ধানের শীষ সমর্থক নারী নেতা ও তার বোনকে হামলার অভিযোগ, বিএনপির সংবাদ সম্মেলন আসন সমঝোতায় অচলাবস্থা: জমিয়তের ১২ আসন দাবি, বিএনপি রাজি মাত্র ৫টিতে দেবীদ্বার আসনে লড়বেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের আত্মিক বন্ধন অটুট: ফজলুর রহমান তোমাদের আপা আর আসবে না, আ.লীগকে লায়ন ফারুক জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিএনপিতে যোগদান: বিএনপির মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানালো জামায়াত এনসিপি এলে ৪০, না এলে ২৩ আসনে সমঝোতা করবে বিএনপি

সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট বিক্রির হিড়িক, জীবিকার তাগিদে দ্বীপ ছাড়ছেন অনেকেই

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৪:১৩:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • ৮২৯ বার পড়া হয়েছে

এবার কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট বিক্রির হিড়িক পড়েছে। একসময় যেখানে একটি রিসোর্ট বা জমি কেনার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পর্যটন ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়তো, সেই সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারাই হোটেল, রিসোর্ট ও ভিটেমাটি বিক্রি করে দ্বীপ ছাড়ছেন। স্থানীয়দের মতে, দ্বীপের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম ছিলো মাছ ধরা ও ট্যুরিজম ব্যবসা। কিন্তু, ট্যুরিজমে ভালো আয় হওয়ায় অনেকেই জড়িয়ে পড়েন এই ব্যবসায়। অধিকাংশ মানুষের বসতভিটায় রয়েছে একটি করে রিসোর্ট ও সাথে তাদের থাকার ঘর। মৌসুমে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকার ঘরও ভাড়া দিতে হয় অনেক সময়। এমন অবস্থা চলে আসলেও গতবছর থেকে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনায় পর্যটক সীমিত করা হয়।

নভেম্বরের এক তারিখ থেকে পর্যটকদের যাতায়াতে উন্মুক্ত করা হলেও রাত্রি যাপনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় কক্সবাজার থেকে টানা ৬ ঘণ্টা নৌ-পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টা অবস্থান করে আবারও ছয় ঘণ্টা নৌ-পথে ফেরাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তাই নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কোনো পর্যটক যায়নি। পরে পহেলা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস মাত্র দুই হাজার পর্যটক যাতায়াত ও রাত্রি যাপনের অনুমতি মেলে। মাত্র এ দুই মাস ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে পুরো এক বছর সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়। এমন বাস্তবতায় হোটেল, রিসোর্ট ও ভিটেমাটি বিক্রি করে দ্বীপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই।

সেন্টমার্টিন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবুল হোসেন জানান, তিনি ২০ শতক জমিতে ২০১৭ সালে গড়ে তুলেন ‘দ্বীপ কুটির’ নামে একটি রিসোর্ট। তিনি মসজিদের পাশাপাশি একটি মাদরাসায়ও শিক্ষকতা করতেন। এ দুই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রিসোর্ট থেকে প্রতি বছর যা আয় হতো, তা দিয়ে ৫ ছেলেমেয়েসহ ৭ জনের সংসার চালাতেন। কিন্তু, গতবছর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার পর থেকে তিনি বিপাকে পড়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়েও আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রিসোর্টটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

এক বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটে সরকারের দ্বীপবাসীর জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থার ঘোষণা। এই অবস্থায় অভাবের তাড়নায় কেউ কেউ স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার। কেউ কেউ কাজের খুঁজে দ্বীপ ছেড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। তিনি জানান, সরকার একদিকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে সীমিতকরণ করে জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে, অন্যদিকে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থার কথা বলে কিছু ত্রাণ দেওয়া অনেকটা প্রতারণার শামিল।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও রমজানকে ঘিরে পর্যটনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে সেন্টমার্টিন হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রহিম জিহাদী জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষের রুটি রুজি বন্ধ করে দিয়ে জীব বৈচিত্র্য রক্ষার নামে যা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। মূলত, সেন্টমার্টিন থেকে পর্যটন বিমুখ করতেই সূদুর প্রসারী পরিকল্পনায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে, কোনমাস থেকে রাত্রি যাপন করা হবে তা মন্ত্রণালয়ের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বিচারকের বাসায় হা’ম’লা, ছু’রিকা’ঘাতে ছেলে নি’হত: হা’মলা’কারী বিএনপি নেতার ছেলে

সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট বিক্রির হিড়িক, জীবিকার তাগিদে দ্বীপ ছাড়ছেন অনেকেই

আপডেট সময় ০৪:১৩:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

এবার কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট বিক্রির হিড়িক পড়েছে। একসময় যেখানে একটি রিসোর্ট বা জমি কেনার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পর্যটন ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়তো, সেই সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারাই হোটেল, রিসোর্ট ও ভিটেমাটি বিক্রি করে দ্বীপ ছাড়ছেন। স্থানীয়দের মতে, দ্বীপের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম ছিলো মাছ ধরা ও ট্যুরিজম ব্যবসা। কিন্তু, ট্যুরিজমে ভালো আয় হওয়ায় অনেকেই জড়িয়ে পড়েন এই ব্যবসায়। অধিকাংশ মানুষের বসতভিটায় রয়েছে একটি করে রিসোর্ট ও সাথে তাদের থাকার ঘর। মৌসুমে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকার ঘরও ভাড়া দিতে হয় অনেক সময়। এমন অবস্থা চলে আসলেও গতবছর থেকে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনায় পর্যটক সীমিত করা হয়।

নভেম্বরের এক তারিখ থেকে পর্যটকদের যাতায়াতে উন্মুক্ত করা হলেও রাত্রি যাপনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় কক্সবাজার থেকে টানা ৬ ঘণ্টা নৌ-পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টা অবস্থান করে আবারও ছয় ঘণ্টা নৌ-পথে ফেরাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তাই নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কোনো পর্যটক যায়নি। পরে পহেলা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস মাত্র দুই হাজার পর্যটক যাতায়াত ও রাত্রি যাপনের অনুমতি মেলে। মাত্র এ দুই মাস ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে পুরো এক বছর সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়। এমন বাস্তবতায় হোটেল, রিসোর্ট ও ভিটেমাটি বিক্রি করে দ্বীপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই।

সেন্টমার্টিন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবুল হোসেন জানান, তিনি ২০ শতক জমিতে ২০১৭ সালে গড়ে তুলেন ‘দ্বীপ কুটির’ নামে একটি রিসোর্ট। তিনি মসজিদের পাশাপাশি একটি মাদরাসায়ও শিক্ষকতা করতেন। এ দুই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রিসোর্ট থেকে প্রতি বছর যা আয় হতো, তা দিয়ে ৫ ছেলেমেয়েসহ ৭ জনের সংসার চালাতেন। কিন্তু, গতবছর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার পর থেকে তিনি বিপাকে পড়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়েও আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রিসোর্টটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

এক বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটে সরকারের দ্বীপবাসীর জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থার ঘোষণা। এই অবস্থায় অভাবের তাড়নায় কেউ কেউ স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার। কেউ কেউ কাজের খুঁজে দ্বীপ ছেড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। তিনি জানান, সরকার একদিকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে সীমিতকরণ করে জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে, অন্যদিকে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থার কথা বলে কিছু ত্রাণ দেওয়া অনেকটা প্রতারণার শামিল।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও রমজানকে ঘিরে পর্যটনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে সেন্টমার্টিন হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রহিম জিহাদী জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষের রুটি রুজি বন্ধ করে দিয়ে জীব বৈচিত্র্য রক্ষার নামে যা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। মূলত, সেন্টমার্টিন থেকে পর্যটন বিমুখ করতেই সূদুর প্রসারী পরিকল্পনায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে, কোনমাস থেকে রাত্রি যাপন করা হবে তা মন্ত্রণালয়ের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।