কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই গত ১৩ জুন ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে মুহূর্ত দেরি করেনি তেহরান। ইরানের পাল্টা হামলায় তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত ইসরায়েলের সামরিক-সংশ্লিষ্ট বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভাইসমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, হামলাটি ছিল সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইনস্টিটিউটের গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ভবনে আঘাত হানে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ থেকে ৫৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট আলোন চেন।
■ গবেষণায় বিপর্যয়
হামলায় ক্যানসার ও কোষ পুনরুৎপাদনের ওষুধ, কার্ডিয়াক রিজেনারেশন, জেনেটিক প্রকৌশলসহ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্প পরিচালনাকারী ৪৫টির বেশি ল্যাব ধ্বংস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৪০০-৫০০ গবেষক।
বিশেষত অধ্যাপক এলদাদ জাহর ২২ বছর ধরে হৃৎপিণ্ডের কোষ, ডিএনএ-আরএনএ, অ্যান্টিবডি এবং ল্যাবে তৈরি ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন—সবই পুড়ে গেছে। ভবনের তিনটি তলা সম্পূর্ণ ধসে পড়ে, গবেষণা কেন্দ্রটি এখন কার্যত অচল।
■ সামরিক সম্পৃক্ততা ও লক্ষ্যবস্তু
যদিও ভাইসমান ইনস্টিটিউটকে একাডেমিক গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরা হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ইসরায়েলি সামরিক গবেষণা ও প্রযুক্তির একটি মূল ভিত্তি। প্রতিষ্ঠানটি ‘এলবিত সিস্টেমস’-এর মতো সামরিক ঠিকাদারদের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ড্রোন ও দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
ইরান সুস্পষ্টভাবে এই সামরিক সংশ্লিষ্টতাকে লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সামরিক কার্যক্রম।
■ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি
ভাইসমান ইনস্টিটিউট ছাড়াও ইরানি হামলায় ইসরায়েলের একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও কৌশলগত স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেগুলোর বিস্তারিত এখনো প্রকাশ পায়নি। প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইনস্টিটিউটের প্রায় ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
■ ইতিহাসের অন্যতম বড় বৈজ্ঞানিক ক্ষতি
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এ হামলা শুধু একটি সামরিক প্রতিক্রিয়াই নয়—এটি ইসরায়েলের বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা ক্ষমতার ওপর এক বিশাল আঘাত। কয়েক দশকের গবেষণা, শত কোটি ডলারের ল্যাব এবং হাজারো বৈজ্ঞানিক তথ্য এক নিমিষেই ভস্মীভূত হয়ে গেছে।
এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতের ভিন্ন মাত্রা তুলে ধরেছে, যেখানে কেবল যুদ্ধক্ষেত্র নয়, জ্ঞান ও প্রযুক্তির মঞ্চেও লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছে।