গত ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্তত ১৫০ নেতাকে পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে ছাত্রদলের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে তীব্র অসন্তোষ ও বিভক্তি। প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৪৫৫ সদস্যের সেই কমিটিতে অন্তত অর্ধশতাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন বহিরাগতও রয়েছেন, যারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন। বিক্ষোভ মিছিল, সংবাদ সম্মেলন ও সামাজিক মাধ্যমে চলছে লাগাতার সমালোচনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ২৪২ সদস্যের কমিটিতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকে। যাদের বিরুদ্ধে অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে। তীব্র প্রতিবাদের মুখে এসব ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, নাম প্রত্যাহার করা হলেও তারা অঘোষিতভাবে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকছেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে—এই কমিটিগুলো আদৌ আদর্শিক ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে কি না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতেও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের মধ্য থেকে ছয়জনকে পরবর্তীতে বহিষ্কার করা হলেও বাকিদের নিয়ে এখনও রয়েছে তীব্র আপত্তি। একই অভিযোগ উঠেছে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কমিটিতেও, যেখানে ৫৪ সদস্যের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের অভ্যন্তরে আদর্শিক বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও মাঠের শক্তি বাড়াতে গিয়ে আদর্শের সঙ্গে আপস করছে সংগঠনটি। একাধিক নেতাকর্মী বলেছেন, ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক দৃঢ়তা নিয়ে এখন বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রদল শুধু নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেই এমন পুনর্বাসন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গণ অধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খান বলেন, নতুন দলগুলোতেও একই ধারা রয়েছে, যেখানে অতীতে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট অনেককে দেখা যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পদে। এতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং তরুণদের রাজনীতিতে আস্থা কমে যাচ্ছে।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয়ভাবে বলছে, বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তৃণমূল বলছে, কেবল কাগজে কলমে অব্যাহতি নয়, মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতাতেও সেই বহিষ্কার কার্যকর করতে হবে।