নরওয়ের রাজধানী অসলোতে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় ঘোষণা করা হবে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ীর নাম। বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ, সংঘাত ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এবার পুরস্কারটি নিয়ে আগ্রহ ও আলোচনার মাত্রা অনেক বেশি।
বিশ্ব পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বৈশ্বিক সংঘাত তথ্যভান্ডার’ অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ২০২৪ সালেই সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্র সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কাকে দেওয়া হচ্ছে—তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন, তিনি ‘আটটি সংঘাতের সমাধান’ করেছেন, তাই তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্তত এই বছর ট্রাম্প পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সুইডেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টেইন বলেন, “না, এ বছর ট্রাম্প নয়। সম্ভবত আগামী বছর দেখা যেতে পারে—তত দিনে তার গাজা সংকটসহ অন্যান্য উদ্যোগের ফলাফল আরও পরিষ্কার হবে।”
অনেক বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের ‘শান্তির দূত’ দাবিকে অতিরঞ্জিত মনে করেন। তাদের মতে, তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নোবেল শান্তি পুরস্কারের মূল চেতনা—আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও নিরস্ত্রীকরণ—এর বিপরীত।
অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, “শুধু গাজায় শান্তি আনার চেষ্টা নয়, ট্রাম্পের অন্যান্য বহু নীতিও নোবেলের আদর্শের পরিপন্থী। তিনি এমন অনেক কিছু করেছেন যা শান্তি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিপরীতে গেছে।”
ট্রাম্পের নীতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- আন্তর্জাতিক সংস্থা ও চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার
- বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু
- গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি
- মার্কিন শহরে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানো
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেন, “আমরা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ অবদান দেখি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—তারা শান্তির জন্য কী অর্জন করেছে।”
শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন যারা
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮ ব্যক্তি ও সংস্থা মনোনীত হয়েছেন। মনোনীতদের নাম ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হয়। তবে বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন সংস্থার ধারণা অনুযায়ী কিছু নাম আলোচনায় রয়েছে।
- সুদানের যুদ্ধপীড়িত মানুষদের সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’
- প্রয়াত রুশ বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া
- আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ODIHR
- জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, UNHCR, UNRWA
- আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ)
- সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন CPJ এবং RSF
নরওয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক হালভার্ড লেইরা বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নোবেল কমিটি আবার শান্তির মূল চেতনার দিকে ফিরেছে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নারী অধিকারে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এ বছর কমিটি সম্ভবত বিতর্কিত নয়—কোনও চমক দেওয়া ইতিহাস থাকলেও, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিশ্চিত বলা যায় না।”
২০২৪ সালে শান্তি পুরস্কার পেয়েছিল জাপানের পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন ‘নিহোন হিদানকিও’, যারা দীর্ঘদিন ধরে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধে কাজ করছে।

ডেস্ক রিপোর্ট 
























