ঢাকা , রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
চকরিয়াতে জাতীয় নাগরিক পার্টির গাড়িবহর আটকে রেখেছে বিএনপির লোকজন: হান্নান মাসুদ সালাউদ্দিনকে ‘গডফাদার’ ডাকায় উত্তাল কক্সবাজার, এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর চাঁদা নেব না, নিতেও দেব না: জামায়াত আমির বক্তব্যের মাঝে মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলেন জামায়াত আমির মজলুমরা আজ জালিম হয়ে উঠছে: নুর জামায়াতের সমাবেশে দাওয়াত পায়নি বিএনপি বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের জায়গা হবে না: জামায়াতের সমাবেশে সারজিস উগান্ডায় বোম পড়লেও কি বিএনপির দোষ?: পার্থ বর্তমানে আওয়ামী লীগ বলে কিছু নেই, এটি একটি মাফিয়া চক্রে পরিণত: সোহেল তাজ ভারতের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আমার ছেলে শহীদ হয়: আবরার ফাহাদের বাবা

কে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, কেন তিনি ইসরাইল-আমেরিকার মূল টার্গেটে?

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৯:১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
  • ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে

5

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইরানের শাসনব্যবস্থা ভিন্ন এক কাঠামোর অধীন। নির্বাচন হয়, প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জনগণের ভোটে, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা থাকে একজন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। সেই দায়িত্বে বর্তমানে রয়েছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি—যিনি গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরানের সর্বময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল সংঘাতের সময়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে—আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যাচেষ্টার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমনকি প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইরানের কথিত সর্বোচ্চ নেতা কোথায় লুকিয়ে আছেন আমি জানি, কিন্তু এখনই তাকে মারা হবে না।” এই মন্তব্য শুধু বিতর্ক নয়, বরং ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।

অনেকে প্রশ্ন করছেন, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নয়, বরং কেন খামেনি আমেরিকা ও ইসরাইলের মূল টার্গেট? এর উত্তর নিহিত রয়েছে ইরানের রাজনৈতিক কাঠামো ও খামেনির প্রভাবের গভীরতায়।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। শাহ রেজা পাহলভির পরিবর্তে গঠিত হয় ইসলামি প্রজাতন্ত্র। এর নেতৃত্বে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। আর তার বিশ্বস্ত অনুসারী ছিলেন তরুণ আলি খামেনি।

আলি খামেনির জন্ম ১৯৩৯ সালে ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মাশহাদ শহরে। শৈশবে ধর্মীয় পাণ্ডিত্য অর্জন করে তিনি চলে যান শিয়া মুসলিমদের তীর্থস্থান কোমে, যেখানে তার চিন্তাধারায় আসে মৌলিক পরিবর্তন। ১৯৬২ সালে তিনি আয়াতুল্লাহ খোমেনির আন্দোলনে যোগ দেন এবং হয়ে ওঠেন ইসলামী বিপ্লবের অগ্রভাগের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।

ইরানে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর খামেনি বিপ্লবী পরিষদে যুক্ত হন, পরে উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন এবং ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর (IRGC) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আজ সেই গার্ড কোর ইরানের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।

১৯৮১ সালে এক বোমা হামলায় গুরুতর আহত হন খামেনি, যার ফলে তার ডান হাত আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। তবে এ হামলা তাকে দমাতে পারেনি। বরং সেই অভিজ্ঞতা তাকে আরও কঠোর ও দৃঢ়চেতা নেতা হিসেবে গড়ে তোলে।

খামেনির শাসনামলে ইরান একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন ও গাজার মতো অঞ্চলগুলিতে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে তাকে শুধুমাত্র ইরানের নেতা হিসেবে নয়, বরং পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি প্রতিরোধের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও দেখা হয়।

তাই প্রেসিডেন্ট নয়, আয়াতুল্লাহ খামেনিই ইরান-ইসরাইল দ্বন্দ্বে পশ্চিমা শক্তির প্রধান শত্রু। তিনি শুধু রাষ্ট্রীয় প্রধান নন, একজন আদর্শিক প্রতীক—যিনি ইরানিদের আত্মপরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চকরিয়াতে জাতীয় নাগরিক পার্টির গাড়িবহর আটকে রেখেছে বিএনপির লোকজন: হান্নান মাসুদ

কে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, কেন তিনি ইসরাইল-আমেরিকার মূল টার্গেটে?

আপডেট সময় ০৯:১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইরানের শাসনব্যবস্থা ভিন্ন এক কাঠামোর অধীন। নির্বাচন হয়, প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জনগণের ভোটে, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা থাকে একজন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। সেই দায়িত্বে বর্তমানে রয়েছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি—যিনি গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরানের সর্বময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল সংঘাতের সময়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে—আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যাচেষ্টার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমনকি প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইরানের কথিত সর্বোচ্চ নেতা কোথায় লুকিয়ে আছেন আমি জানি, কিন্তু এখনই তাকে মারা হবে না।” এই মন্তব্য শুধু বিতর্ক নয়, বরং ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।

অনেকে প্রশ্ন করছেন, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নয়, বরং কেন খামেনি আমেরিকা ও ইসরাইলের মূল টার্গেট? এর উত্তর নিহিত রয়েছে ইরানের রাজনৈতিক কাঠামো ও খামেনির প্রভাবের গভীরতায়।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। শাহ রেজা পাহলভির পরিবর্তে গঠিত হয় ইসলামি প্রজাতন্ত্র। এর নেতৃত্বে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। আর তার বিশ্বস্ত অনুসারী ছিলেন তরুণ আলি খামেনি।

আলি খামেনির জন্ম ১৯৩৯ সালে ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মাশহাদ শহরে। শৈশবে ধর্মীয় পাণ্ডিত্য অর্জন করে তিনি চলে যান শিয়া মুসলিমদের তীর্থস্থান কোমে, যেখানে তার চিন্তাধারায় আসে মৌলিক পরিবর্তন। ১৯৬২ সালে তিনি আয়াতুল্লাহ খোমেনির আন্দোলনে যোগ দেন এবং হয়ে ওঠেন ইসলামী বিপ্লবের অগ্রভাগের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।

ইরানে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর খামেনি বিপ্লবী পরিষদে যুক্ত হন, পরে উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন এবং ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর (IRGC) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আজ সেই গার্ড কোর ইরানের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।

১৯৮১ সালে এক বোমা হামলায় গুরুতর আহত হন খামেনি, যার ফলে তার ডান হাত আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। তবে এ হামলা তাকে দমাতে পারেনি। বরং সেই অভিজ্ঞতা তাকে আরও কঠোর ও দৃঢ়চেতা নেতা হিসেবে গড়ে তোলে।

খামেনির শাসনামলে ইরান একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন ও গাজার মতো অঞ্চলগুলিতে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে তাকে শুধুমাত্র ইরানের নেতা হিসেবে নয়, বরং পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি প্রতিরোধের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও দেখা হয়।

তাই প্রেসিডেন্ট নয়, আয়াতুল্লাহ খামেনিই ইরান-ইসরাইল দ্বন্দ্বে পশ্চিমা শক্তির প্রধান শত্রু। তিনি শুধু রাষ্ট্রীয় প্রধান নন, একজন আদর্শিক প্রতীক—যিনি ইরানিদের আত্মপরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতীক হয়ে উঠেছেন।