এবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমানে ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা হচ্ছে। উপদেষ্টারা ভালোভাবেই জানেন যে, তাদের কোনো প্রকার সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই। তবে বাংলাদেশে জাতি হিসেবে আমাদের সেফ এক্সিটের প্রয়োজন আছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’- এর খসড়া বিষয়ক জাতীয় পরামর্শ সভার উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর চারটি অধিবেশনে অধ্যাদেশটির খসড়া নিয়ে আলোচকরা বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন। এর আগে বিভাগীয় পর্যায়েও এই অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা- ইউএনডিপির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এসব পরামর্শ সভার আয়োজন করে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ড. আসিফ নজরুল আরো বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে বলা হয়েছিলো যে, প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ করবেন। যেন এতে রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে। কিন্তু আপনারা সবাই জানেন, প্রেসিডেন্ট কখনোই স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করতে পারেননি। এদেশে সবসময় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে মাফিক।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা এমন প্রধান বিচারপতিও পেয়েছি, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যারা নিজের চোখে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- দেখেও তা উপেক্ষা করেছেন। যেসকল বিচারক মানবাধিকার লঙ্ঘনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। দুঃখজনকভাবে এমন কেউ কেউ এখনো বিচার বিভাগে রয়েছে গেছেন। আমরা ইনস্টিটিউশনাল রিফর্মের পথে কিছুটা অগ্রসর হয়েছি। পুরোটা করতে পারিনি। পরে যারা নির্বাচিত সরকার হবেন, তাদের কাছে এই দায়িত্ব থাকলো।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা হয়তো ভালো ভালো কিছু আইন করে যাচ্ছি। কিন্তু ভালো আইন করা মানেই পুরো দেশটা বদলে দেয়া যাবে সেরকম নয়। দেখা গেছে অনেক ভালো ভালো আইন করা হলেও সে আইন যে প্রতিষ্ঠানের জন্য করা হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানই দাঁড়ায় না। আইন করার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতার ইতিহাস কম, কিন্তু প্রতিষ্ঠান করার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা সীমাহীন। ভালো প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজটি একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি মনে হয়েছে, প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের অসীম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিভিন্ন রকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান কি, সেটা আমরা বুঝিই না। আমরা ব্যক্তি বুঝি। আশা করবো এই আইনটি দ্বারা সত্যিকার অর্থে একটি শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
উপদেষ্টা বলেন, এ ভয়াবহ রাষ্ট্র কাঠামো থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উচ্চ আদালত ও সংসদীয় কমিটি। এবং সেই সঙ্গে আরো কিছু জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানকে আমাদের শক্তভাবে দাঁড় করাতে হবে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এটি করতে ব্যর্থ হলে দেশের যেকোনো মানুষ যেকোনো সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হতে পারেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করার সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি সরকার বা কোনো একক ব্যক্তির নয় বরং আমাদের সকলের দায়িত্ব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংশোধিত আইনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। স্বাধীনতাকে আরো শক্তিশালী করবে।

ডেস্ক রিপোর্ট 

























