ঢাকা , শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
মঞ্জু ভাই টাচ করে কথা বলা পছন্দ করতেন, শোল্ডার- হাতে ধরতো: বিস্ফোরক মন্তব্য সাবেক অধিনায়কের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম সরিয়ে নিলো যুক্তরাষ্ট্র উন্মুক্ত মাঠে এবছরের সব তাফসির মাহফিল স্থগিত ঘোষণা করলেন মিজানুর রহমান আজহারী আরিফিন শুভর রাজউকের ১০ কাঠার প্লট ফিরিয়ে দিতে বললেন পরিচালক শেখ হাসিনা ও আ. লীগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: প্রেসসচিব দুর্নীতি-দুঃশাসন মুক্তিতে কারও সাথে আপস করবে না জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান জবিতে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে জমকালো কাওয়ালি সন্ধ্যা দলগুলো না পারলে গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব কিছু ভুলের জন্য এনসিপিকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে: জিল্লুর রহমান মিশরের উদ্দেশ্যে এনসিপি নেতা সারজিস আলম 

মুন্সীগঞ্জে আলুর বাজারে ধস: হিমাগারে আটকে কোটি টাকার আলু, চরম সংকটে চাষি ও ব্যবসায়ীরা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৯:২১:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

মুন্সীগঞ্জের আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছেন। জেলার হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত আলুর অর্ধেকেরও বেশি এখনো অবিক্রীত রয়ে গেছে। চুক্তি অনুযায়ী নভেম্বরের মধ্যে হিমাগার থেকে আলু বের করার কথা থাকলেও রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আগাম জাতের আলু বাজারজাত শুরু হওয়ায় পুরোনো আলুর বিক্রি থমকে গেছে।

প্রতি কেজি আলু উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত খরচ পড়ছে ২৫-২৬ টাকা, অথচ বর্তমানে বাজারে ভালো মানের আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকায়। এতে জেলার প্রায় ৬০ হাজার আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সাড়ে ৮০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন রবি মৌসুমে বহু জমি অনাবাদি থেকে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলায় ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৮২ হাজার টন আলু উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১৯ হাজার টন বেশি। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার টন আলু ৬১টি হিমাগারে সংরক্ষিত হলেও এখনো তিন লাখ ৩২ হাজার টন আলু অবিক্রীত রয়েছে— যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা দেশে অতিরিক্ত আলু উৎপাদন, বছরজুড়ে নানা সবজির সহজলভ্যতা, বিদেশে রপ্তানি কমে যাওয়া এবং স্থানীয়ভাবে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি— এসব কারণে বাজারে ধস নেমেছে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের দুটি পটেটো ফ্ল্যাক্স কারখানা বন্ধ থাকায় আলু বিক্রির বড় উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে।

সদর উপজেলার কৃষক হারুন অর রশিদ জানান, “প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে খরচ হয়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, এখন বিক্রি করছি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এভাবে চললে আলু চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

হিমাগার মালিকদেরও একই হাল। বিক্রমপুর মালটিপারপাস হিমাগারের ম্যানেজার আ. রশিদ জানান, “সরকারি দাম ২২ টাকা বেঁধে দেওয়ার পর কৃষকরা হিমাগারে আলু রাখতে নিরুৎসাহিত হয়েছেন। নভেম্বরের মধ্যে আলু বের না হলে কোম্পানিগুলো বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারের কাছে ১০টি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আলু অন্তর্ভুক্তি, ৫০ হাজার টন আলু সরকারিভাবে ক্রয়, এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে ২০ কেজি করে আলু ক্রয়ের উদ্যোগ।”

সারসংক্ষেপে: উৎপাদন বেড়েছে, চাহিদা কমেছে— ফলে আলুর রাজধানীখ্যাত মুন্সীগঞ্জে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখন নজিরবিহীন লোকসানের মুখে।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মঞ্জু ভাই টাচ করে কথা বলা পছন্দ করতেন, শোল্ডার- হাতে ধরতো: বিস্ফোরক মন্তব্য সাবেক অধিনায়কের

মুন্সীগঞ্জে আলুর বাজারে ধস: হিমাগারে আটকে কোটি টাকার আলু, চরম সংকটে চাষি ও ব্যবসায়ীরা

আপডেট সময় ০৯:২১:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

মুন্সীগঞ্জের আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছেন। জেলার হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত আলুর অর্ধেকেরও বেশি এখনো অবিক্রীত রয়ে গেছে। চুক্তি অনুযায়ী নভেম্বরের মধ্যে হিমাগার থেকে আলু বের করার কথা থাকলেও রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আগাম জাতের আলু বাজারজাত শুরু হওয়ায় পুরোনো আলুর বিক্রি থমকে গেছে।

প্রতি কেজি আলু উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত খরচ পড়ছে ২৫-২৬ টাকা, অথচ বর্তমানে বাজারে ভালো মানের আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকায়। এতে জেলার প্রায় ৬০ হাজার আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সাড়ে ৮০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন রবি মৌসুমে বহু জমি অনাবাদি থেকে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলায় ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৮২ হাজার টন আলু উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১৯ হাজার টন বেশি। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার টন আলু ৬১টি হিমাগারে সংরক্ষিত হলেও এখনো তিন লাখ ৩২ হাজার টন আলু অবিক্রীত রয়েছে— যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা দেশে অতিরিক্ত আলু উৎপাদন, বছরজুড়ে নানা সবজির সহজলভ্যতা, বিদেশে রপ্তানি কমে যাওয়া এবং স্থানীয়ভাবে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি— এসব কারণে বাজারে ধস নেমেছে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের দুটি পটেটো ফ্ল্যাক্স কারখানা বন্ধ থাকায় আলু বিক্রির বড় উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে।

সদর উপজেলার কৃষক হারুন অর রশিদ জানান, “প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে খরচ হয়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, এখন বিক্রি করছি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এভাবে চললে আলু চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

হিমাগার মালিকদেরও একই হাল। বিক্রমপুর মালটিপারপাস হিমাগারের ম্যানেজার আ. রশিদ জানান, “সরকারি দাম ২২ টাকা বেঁধে দেওয়ার পর কৃষকরা হিমাগারে আলু রাখতে নিরুৎসাহিত হয়েছেন। নভেম্বরের মধ্যে আলু বের না হলে কোম্পানিগুলো বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারের কাছে ১০টি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আলু অন্তর্ভুক্তি, ৫০ হাজার টন আলু সরকারিভাবে ক্রয়, এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে ২০ কেজি করে আলু ক্রয়ের উদ্যোগ।”

সারসংক্ষেপে: উৎপাদন বেড়েছে, চাহিদা কমেছে— ফলে আলুর রাজধানীখ্যাত মুন্সীগঞ্জে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখন নজিরবিহীন লোকসানের মুখে।